অর্থ বরাদ্দে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা by অরুণ কর্মকার

রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানির (বাপেক্স) আবিষ্কৃত অত্যন্ত সম্ভাবনাময় সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়নকাজ পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা ও মাঠ পর্যায়ে অবকাঠামো উন্নয়নে ধীরগতিই এর মূল কারণ। অনুসন্ধান কূপ খননসহ সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়ন কার্যক্রম গত ডিসেম্বর মাসে শুরু হওয়ার কথা ছিল। বাপেক্সের সূত্রগুলো জানায়, আগামী মার্চ মাসে এ কাজ শুরু


করা যাবে। তবে বর্ষাকাল এসে গেলে এ বছর ওই কাজ আর শুরু করা যাবে না বলেও সূত্রগুলো জানায়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ২০০৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানোর শর্ত হিসেবে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠনের নির্দেশনা দেয়। বলা হয়, গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজে যাতে অর্থসংকট না হয় সে জন্য এ তহবিল গঠন করা হচ্ছে।
সে অনুযায়ী গ্যাস বিক্রি থেকে অর্জিত অর্থের একাংশ ওই তহবিলে জমা হতে থাকে। গত তিন বছরে জমার পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার ওই তহবিল ব্যবহারের নীতিমালা চূড়ান্ত করতে পারেনি।
সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলাজুড়ে সুনেত্র গ্যাসক্ষেত্রটি বাপেক্স আবিষ্কার করে ২০১০ সালে। প্রায় ২৬০ কিলোমিটার লাইন দ্বিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপের ভিত্তিতে আবিষ্কৃত ক্ষেত্রটি একটি সমৃদ্ধ (টিসিএফ) গ্যাসক্ষেত্র হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ক্ষেত্রটি আবিষ্কারের পরই সরকারের কাছে বাপেক্স গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ওই ক্ষেত্রটি উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়। এ জন্য বাপেক্স দুই পর্যায়ে ২৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ওই গ্যাসক্ষেত্রে কয়েক শ টন ভারী খননযন্ত্র (রিগ) ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা, সেতু, কালভার্ট প্রভৃতি মেরামত; অনুসন্ধান কূপ খনন ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়।
এ ছাড়া বাপেক্স তিতাস গ্যাসক্ষেত্রে একটি কূপ সংস্কার (ওয়ার্কওভার) এবং ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রে একটি ‘প্রসেস প্ল্যান্ট’ (উত্তোলিত গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহের আগে তা থেকে পানি, তেল, ধুলা-ময়লা দূর করার কাজে ব্যবহূত হয়) স্থাপনের জন্যও গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়।
সরকারি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, সরকার নীতিগতভাবে বাপেক্সের এ প্রকল্পগুলোর জন্য গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দে রাজি। কিন্তু ব্যবহারের একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রয়োজন, যা গত তিন বছরেও হয়নি। এখন তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে সরকারি সূত্রগুলো জানায়।
এ ছাড়া, গ্যাসক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য রাস্তাসহ অবকাঠামো উন্নয়নকাজের অগ্রগতি ও মান চাহিদা অনুযায়ী হচ্ছে না। বাপেক্স সূত্র জানায়, ঠিকাদারদের যে অর্থে কাজ দেওয়া হয়েছিল, বৃষ্টিতে তা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করায় আরও ৫৪ লাখ টাকা বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কাজের অগ্রগতি ও মান সন্তোষজনক নয়।

No comments

Powered by Blogger.