ইয়াবার থাবা-এখনই দমানো অপরিহার্য
ইয়াবার মরণ থাবা ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশে। সহজেই কেনাবেচা হয় শহর ও গ্রামে। প্রমাণ মেলে ইয়াবার ব্যবহারকারী এবং আমদানিকারকদের আতঙ্কিত হওয়ার মতো সেই সংখ্যা দেখে। ১২ লাখ ব্যবসায়ী, আর সেবন করে ১৫ লাখ মানুষ। ইয়াবা সেবন ও আমদানির সংখ্যা যে কত দ্রুত বাড়ছে, সেটিও পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয়ে আছে। ২০০৭ সালে যেখানে মাত্র ৪৮৩টি ট্যাবলেট ধরা পড়েছিল, সেখানে ২০১০ সালে এসে ধরা পড়েছে ১৫ হাজার ৪৮১টি ট্যাবলেট। এটা ঠিক, যে
পরিমাণ ট্যাবলেট আমদানি হয়েছে তার সামান্যই ধরা পড়েছে। বাকিগুলো সেবনকারীদের হাতে গেছে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। ক্রম বৃদ্ধি পাওয়া এই মরণ নেশা আমাদের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে। এদিকে ইয়াবা পাচারে বাংলাদেশের নাম আবারও উচ্চারিত হলো বহির্বিশ্বে। এবার জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে এই মাদক কিভাবে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে, কোথায় কোথায় এর উপাদানগুলো উৎপাদন হচ্ছে, তারও বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। আর এ বিষয়টি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষও অবগত আছে। বাংলাদেশকে তার যুব ও কিশোর সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে যেভাবে ইয়াবা এবং ফেনসিডিল ব্যবহার বেড়ে চলেছে, তাতে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। অবৈধ মাদক ব্যবসা আর ব্যবহার রোধে রাষ্ট্রকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইয়াবাসহ সব নেশাসামগ্রীই আসে সীমান্তের ওপার থেকে। আর ইয়াবার বড় চালান আসে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমার ও ভারত থেকে ইয়াবা এবং ফেনসিডিল আসার ব্যাপারে লেখালেখি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ইয়াবার উপাদান সুডোইফিড্রিন বিভিন্ন দেশে ইয়াবা তৈরিতে কাজে লাগছে। এমন ছয়টি বড় চালান মাত্র এক বছরেই ধরা পড়েছে। যেগুলো গেছে বিশ্বের পাঁচটি দেশে। এতে করে বোঝা যায়, চোরাচালানিরা একটি বড় রকমের আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেট তৈরি করেছে মাদক চোরাচালানের জন্য। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য খাতের ওপরও আঘাত হানতে পারে এই মাদক চোরাচালানের বিষয়টি। বিশেষ করে ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে, সেই উন্নয়নের পথেও মাদক চোরাচালান ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ যেসব চোরাচালানি হওয়া দ্রব্য ধরা পড়েছে, সেগুলো বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানির নামে করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হোক_এমন যারা প্রত্যাশা করে, সেই গোষ্ঠী কি এই কাজটি করিয়েছে? সন্দেহের চোখ চলে যায় রোহিঙ্গা রিফিউজিদের ওপর। তারা মিয়ানমার থেকে এসব সামগ্রী বয়ে এনে দালালদের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে চালান করছে। দেশের অভ্যন্তরেও বেশির ভাগ ব্যবসা তাদের মাধ্যমেই হচ্ছে। এ অবস্থা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিধায় রোহিঙ্গাদের বিষয়টি নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। পাশাপাশি মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই।
No comments