একটি ব্যতিক্রমী দাওয়াত by সৈয়দ শামছুল হুদা

'আপনার সন্তানকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দিন' লেখাটি বাস, রিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানের সামনে-পেছনে প্রায়ই লেখা দেখা যায়। গাড়ির পেছনে অনেক কিছুই লেখা থাকে, তবে সব লেখা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায় না। কিছু লেখা থাকে যা পাঠকের মনে দীর্ঘ সময় দাগ কাটে।


যে ব্যক্তি বাসের বাম্পারে এ কথাটি লেখার পরামর্শ দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, প্রেরণা জুগিয়েছেন নিশ্চয়ই তিনি শিক্ষানুরাগী। এমন লেখা দেখে মনে হলো, এটা হতে পারে দাওয়াতের একটি মাধ্যম। উপযুক্ত স্থানে একটি ভালো কথা, যা পাঠকের হৃদয়ে গেঁথে যায়, তা সদকায়ে জারিয়ার কারণও হতে পারে, তাহলে তা অবশ্যই পুণ্যের কাজ। একজন পেইন্টার, একজন চৌকস ডিজাইনার, একজন আর্টিস্ট, একজন চিত্রকর যিনি অসচেতনভাবে কত কিছুই লিখে যাচ্ছেন। মানুষকে খুশি করার জন্য কত চেষ্টাই না করছেন। আমাদের দেশে বিভিন্নভাবে দাওয়াতি কাজ চলছে। কিন্তু গাড়ির রঙমিস্ত্রি বা পেইন্টারদের কি কখনও দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যারা মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্য তাদের মেধা-শ্রম ব্যয় করে যাচ্ছেন অনবরত? পারিপাশর্ি্বক কারণে যারা এ পেশায় নিয়োজিত তাদের বেশিরভাগই উচ্চ শিক্ষিত নন। আমাদের সামান্য অসতর্কতার কারণে এ লোকগুলো বিভিন্ন গুনাহে লিপ্ত। আমরা প্রায়ই রিকশায় চড়ি। এর পেছনে অনেক ধরনের লেখা থাকে, থাকে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের ছবি। এগুলো ছোট বাচ্চাদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। বেহায়াপনা ছড়ানোর ক্ষেত্রেও এগুলো ভূমিকা রাখে। আলেমদের একটি জামাত যদি এই দায়িত্ব গ্রহণ করতেন যে, যারা ডিজাইনার, যারা মনের মাধুরী মিশিয়ে হাতের তুলি দিয়ে আল্পনা আঁকেন, লঞ্চে, বাসে, স্টিমারে, রিকশায়, ট্রলারে হাজারো আল্পনা দ্বারা সাজিয়ে দেন, তাদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত পেঁৗছাতে। তাহলে তারা অশল্গীল ছবি না দিয়ে, প্রাকৃতিক ছবি দিয়ে, সিনেমার সংলাপ বা গানের কলি না দিয়ে কোরআন-হাদিস কিংবা মহামানবদের অমূল্য বাণীর ওপর তুলির আঁচড় দিয়ে হৃদয়কাড়াভাবে দর্শকদের চিত্তকে ভরে দিতেন। এতে করে সুস্থধারার একটি সাংস্কৃতিক চর্চাও হতো। পাশাপাশি বিনাশ্রমে যাত্রীসাধারণও ভালো কিছু জানতে পারতেন, শিখতে পারতেন। অশ্লীল বাক্য বা ছবি যেমন মানবমনে খারাপ কিছু ভাবার সুযোগ করে দেয়, তেমনি ভালো ছবি, ভালো উপদেশবাণী মানবমনে রেখাপাত করে। এ দেশের পেশাদার চিত্রকর যারা, তাদের সঙ্গে মিশে, তাদের বুঝিয়ে ভালো কিছু করার প্রেরণা আমরা দিতে পারি। তাদের যেহেতু এটা পেশা, আয়ের পথ, তাই তারা এটা ছাড়তে পারবেন না। এটা একটি শিল্প। হাতের কারুকাজ অনেক মূল্যবান। একজন ডিজাইনার যে রিকশায় ডিজাইন করে তাকে কেউ বলে দেয় না যে, তুমি আমার রিকশায় সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের ছবি এঁকে দাও। বরং ওই চিত্রকর সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তিনি তার রুচি অনুসারে কাজ করেন। আমরা যদি ওই শিল্পীর ভেতরটা আলোকিত করে দিতে পারি, তাহলে তার হাত দিয়ে ভালো কিছু বের হবে। alhuda_wf@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.