যুবলীগের নেতৃত্ব যুবকরা পাবেন কি না সন্দেহ by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হবে আগামী ১৪ জুলাই। কাউন্সিল সামনে রেখে যুবলীগের বর্তমান এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে শুরু হয়েছে পদ পাওয়ার লড়াই। যুবলীগ নেতারা চান যেকোনো উপায়ে পরবর্তী কমিটিতে আরো ভালো পদে স্থান পেতে।
আবার ছাত্রলীগেরও সাবেক নেতারা উঠেপড়ে লেগেছেন যুবলীগের নেতৃত্বে ঢুকতে। কারণ তাঁরা আওয়ামী লীগেও যুক্ত হতে পারছেন না, আবার অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোও তাঁদের পছন্দের নয়। সব মিলিয়ে যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক তোড়জোড়।
সংগঠনের কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করার পরই পদপ্রত্যাশীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন কিভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করা যায়। আবার সম্মেলন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাও যুবলীগের পরবর্তী কমিটিতে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টায় মরিয়া। নানাভাবে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের লোককে দায়িত্বশীল পদে বসানোর জন্য।
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ সূত্রে জানা যায়, সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগের নেতৃত্ব নির্ধারণ করার নিয়ম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং যুবলীগের বিদায়ী চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের ইচ্ছায় কমিটি গঠিত হবে।
যুবলীগে বরাবরই শেখ সেলিমের ব্যাপক প্রভাব। এই সংগঠনে কমিটি গঠনসহ অনেক কিছুই হয় তাঁর ইচ্ছায়। তবে এবার জাহাঙ্গীর কবির নানকও প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান অথবা সাধারণ সম্পাদকের যেকোনো একটি পদে নিজের লোক বসাতে মরিয়া আওয়ামী লীগের এই নেতা।
সংগঠনের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এবার সম্মেলনে কেউ প্রার্থী হবেন না। সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে এবং তিনিই এককভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ চৌধুরী পরবর্তী চেয়ারম্যান হচ্ছেন এবং যুবলীগের ভেতর থেকেই একজন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।
আবার ছাত্রলীগে ২৯ বছর বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ায় বয়সের কারণে ছাত্রলীগ থেকে যেসব নেতা বাদ পড়েছেন, তারা ঝুঁকছেন যুবলীগের দিকে। যুবলীগের সম্মেলন কেন্দ্র করে তাঁরা ছুটছেন পদের আশায়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মূল দল আওয়ামী লীগের কাছে যুবকের সংজ্ঞা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, যুবকদের সংগঠন যুবলীগ। কাজেই যুবকেরও সংজ্ঞা নির্ধারণ হওয়া দরকার। সম্মেলনের আগে এই দাবি আরো জোরালো করবেন তাঁরা। ছাত্রলীগ নেতৃত্বের বয়সসীমা নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে যুবলীগ নেতৃত্বেরও বয়সসীমা নির্ধারণের দাবি থাকবে তাঁদের। তাঁদের অভিমত, বয়সসীমা নির্ধারণ না করলে যুবলীগ প্রবীণদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত হবে। সেটা ভালো হবে না। এ জন্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা যুবলীগ সদস্যদের বয়সসীমা ৪০ বছর করার দাবি জানিয়েছেন।
কয়েকজন সাবেক ছাত্র নেতা বলেন, বাংলা অভিধানেও যুবক বলতে ১৬ থেকে ৪০ বছর বয়স্ক ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যুবলীগের কমিটির প্রধান পদগুলোতে এবং পরবর্তী কমিটির পদপ্রত্যাশীদের কেউই যুবক নন।
এদিকে এ মুহূর্তে বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে যুবলীগের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, নিয়মিত সম্মেলন হলে বয়স বেঁধে দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় যুবলীগের নেতাদেরও শীর্ষ পদের প্রতি আগ্রহ আছে। বয়স বেঁধে তাঁদের এ মুহূর্তে বঞ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে নিয়মিত সম্মেলন হলে আগামী তিনটি সম্মেলন পরে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলে জানান শেখ সেলিম।
যুবলীগে তাঁর প্রভাবের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সেলিম বলেন, 'যুবলীগের ব্যাপারে আমি হস্তক্ষেপ করি না। ওদেরটা ওরা দেখে।' তবে যুবলীগ নেতারা বিভিন্ন পারমর্শ নিতে তাঁর কাছে যান বলে জানান আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা।
জানা গেছে, যুবলীগ নাম হলেও সংগঠনটির বর্তমান নেতারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। বর্তমানে সংগঠনের নেতৃত্বদানকারী প্রায় সবারই বয়স ৪০-এর ওপরে।
তিন বছর মেয়াদী যুবলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছে ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারি। এরপর আরো ছয় বছর কেটে গেলেও সম্মেলন হয়নি।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, কেন্দ্রীয় নেতা শেখ শামসুল আবেদীন, জাহাঙ্গির কবির রানা, হারুণ অর রশীদ, মুজিবুর রহমান চৌধুরী. অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, ফারুক হোসেন, মুজিবুর রহমান হিরণ, আবদুস সাত্তার মাসুদ, আতাউর রহমানের বয়স ৪০ পেরিয়েছে ১০-১৫ বছর আগেই। তবু তাঁরা 'যুবক' এবং পরবর্তী কমিটির পদপ্রত্যাশী।
বয়স বেঁধে দেওয়ার দাবিকে যৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ চৌধুরী। তবে বয়স বেঁধে দেওয়া না হলেও পরবর্তী কমিটিতে নবীনদের সনি্নবেশ ঘটানো হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ লক্ষ্যে প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ইউনিটকে তাদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নিজের প্রত্যাশার বিষয়ে যুবলীগের এই নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যেহেতু যুবলীগ করি, সেহেতু নেতৃত্বে থাকার আকাঙ্ক্ষা থাকবেই। তবে সব কিছু দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।'
বয়স প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুখ চৌধুরী বলেন, 'আওয়ামী লীগের প্রবীণ লীগ বলে কিছু নেই। আমরা কোথায় যাব? হয় আমাদের যুবলীগে থাকতে হবে, না হয় আওয়ামী লীগে যেতে হবে।'
২০০৩ সালের সম্মেলনে যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম। সরকার গঠনের পর নানক প্রথমে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছেড়ে দেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিকটাত্মীয় ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে। সম্প্রতি নানক পদোন্নতি পেয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক মীর্জা আজম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন দলের গত কাউন্সিলে। তিনি হুইপের দায়িত্বও পালন করছেন। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের দ্বায়িত্ব পান। সম্প্রতি তিনি অবশ্য ওই পদ ত্যাগ করেছেন।
সূত্র মতে, সামনের কাউন্সিলে মীর্জা আজম চেয়ারম্যান পদপ্রত্যাশী। নানাকের আশীর্বাদ রয়েছে তাঁর ওপর। শেখ সেলিমের বোনজামাই হিসেবে ওমর ফারুখ চৌধুরীর অবস্থানও ভালো। তিনি পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেন। এ ছাড়া শেখ সেলিমের ভাই এবং যুবলীগের বর্তমান কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল হক মারুফ আসতে পারেন দায়িত্বে।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত সিকদার এবং ইকবালুর রহিমের নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এ ছাড়া যুবলীগের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াস উজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ব্যরিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর। এ ছাড়া ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মাজহারুল ইসলাম মানিকসহ প্রায় ৫০ জন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যুবলীগের পদপ্রত্যাশী।
যুবলীগের পদপ্রত্যাশী কি না চানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কিছু নেই। ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম, এখন দলীয় হাইকমান্ড যেখানে রাখবে সেখান থেকেই দলের জন্য কাজ করে যাব।'
যুবলীগের মধ্য থেকে ওমর ফারুখ হোসেন, মীর্জা আজম, সহসভাপতি ড. মীজানুর রহমান চেয়ারম্যান পদ প্রত্যাশী। অন্যদিকে মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেন, আতাউর রহমান আতা, এনায়েত কবীর চঞ্চল, মন্জুর আলম শাহীন, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, মহিউদ্দিন মহি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।
এদিকে যুবলীগের অনেক নেতাই বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বললেও তাঁদের নেতৃত্বে খুশি নন। এপ্রিলে অনুষ্ঠিত যুবলীগের প্রতিনিধি সভায় একই সঙ্গে একাধিক পদে থাকা নেতাদের সমালোচনা করেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। তাঁরা বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ করে বলেন, 'যুবলীগের ঘাড়ের ওপর ভর করে এমপি হবেন, প্রতিমন্ত্রী হবেন, অনেক অনেক জায়গায় নেতৃত্ব দেবেন তা হবে না।'
সংগঠনের কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করার পরই পদপ্রত্যাশীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন কিভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করা যায়। আবার সম্মেলন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতাও যুবলীগের পরবর্তী কমিটিতে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টায় মরিয়া। নানাভাবে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের লোককে দায়িত্বশীল পদে বসানোর জন্য।
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ সূত্রে জানা যায়, সম্মেলনের মাধ্যমে যুবলীগের নেতৃত্ব নির্ধারণ করার নিয়ম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং যুবলীগের বিদায়ী চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকের ইচ্ছায় কমিটি গঠিত হবে।
যুবলীগে বরাবরই শেখ সেলিমের ব্যাপক প্রভাব। এই সংগঠনে কমিটি গঠনসহ অনেক কিছুই হয় তাঁর ইচ্ছায়। তবে এবার জাহাঙ্গীর কবির নানকও প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান অথবা সাধারণ সম্পাদকের যেকোনো একটি পদে নিজের লোক বসাতে মরিয়া আওয়ামী লীগের এই নেতা।
সংগঠনের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এবার সম্মেলনে কেউ প্রার্থী হবেন না। সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে এবং তিনিই এককভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ চৌধুরী পরবর্তী চেয়ারম্যান হচ্ছেন এবং যুবলীগের ভেতর থেকেই একজন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।
আবার ছাত্রলীগে ২৯ বছর বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ায় বয়সের কারণে ছাত্রলীগ থেকে যেসব নেতা বাদ পড়েছেন, তারা ঝুঁকছেন যুবলীগের দিকে। যুবলীগের সম্মেলন কেন্দ্র করে তাঁরা ছুটছেন পদের আশায়। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মূল দল আওয়ামী লীগের কাছে যুবকের সংজ্ঞা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, যুবকদের সংগঠন যুবলীগ। কাজেই যুবকেরও সংজ্ঞা নির্ধারণ হওয়া দরকার। সম্মেলনের আগে এই দাবি আরো জোরালো করবেন তাঁরা। ছাত্রলীগ নেতৃত্বের বয়সসীমা নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে যুবলীগ নেতৃত্বেরও বয়সসীমা নির্ধারণের দাবি থাকবে তাঁদের। তাঁদের অভিমত, বয়সসীমা নির্ধারণ না করলে যুবলীগ প্রবীণদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত হবে। সেটা ভালো হবে না। এ জন্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা যুবলীগ সদস্যদের বয়সসীমা ৪০ বছর করার দাবি জানিয়েছেন।
কয়েকজন সাবেক ছাত্র নেতা বলেন, বাংলা অভিধানেও যুবক বলতে ১৬ থেকে ৪০ বছর বয়স্ক ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যুবলীগের কমিটির প্রধান পদগুলোতে এবং পরবর্তী কমিটির পদপ্রত্যাশীদের কেউই যুবক নন।
এদিকে এ মুহূর্তে বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে যুবলীগের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, নিয়মিত সম্মেলন হলে বয়স বেঁধে দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় যুবলীগের নেতাদেরও শীর্ষ পদের প্রতি আগ্রহ আছে। বয়স বেঁধে তাঁদের এ মুহূর্তে বঞ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে নিয়মিত সম্মেলন হলে আগামী তিনটি সম্মেলন পরে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলে জানান শেখ সেলিম।
যুবলীগে তাঁর প্রভাবের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সেলিম বলেন, 'যুবলীগের ব্যাপারে আমি হস্তক্ষেপ করি না। ওদেরটা ওরা দেখে।' তবে যুবলীগ নেতারা বিভিন্ন পারমর্শ নিতে তাঁর কাছে যান বলে জানান আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা।
জানা গেছে, যুবলীগ নাম হলেও সংগঠনটির বর্তমান নেতারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। বর্তমানে সংগঠনের নেতৃত্বদানকারী প্রায় সবারই বয়স ৪০-এর ওপরে।
তিন বছর মেয়াদী যুবলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছে ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি, যার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারি। এরপর আরো ছয় বছর কেটে গেলেও সম্মেলন হয়নি।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, কেন্দ্রীয় নেতা শেখ শামসুল আবেদীন, জাহাঙ্গির কবির রানা, হারুণ অর রশীদ, মুজিবুর রহমান চৌধুরী. অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু, ফারুক হোসেন, মুজিবুর রহমান হিরণ, আবদুস সাত্তার মাসুদ, আতাউর রহমানের বয়স ৪০ পেরিয়েছে ১০-১৫ বছর আগেই। তবু তাঁরা 'যুবক' এবং পরবর্তী কমিটির পদপ্রত্যাশী।
বয়স বেঁধে দেওয়ার দাবিকে যৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুখ চৌধুরী। তবে বয়স বেঁধে দেওয়া না হলেও পরবর্তী কমিটিতে নবীনদের সনি্নবেশ ঘটানো হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ লক্ষ্যে প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতাদের তালিকা করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ইউনিটকে তাদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নিজের প্রত্যাশার বিষয়ে যুবলীগের এই নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'যেহেতু যুবলীগ করি, সেহেতু নেতৃত্বে থাকার আকাঙ্ক্ষা থাকবেই। তবে সব কিছু দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।'
বয়স প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুখ চৌধুরী বলেন, 'আওয়ামী লীগের প্রবীণ লীগ বলে কিছু নেই। আমরা কোথায় যাব? হয় আমাদের যুবলীগে থাকতে হবে, না হয় আওয়ামী লীগে যেতে হবে।'
২০০৩ সালের সম্মেলনে যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম। সরকার গঠনের পর নানক প্রথমে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছেড়ে দেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিকটাত্মীয় ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে। সম্প্রতি নানক পদোন্নতি পেয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক মীর্জা আজম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন দলের গত কাউন্সিলে। তিনি হুইপের দায়িত্বও পালন করছেন। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের দ্বায়িত্ব পান। সম্প্রতি তিনি অবশ্য ওই পদ ত্যাগ করেছেন।
সূত্র মতে, সামনের কাউন্সিলে মীর্জা আজম চেয়ারম্যান পদপ্রত্যাশী। নানাকের আশীর্বাদ রয়েছে তাঁর ওপর। শেখ সেলিমের বোনজামাই হিসেবে ওমর ফারুখ চৌধুরীর অবস্থানও ভালো। তিনি পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেন। এ ছাড়া শেখ সেলিমের ভাই এবং যুবলীগের বর্তমান কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল হক মারুফ আসতে পারেন দায়িত্বে।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত সিকদার এবং ইকবালুর রহিমের নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এ ছাড়া যুবলীগের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ইলিয়াস উজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ব্যরিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর। এ ছাড়া ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মাজহারুল ইসলাম মানিকসহ প্রায় ৫০ জন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যুবলীগের পদপ্রত্যাশী।
যুবলীগের পদপ্রত্যাশী কি না চানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছার কিছু নেই। ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম, এখন দলীয় হাইকমান্ড যেখানে রাখবে সেখান থেকেই দলের জন্য কাজ করে যাব।'
যুবলীগের মধ্য থেকে ওমর ফারুখ হোসেন, মীর্জা আজম, সহসভাপতি ড. মীজানুর রহমান চেয়ারম্যান পদ প্রত্যাশী। অন্যদিকে মুজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেন, আতাউর রহমান আতা, এনায়েত কবীর চঞ্চল, মন্জুর আলম শাহীন, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, মহিউদ্দিন মহি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী।
এদিকে যুবলীগের অনেক নেতাই বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বললেও তাঁদের নেতৃত্বে খুশি নন। এপ্রিলে অনুষ্ঠিত যুবলীগের প্রতিনিধি সভায় একই সঙ্গে একাধিক পদে থাকা নেতাদের সমালোচনা করেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। তাঁরা বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ করে বলেন, 'যুবলীগের ঘাড়ের ওপর ভর করে এমপি হবেন, প্রতিমন্ত্রী হবেন, অনেক অনেক জায়গায় নেতৃত্ব দেবেন তা হবে না।'
No comments