বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ
পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী ও চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ব্যাপক পাহাড়ধস ও নদীভাঙন। চট্টগ্রাম, কঙ্বাজার ও বান্দরবানে গত কয়েক দিনে পাহাড়ধসে মারা গেছেন শতাধিক মানুষ।
পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ কয়েকটি নদীর ভাঙনে ইতিমধ্যেই সহস্রাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছে। এসবই যেন আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশে এই যে বিপর্যয়, তাকে কি আমরা কেবলই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলব? অপরিকল্পিত উন্নয়ন, নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংস করা, দশকের পর দশক ধরে দেশ পরিচালনাকারী সরকারগুলোর অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কি এর জন্য দায়ী নয়?
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে এখন কেবলই দুর্গত মানুষের আহাজারি শোনা যায়। বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে এবং অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষ স্থানীয় স্কুল-কলেজে, রাস্তার দুই পাশে কিংবা কোনো উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে নদীভাঙনে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া লোকজনও রাস্তার পাশে বা খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এই বিপর্যয়ে তাদের না আছে খাবার, না আছে আয়-উপার্জন। তারা পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীও পাচ্ছে না। ফলে অর্ধাহার-অনাহার এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। ইতিমধ্যে ভাটিয়ারিতে একটি রেলসেতু ধসে পড়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের মানুষকে এখন সীতাকুণ্ডে এসে ঢাকা বা সিলেটের ট্রেনে উঠতে হয়। সিলেটের সঙ্গে কয়েকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে চলাচলের ক্ষেত্রেও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বর্ষাকালে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে যায়, তার প্রায় ৯৪ শতাংশই আসে উজানে থাকা দেশগুলো থেকে। এই পানি আটকে রাখার কোনো উপায় নেই। আবার আমাদের নদীগুলো ক্রমেই ভরাট হয়ে যাওয়ায় বা গভীরতা না থাকায় নদীগুলো সে পানির কিয়দংশও ধারণ করতে পারে না। তখন নদীর দুই কূল ছাপিয়ে পানি লোকালয় বা ফসলি জমি ডুবিয়ে দেয়। আবার খাল, বিল, জলাশয় ক্রমাগত ভরাট হওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণ বৃষ্টির পানিও বন্যা ও জলাবদ্ধতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে প্রতিবছর প্রায় ৯৪ লাখ টন পলি এসে জমা হয় আমাদের নদীগুলোতে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ভূমিক্ষয় তো আছেই। ফলে নদী ভরাট প্রক্রিয়া ক্রমেই দ্রুততর হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বহু নদী সম্পূর্ণরূপে মরে গেছে। বাকি নদীগুলোও মৃত্যুপথে রয়েছে। নদীগুলোকে বাঁচাতে না পারলে তথা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা না গেলে বন্যা সমস্যার সমাধান করা যাবে না। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বন্যা ছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশে যত ক্ষয়ক্ষতি হয়, কেবল বন্যায় প্রতিবছর তার কয়েক গুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। অথচ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এ পর্যন্ত কোনো সরকারই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাংলাদেশে বন্যার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে এবং দুটি বড় বন্যার মধ্যবর্তী সময়সীমাও ক্রমেই কমে আসছে।
আমরা মনে করি, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে অবিলম্বে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী প্রদানসহ দুর্গতদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যায়, বিশেষ করে বন্যার পানি নামার সময় ব্যাপক আকারে পানিবাহিত রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে। সম্ভাব্য সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আর যত ব্যয়বহুলই হোক, নদী খননের উদ্যোগ আমাদের নিতে হবেই। কেবল মহাপরিকল্পনার কথা বললেই হবে না, প্রতিবছরের বাজেটে নদী খননের জন্য একটি ভালো বরাদ্দ রাখতে হবে। একই সঙ্গে পাহাড় ও জলাশয় সংরক্ষণে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কেবল তাহলেই আমরা প্রতিবছরের এমন বিপর্যয় থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাব।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে এখন কেবলই দুর্গত মানুষের আহাজারি শোনা যায়। বাড়িঘরে পানি ঢুকে গেছে এবং অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষ স্থানীয় স্কুল-কলেজে, রাস্তার দুই পাশে কিংবা কোনো উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে নদীভাঙনে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া লোকজনও রাস্তার পাশে বা খোলা জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এই বিপর্যয়ে তাদের না আছে খাবার, না আছে আয়-উপার্জন। তারা পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীও পাচ্ছে না। ফলে অর্ধাহার-অনাহার এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। ইতিমধ্যে ভাটিয়ারিতে একটি রেলসেতু ধসে পড়ায় চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের মানুষকে এখন সীতাকুণ্ডে এসে ঢাকা বা সিলেটের ট্রেনে উঠতে হয়। সিলেটের সঙ্গে কয়েকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে চলাচলের ক্ষেত্রেও বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বর্ষাকালে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যে পরিমাণ পানি প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে যায়, তার প্রায় ৯৪ শতাংশই আসে উজানে থাকা দেশগুলো থেকে। এই পানি আটকে রাখার কোনো উপায় নেই। আবার আমাদের নদীগুলো ক্রমেই ভরাট হয়ে যাওয়ায় বা গভীরতা না থাকায় নদীগুলো সে পানির কিয়দংশও ধারণ করতে পারে না। তখন নদীর দুই কূল ছাপিয়ে পানি লোকালয় বা ফসলি জমি ডুবিয়ে দেয়। আবার খাল, বিল, জলাশয় ক্রমাগত ভরাট হওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণ বৃষ্টির পানিও বন্যা ও জলাবদ্ধতার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে প্রতিবছর প্রায় ৯৪ লাখ টন পলি এসে জমা হয় আমাদের নদীগুলোতে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ভূমিক্ষয় তো আছেই। ফলে নদী ভরাট প্রক্রিয়া ক্রমেই দ্রুততর হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের বহু নদী সম্পূর্ণরূপে মরে গেছে। বাকি নদীগুলোও মৃত্যুপথে রয়েছে। নদীগুলোকে বাঁচাতে না পারলে তথা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা না গেলে বন্যা সমস্যার সমাধান করা যাবে না। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বন্যা ছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশে যত ক্ষয়ক্ষতি হয়, কেবল বন্যায় প্রতিবছর তার কয়েক গুণ বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। অথচ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় এ পর্যন্ত কোনো সরকারই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাংলাদেশে বন্যার প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে এবং দুটি বড় বন্যার মধ্যবর্তী সময়সীমাও ক্রমেই কমে আসছে।
আমরা মনে করি, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে অবিলম্বে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী প্রদানসহ দুর্গতদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যায়, বিশেষ করে বন্যার পানি নামার সময় ব্যাপক আকারে পানিবাহিত রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে। সম্ভাব্য সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায়ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আর যত ব্যয়বহুলই হোক, নদী খননের উদ্যোগ আমাদের নিতে হবেই। কেবল মহাপরিকল্পনার কথা বললেই হবে না, প্রতিবছরের বাজেটে নদী খননের জন্য একটি ভালো বরাদ্দ রাখতে হবে। একই সঙ্গে পাহাড় ও জলাশয় সংরক্ষণে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কেবল তাহলেই আমরা প্রতিবছরের এমন বিপর্যয় থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাব।
No comments