এক বিদ্যালয়ে দুই প্রধান শিক্ষক!

নিয়ম লঙ্ঘন করে নড়াইলের লোহাগড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয়টির সাবেক প্রধান শিক্ষক কোহিনুর পারভীন। এ কারণে তিনি এখানেই দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন প্রধান শিক্ষকও এখানে যোগ দিয়েছেন। সাবেক প্রধান শিক্ষক আরও অভিযোগ করেন, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ নড়াইল জেলা শাখার সভাপতি মনোয়ার হোসেন দলীয় প্রভাব


ঘাটিয়ে তাঁকে এখান থেকে সরিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে উম্মে রুমানাকে বদলি করে আনার ব্যবস্থা করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, পাঁচ দিন ধরে এখানে দুজন প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। এতে এ বছরও জেলার শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী এই বিদ্যালয়ে প্রশাসনিকসহ পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কোহিনুর পারভীনকে পৌর এলাকার নারানদিয়া বিদ্যালয়ে, নারানদিয়ার প্রধান শিক্ষক আনোয়ারা খাতুনকে লাহুড়িয়া ইউনিয়নের শরুশোনা বিদ্যালয়ে এবং শরুশোনার প্রধান শিক্ষক উম্মে রুমানাকে লোহাগড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। গত ২৯ ডিসেম্বর একই পত্রে নড়াইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ আদেশ দেন। উম্মে রুমানা ৪ জানুয়ারি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেন।
কোহিনুর পারভীন দাবি করেন, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে বদলি করা হয়েছে বলে বদলির আদেশে উল্লেখ আছে। কিন্তু কী অনিয়ম, তা এখনো তিনি জানেন না। কোহিনুর পারভীন আরও বলেন, ‘আমাকে শাস্তিমূলক বদলি করলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার কথা। পরে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদনের ভিত্তিতে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে ওই পদে দেওয়ার নিয়ম। অথচ উম্মে রুমানা একজন কনিষ্ঠ (জুনিয়র) প্রধান শিক্ষক হলেও নিয়ম লঙ্ঘন করে তাঁকে মডেল স্কুলে বদলি করা হয়েছে। এ অবৈধ বদলি স্থগিত করতে বিভাগীয় উপপরিচালক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে ৭ জানুয়ারি আবেদন করেছি।’
উম্মে রুমানা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমাকে বদলি করেছে। তাই আমি যোগদান করেছি। বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমার যোগদান পত্র গ্রহণ করেছেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, কোহিনুর পারভীন ও আনোয়ারা খাতুনের সঙ্গে নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সম্পর্ক ভালো নয়। তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়মের অভিযোগ আছে। সে জন্য উপজেলা শিক্ষা কমিটি একটি সভা করে ওই দুজনের বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সভায় উম্মে রুমানাকে মডেল বিদ্যালয়ে বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আরও বলেন, এসব সিদ্ধান্ত রেজ্যুলেশন আকারে জেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিভাগীয় উপপরিচালকের অনুমতি নিয়ে ওই তিনজনের বদলির আদেশ করেন। এ কারণে মডেল বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান জানান, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষা বিভাগ উম্মে রুমানার যোগ্যতা বিবেচনা করে তাঁকে ওখানে বদলি করেছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।
পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মনোয়ার হোসেন প্রভাব খাটিয়ে উম্মে রুমানাকে বদলি করে আনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বদলির ব্যাপারে স্কুলের ধারে-কাছেও যাইনি।’

No comments

Powered by Blogger.