আসমানী-চিকিৎসা সেবা দরিদ্রের কাছে পেঁৗছাবে?
কবি জসিম উদ্দীনের কাব্যগুণে গ্রামবাংলার একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি সাহিত্যে বিশেষত কবিতায় স্থান করে নিয়েছিল। শুধু স্থান করে নিয়েছিল বললে ভুল হবে, দারিদ্র্য-অনাহার-অপুষ্টিপীড়িত গ্রামের মানুষগুলো তার কবিতার মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করেছিল।
কবিতাগুলো আজও আবেদন হারায়নি, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্মে এর বাণী সঞ্চারিত হয়েছে। অনেক কবিতা আজ কালোত্তীর্ণ। বিশেষভাবে বলা যায় কবর, আসমানীর কথা। আসমানী কবিতায় দরিদ্র আসমানীদের যে চিত্র আঁকা হয়েছে তা আজও পাঠককে শিহরিত ও আপ্লুত করে। সাহিত্যে যে চরিত্রগুলোর নাম উলি্লখিত হয় তারা সাধারণত কল্পনাপ্রসূত হন। জীবনানন্দের বনলতা সেন কিংবা অ্যালান পোর হেলেনকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু জসিম উদ্দীনের আসমানী তেমন কল্পিত চরিত্র নন। কবিতাতেই তার নাম-ঠিকানা উলি্লখিত হয়েছে। সে ঠিকানা অনুসরণ করে তাকে খুঁজেও বের করেছেন কাব্যানুরাগীরা। এই খোঁজ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সমস্যা হলো_ কবি নিশ্চয়ই এক আসমানীর কথাই বলতে চাননি। তিনি আসমানীদের কথা বলতে চেয়েছেন। কবির অন্তর্ধানের বহু বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কবিতা লেখার পর কেটে গেছে বহু যুগ। এখন কবিতার চরিত্র আসমানী ৯০ বছরে উপনীত হয়েছেন। কিন্তু দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে কি আসমানীদের মুক্তি ঘটেছে? এখনও শহরের বস্তিতে, পল্লীর পর্ণকুটিরে আসমানীদের দুঃসহ সময় অতিক্রম করতে হচ্ছে। সবার কথাই তো আছে আসমানী কবিতায়। কিন্তু সবার খবর কি আমরা নিচ্ছি? আসমানী অসুস্থ হলে পত্রিকাগুলো আগ্রহভরে খবর নিয়েছে। চিকিৎসকরা যত্ন সহকারে সেবা দিয়েছেন। এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা আনা হয়েছে। আমরা আশা করব, কালোত্তীর্ণ একটি কবিতার অনুপ্রেরণা আসমানী সুস্থ হয়ে উঠুন। কিন্তু শত-সহস্র শিশু-কিশোর-তরুণ-বৃদ্ধ আসমানী যে অচিকিৎসায়, অপচিকিৎসায়, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছে তাদের কী হবে। কবি তো তাদের কথাও বলেছেন। কিন্তু সবার খবর কি আমরা নিচ্ছি? সবার কাছে চিকিৎসা সেবা পেঁৗছাবার দায়িত্ব কি রাষ্ট্র যথাযথভাবে পালন করছে? সবচেয়ে বড় কথা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অপুষ্টির হাত থেকে আসমানীদের রক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা কি এত বছরেও কার্যকর হয়েছে? আসমানীর উন্নত চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে এ প্রশ্নও উত্থাপিত হওয়া দরকার।
No comments