অভিবাসন-‘বিগ অ্যান্ড বোল্ড’ বারাক ওবামা? by শান্তনু মজুমদার
নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাসের কম সময় হাতে থাকতে অবৈধ অভিবাসী বিষয়ে নতুন নির্বাহী নীতিমালা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক জুয়া খেললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নির্বাচনের জন্য এই ঘোষণা কতটা ফলদায়ী হবে তা এখনই স্পষ্ট নয়।
তবে নিতান্ত ঝোঁক বা আবেগের বশে নয়, অবৈধ অভিবাসন-সংক্রান্ত নতুন নিয়মটি যে ভোটের বাজার নিয়ে ‘টিম ওবামার’ সুচিন্তিত পর্যবেক্ষণের ফল, তা বোঝা যায়। লক্ষণীয় বিষয়, অভিবাসী স্ট্যাটাস না থাকলেও প্রত্যেক শিশুর জন্য উচ্চবিদ্যালয়ের মাধ্যমে পাবলিক এডুকেশন নিশ্চিত করার অধিকার প্রদান-সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আসার ৩০ বছর পূর্তির দিনটিকে নতুন ঘোষণার জন্য বেছে নিয়েছেন ওবামা।
নতুন ঘোষণা মোতাবেক, ১৬ বছর বয়স হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করা একজন ব্যক্তির বয়স এখন যদি ৩০-এর বেশি না হয় এবং তিনি যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে থাকেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে যদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ না থাকে এবং তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিদ্যাশিক্ষা সমাপ্ত করে থাকেন বা জেনারেল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট (জিইডি) ডিপ্লোমা পেয়ে থাকেন বা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকেন, তাহলে তাঁকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে না এবং তাঁকে বৈধভাবে কাজকর্ম করার অধিকার দেওয়া হবে। ওবামা অবশ্য স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে নতুন ঘোষণাটি ‘কোনো অ্যামনেস্টি নয়, দায়মুক্তি নয়। এটি নাগরিকত্ব লাভের কোনো পথ নয়। এটা নিতান্ত সামরিক একটি পদক্ষেপ।’ হোক না। তার পরও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীর বৈধ করে নেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি চাপান-উতোরে ওবামা প্রশাসনের সিদ্ধান্তটি অভিবাসনবান্ধব ও অভিবাসনবিরোধী উভয়পক্ষের জন্যই একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সরকারি হিসাবে কমপক্ষে আট লাখ অবৈধ অভিবাসী ওবামার ঘোষণা দ্বারা সরাসরি উপকৃত হবেন; ওয়াশিংটনভিত্তিক পিউ হিস্পানিক সেন্টারের হিসাবমতে, সংখ্যাটি হবে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন। সন্দেহ নেই যে ভোট মাথায় রেখেই ঘোষণাটি এসেছে। ওবামার ঘোষণায় মূলত লাতিন আমেরিকা থেকে আগত, যাদের বেশির ভাগ আবার প্রতিবেশী মেক্সিকোর, অবৈধ অভিবাসীরাই লাভবান হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ ও অবৈধ উভয় ধরনের অভিবাসীর হিসাব ধরলে লাতিনোরা বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর ভোটের ক্ষেত্রে ভোটদানে সক্ষম লাতিনোরা ফ্লোরিডা, কলরাডো, নেভাদা, ভার্জিনিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ওবামার লোকজনের মতে, অর্থনৈতিক মন্দার আক্রমণে বিপর্যস্ত নিম্ন আয়ের লাতিনোদের ওবামার ওপর থেকে মন উঠে যাওয়া ঠেকাতে উল্লিখিত ঘোষণাটি ভালো রকমের কাজ করার কথা। আসলে ওবামার নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অভিবাসী, বিশেষত লাতিনো ভোটারদের ব্যাপারে বেশ ভয় কাজ করছে।
এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের গত মাসের জরিপমতে, লাতিনোদের মধ্যে রিপাবলিকান রমনির (২৭ শতাংশ) চেয়ে ডেমোক্র্যাট ওবামা (৬১ শতাংশ) এখনো অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু এটা তেমন কিছুই প্রমাণ করে না। কারণ, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে শ্লথগতিতে জীবন-জীবিকার দুর্বিপাক, অভিবাসন আইনে আমূল পরিবর্তনে কংগ্রেসকে রাজি করানোয় ওবামার ব্যর্থতা আর ওবামার আমলে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অদৃষ্টপূর্ব বাড়াবাড়িতে লাতিনোরা ক্ষিপ্ত। পিউ হিস্পানিক সেন্টারের গত ডিসেম্বরের জরিপমতে, লাতিনোদের ৫৯ শতাংশ ওবামার অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার নিয়মাবলিতে অসন্তুষ্ট। উল্লেখ্য, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন লাখ ৯৬ হাজার ৯০৬ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে; এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ। ওবামার নীতিনির্ধারকদের ভয় এসব বাস্তবতাকে ঘিরে। আসলে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়াটা শুধু লাতিনো নয়, অন্য সব অঞ্চল থেকে আসা অভিবাসীদেরও ওবামার প্রতি অভিমানহত হয়ে পড়ার কড়া এক ডোজ হিসেবে কাজ করে বসতে পারে। আর তাহলেই সর্বনাশ—অভিমানহত, অনুভূতিতে আঘাত লাগা অভিবাসীরা হয়তো ঐতিহ্য ভেঙে দলে দলে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনিকে ভোট দেবে না কিন্তু তাদের বড় একটি অংশ ওবামাকেও ভোট না দিয়ে ঘরে বসে থাকতে তো পারে। ওবামার লোকজনের ভয়টা ঠিক এখানেই। ওই ঘোষণাটি হচ্ছে, আশঙ্কাটি বাস্তব হয়ে পড়া ঠেকানোর একটি উদ্যোগ।
ওবামার কাজ ওবামা করে যাবেন আর রমনি তথা রিপাবলিকানরা বুঝি দেখে থাকবেন? হয় কখনো? কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী ক্ষমতাবলে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণকে শুধু কড়া সমালোচনা নয়, বরং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক এখতিয়ার-বহির্ভূত ক্ষমতাচর্চা হিসেবে চিহ্নিত করেছে রিপাবলিকানরা। উল্লেখ্য, মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষ বর্তমানে রিপাবলিকানদের দখলে। মিট রমনি ব্যক্ত করেছেন সতর্ক প্রতিক্রিয়া। নিজে কী করবেন তা বলেননি, তবে ‘পরবর্তী প্রেসিডেন্টরা’ ওবামার সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারেন বলার মধ্য দিয়ে যা বোঝানোর তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘দায়িত্বশীল নীতিমালা গ্রহণের পরিবর্তে নির্বাচনী বছরের রাজনীতি’ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলেও শোর তুলছে রমনি শিবির। এখানেই শেষ নয়, ওবামার ঘোষণাটি শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হবে বলেও প্রচারণা চালাচ্ছেন রিপাবলিকানরা। রিপাবলিকানদের দাবি হচ্ছে, নতুন ঘোষণাটি মূলধারার মধ্যে অভিবাসী-শরণার্থী আতঙ্ক থেকে বিপুলসংখ্যক ভোটারকে দলীয় ভেদাভেদ ভুলিয়ে ওবামার বিরুদ্ধে এককাট্টা করে ফেলবে। মন্দার বছরগুলোতে হা-হুতাশের মধ্যে থাকা মূলধারার নিম্ন আয়ের অনেক মানুষকে খেপিয়ে দেওয়ার জন্য রিপাবলিকান কৌশলটি মন্দ নয়।
তবে ওবামার বিরুদ্ধে অভিবাসীদের জন্য গোপন প্রেম থাকার ব্যাপারটি প্রতিষ্ঠা করা অত সহজ হবে না। ওবামা বুদ্ধিমান রাজনীতিক; আগে থেকেই নিজের রেকর্ড স্পষ্ট করে রেখেছেন। গত তিন বছরে তিনি ১ দশমিক ১ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া করেছেন; ১৯৫০-এর দশক থেকে ধরলে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নে ওবামার মতো সফল প্রেসিডেন্ট আর নেই। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা যে চার লাখ, তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এমন এক রেকর্ডওয়ালা বাহাদুর প্রেসিডেন্টকে সব দুর্ভোগের জন্য অভিবাসীদের দিকে নাক-মুখ কুঁচকানোর অভ্যাসওয়ালারা চাইলেই দূর দূর করে উঠতে পারবেন না।
কয়েক সপ্তাহ আগে সমকামীদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে বড় একটি রাজনৈতিক জুয়া খেলেছেন বারাক ওবামা। এর আগে সামরিক বাহিনীর সমকামীদের প্রকাশ্য হওয়ার অধিকার দিয়েছেন। এবার অবৈধ হয়ে যাওয়া তরুণদের স্বদেশ পাঠানো ঠেকালেন। রক্ষণশীলরা ফুঁসবেই; স্বাভাবিক। কিন্তু অন্য একটা দিকও আছে। ওবামা যাদের পক্ষে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন, তাদের এবং তাদের শুভানুধ্যায়ীদের ভোটশক্তি ফেলনা নয়। আরেকটা ব্যাপার, গড়-আমেরিকানদের মধ্যে ‘বিগ অ্যান্ড বোল্ড’ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম লোকদের জন্য আকর্ষণ কাজ করে বলে মনে হয়। উল্লিখিত বারাক ওবামার সিদ্ধান্তগুলো দৃশ্যত যেমন ব্যাপক, তেমনি সাহসী। এগুলো ওবামাকে কতখানি ফায়দা দেবে, তা বোঝা যাবে নভেম্বরে; প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।
শান্তনু মজুমদার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
নতুন ঘোষণা মোতাবেক, ১৬ বছর বয়স হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করা একজন ব্যক্তির বয়স এখন যদি ৩০-এর বেশি না হয় এবং তিনি যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে থাকেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে যদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ না থাকে এবং তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিদ্যাশিক্ষা সমাপ্ত করে থাকেন বা জেনারেল এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট (জিইডি) ডিপ্লোমা পেয়ে থাকেন বা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকেন, তাহলে তাঁকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে না এবং তাঁকে বৈধভাবে কাজকর্ম করার অধিকার দেওয়া হবে। ওবামা অবশ্য স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে নতুন ঘোষণাটি ‘কোনো অ্যামনেস্টি নয়, দায়মুক্তি নয়। এটি নাগরিকত্ব লাভের কোনো পথ নয়। এটা নিতান্ত সামরিক একটি পদক্ষেপ।’ হোক না। তার পরও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক অবৈধ অভিবাসীর বৈধ করে নেওয়ার দীর্ঘমেয়াদি চাপান-উতোরে ওবামা প্রশাসনের সিদ্ধান্তটি অভিবাসনবান্ধব ও অভিবাসনবিরোধী উভয়পক্ষের জন্যই একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সরকারি হিসাবে কমপক্ষে আট লাখ অবৈধ অভিবাসী ওবামার ঘোষণা দ্বারা সরাসরি উপকৃত হবেন; ওয়াশিংটনভিত্তিক পিউ হিস্পানিক সেন্টারের হিসাবমতে, সংখ্যাটি হবে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন। সন্দেহ নেই যে ভোট মাথায় রেখেই ঘোষণাটি এসেছে। ওবামার ঘোষণায় মূলত লাতিন আমেরিকা থেকে আগত, যাদের বেশির ভাগ আবার প্রতিবেশী মেক্সিকোর, অবৈধ অভিবাসীরাই লাভবান হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ ও অবৈধ উভয় ধরনের অভিবাসীর হিসাব ধরলে লাতিনোরা বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর ভোটের ক্ষেত্রে ভোটদানে সক্ষম লাতিনোরা ফ্লোরিডা, কলরাডো, নেভাদা, ভার্জিনিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ওবামার লোকজনের মতে, অর্থনৈতিক মন্দার আক্রমণে বিপর্যস্ত নিম্ন আয়ের লাতিনোদের ওবামার ওপর থেকে মন উঠে যাওয়া ঠেকাতে উল্লিখিত ঘোষণাটি ভালো রকমের কাজ করার কথা। আসলে ওবামার নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অভিবাসী, বিশেষত লাতিনো ভোটারদের ব্যাপারে বেশ ভয় কাজ করছে।
এনবিসি/ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের গত মাসের জরিপমতে, লাতিনোদের মধ্যে রিপাবলিকান রমনির (২৭ শতাংশ) চেয়ে ডেমোক্র্যাট ওবামা (৬১ শতাংশ) এখনো অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু এটা তেমন কিছুই প্রমাণ করে না। কারণ, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে শ্লথগতিতে জীবন-জীবিকার দুর্বিপাক, অভিবাসন আইনে আমূল পরিবর্তনে কংগ্রেসকে রাজি করানোয় ওবামার ব্যর্থতা আর ওবামার আমলে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অদৃষ্টপূর্ব বাড়াবাড়িতে লাতিনোরা ক্ষিপ্ত। পিউ হিস্পানিক সেন্টারের গত ডিসেম্বরের জরিপমতে, লাতিনোদের ৫৯ শতাংশ ওবামার অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার নিয়মাবলিতে অসন্তুষ্ট। উল্লেখ্য, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন লাখ ৯৬ হাজার ৯০৬ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে; এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ। ওবামার নীতিনির্ধারকদের ভয় এসব বাস্তবতাকে ঘিরে। আসলে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়াটা শুধু লাতিনো নয়, অন্য সব অঞ্চল থেকে আসা অভিবাসীদেরও ওবামার প্রতি অভিমানহত হয়ে পড়ার কড়া এক ডোজ হিসেবে কাজ করে বসতে পারে। আর তাহলেই সর্বনাশ—অভিমানহত, অনুভূতিতে আঘাত লাগা অভিবাসীরা হয়তো ঐতিহ্য ভেঙে দলে দলে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনিকে ভোট দেবে না কিন্তু তাদের বড় একটি অংশ ওবামাকেও ভোট না দিয়ে ঘরে বসে থাকতে তো পারে। ওবামার লোকজনের ভয়টা ঠিক এখানেই। ওই ঘোষণাটি হচ্ছে, আশঙ্কাটি বাস্তব হয়ে পড়া ঠেকানোর একটি উদ্যোগ।
ওবামার কাজ ওবামা করে যাবেন আর রমনি তথা রিপাবলিকানরা বুঝি দেখে থাকবেন? হয় কখনো? কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী ক্ষমতাবলে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণকে শুধু কড়া সমালোচনা নয়, বরং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক এখতিয়ার-বহির্ভূত ক্ষমতাচর্চা হিসেবে চিহ্নিত করেছে রিপাবলিকানরা। উল্লেখ্য, মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষ বর্তমানে রিপাবলিকানদের দখলে। মিট রমনি ব্যক্ত করেছেন সতর্ক প্রতিক্রিয়া। নিজে কী করবেন তা বলেননি, তবে ‘পরবর্তী প্রেসিডেন্টরা’ ওবামার সিদ্ধান্ত পাল্টে দিতে পারেন বলার মধ্য দিয়ে যা বোঝানোর তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ‘দায়িত্বশীল নীতিমালা গ্রহণের পরিবর্তে নির্বাচনী বছরের রাজনীতি’ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলেও শোর তুলছে রমনি শিবির। এখানেই শেষ নয়, ওবামার ঘোষণাটি শেষ পর্যন্ত বুমেরাং হবে বলেও প্রচারণা চালাচ্ছেন রিপাবলিকানরা। রিপাবলিকানদের দাবি হচ্ছে, নতুন ঘোষণাটি মূলধারার মধ্যে অভিবাসী-শরণার্থী আতঙ্ক থেকে বিপুলসংখ্যক ভোটারকে দলীয় ভেদাভেদ ভুলিয়ে ওবামার বিরুদ্ধে এককাট্টা করে ফেলবে। মন্দার বছরগুলোতে হা-হুতাশের মধ্যে থাকা মূলধারার নিম্ন আয়ের অনেক মানুষকে খেপিয়ে দেওয়ার জন্য রিপাবলিকান কৌশলটি মন্দ নয়।
তবে ওবামার বিরুদ্ধে অভিবাসীদের জন্য গোপন প্রেম থাকার ব্যাপারটি প্রতিষ্ঠা করা অত সহজ হবে না। ওবামা বুদ্ধিমান রাজনীতিক; আগে থেকেই নিজের রেকর্ড স্পষ্ট করে রেখেছেন। গত তিন বছরে তিনি ১ দশমিক ১ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া করেছেন; ১৯৫০-এর দশক থেকে ধরলে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নে ওবামার মতো সফল প্রেসিডেন্ট আর নেই। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা যে চার লাখ, তা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এমন এক রেকর্ডওয়ালা বাহাদুর প্রেসিডেন্টকে সব দুর্ভোগের জন্য অভিবাসীদের দিকে নাক-মুখ কুঁচকানোর অভ্যাসওয়ালারা চাইলেই দূর দূর করে উঠতে পারবেন না।
কয়েক সপ্তাহ আগে সমকামীদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে বড় একটি রাজনৈতিক জুয়া খেলেছেন বারাক ওবামা। এর আগে সামরিক বাহিনীর সমকামীদের প্রকাশ্য হওয়ার অধিকার দিয়েছেন। এবার অবৈধ হয়ে যাওয়া তরুণদের স্বদেশ পাঠানো ঠেকালেন। রক্ষণশীলরা ফুঁসবেই; স্বাভাবিক। কিন্তু অন্য একটা দিকও আছে। ওবামা যাদের পক্ষে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন, তাদের এবং তাদের শুভানুধ্যায়ীদের ভোটশক্তি ফেলনা নয়। আরেকটা ব্যাপার, গড়-আমেরিকানদের মধ্যে ‘বিগ অ্যান্ড বোল্ড’ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম লোকদের জন্য আকর্ষণ কাজ করে বলে মনে হয়। উল্লিখিত বারাক ওবামার সিদ্ধান্তগুলো দৃশ্যত যেমন ব্যাপক, তেমনি সাহসী। এগুলো ওবামাকে কতখানি ফায়দা দেবে, তা বোঝা যাবে নভেম্বরে; প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।
শান্তনু মজুমদার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
No comments