আন্দোলনের বিকল্প পদ্ধতি
বিরোধী দল সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে। জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন তো আমরা অনেক দেখলাম। এবার আন্দোলনের পদ্ধতিগুলো কীভাবে শান্তিপূর্ণ করা যায়, চলুন দেখি। ভেবেছেন নাসিফ চৌধুরী আগুনের বিকল্প পানি-পদ্ধতি আন্দোলনের নামে রাগ করে যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে অনেক। লাভ হয়নি কিছুই। উল্টো আগুনে পুড়ে মরেছে আর কষ্ট পেয়েছে বাস ও বাসের যাত্রীরা। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের
স্বার্থে বিরোধী দলকে এবার যানবাহনের প্রতি মমতাসুলভ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে। সে ক্ষেত্রে গাড়িঘোড়ায় আগুন দেওয়ার পরিবর্তে পানি দেওয়া যেতে পারে। এতে দেশের সব যানবাহন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। যাঁরা নিয়মিত গোসল করার সময় পানি পান না, এ ধরনের আন্দোলনে তাঁরাও সম্পৃক্ত হবেন। তবে শীতকালে পানি সামান্য গরম করে ঢালতে হবে। এ পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও হবে, আবার জনগণের উপকারও হবে।
সমাবেশের বিকল্প রেডিও-পদ্ধতি
সভা-সমাবেশে জ্বালাময়ী কণ্ঠে সরকারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করলেও বিরোধী দলের বক্তব্য সরকার কোনো দিনও পাত্তা দেয়নি। উল্টো সমাবেশের কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় বেড়েছে ভোগান্তি। অনেক সময় মাইকের অভাবে খালি গলায় চিৎকার-চেঁচামেচি করতে গিয়ে গলার ব্যথায় ভুগেছেন বিরোধীদলীয় নেতারা। এ ব্যাপারে বিরোধী দলকে এখন শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সভা-সমাবেশের বদলে রাত ১২টার পর এফএম রেডিওতে বিরোধী দলের দাবি-দাওয়া নিয়ে একটি লাইভ অনুষ্ঠান প্রচার করা যেতে পারে। আরজে হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিরোধীদলীয় নেতারা। অনুষ্ঠানে জ্বালাময়ী ভাষণের ফাঁকে ফাঁকে সরকারবিরোধী দু-একটা গানও প্রচার করা যেতে পারে। সে সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক কথা লিখে এসএমএস করার আহ্বান জানানো হবে!!
ককটেলের বিকল্প মাইক-পদ্ধতি
ককটেল ফাটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা চূড়ান্ত অশান্তির কাজ। বিরোধী দলকে এ ব্যাপারে বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইক, সাউন্ড সিস্টেম অথবা চায়নিজ ফোনের মাধ্যমে একটু পরপর ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ প্রচার করতে হবে। এর ফলে কোনো প্রকার হতাহত হওয়ার ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে।
মিছিলের বিকল্প অডিও ক্লিপ-পদ্ধতি
আজকাল মিছিল মানেই রাস্তা আটকে অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি। মিছিলের কারণে সৃষ্ট যানজট মিছিলের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থনের বদলে ক্ষোভের জন্ম দেয় বেশি। তাই মিছিলের পুরোনো পদ্ধতি বাদ দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে হবে। এ পদ্ধতিতে কোনো সাউন্ড রেকর্ডিং স্টুডিওতে কয়েক শ মানুষের মিছিলের আওয়াজ রেকর্ড করতে হবে। চাইলে ব্যাকগ্রাউন্ডে মনের মতো একটু বাজনাও যোগ করা যেতে পারে। তারপর সেই মিছিলের আওয়াজ সিডি আকারে বাজারে ছাড়তে হবে। সেই সিডি রাস্তার পাশে সিডির দোকানগুলোতে উচ্চস্বরে বাজানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মিছিলের অডিও ক্লিপ ইন্টারনেট আপলোড করে তার লিংক ফেসবুকে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে সেই মিছিল ভয়েস এসএমএস করে সরকারের কাছে পাঠানো যেতে পারে।
সমালোচনার বিকল্প ভালোবাসা-পদ্ধতি
সরকারের সমালোচনা করা সব সময়ই বিরোধী দলের প্রিয় অভ্যাস। কিন্তু অনেক সমালোচনা ও হুমকি-ধমকি দিয়েও সরকারের কিছু করা যায়নি। তাই বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে এখন ভালোবাসা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে প্রতিদিন সরকারকে ফুল দেওয়া যেতে পারে। ফুলের ওপর একটা কার্ডে সরকারের প্রশংসাসহ ভালো ভালো কথা লেখা থাকবে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে একটু পরপর শুভকামনা জানিয়ে এসএমএস করতে হবে। এতে একপর্যায়ে বিরোধী দলের প্রতি সরকারেরও ভালোবাসা জন্ম নেবে এবং ভালোবাসার প্রতিদান দিতে গিয়ে সরকার খুশিমনে পদত্যাগ করবে।
No comments