মাজার-আস্তানা-সম্প্রীতির প্রতীক হোক সুরক্ষিত
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলায় 'ভণ্ড পীরের আস্তানা' গুঁড়িয়ে দেওয়ার যে সংবাদ সমকালের লোকালয় পাতায় ছোট করে ছাপা হয়েছে, সেটার কারণ ও প্রভাব বড়ও হতে পারে। আমরা জানি, বৃহৎ বঙ্গে ইসলাম ধর্মের প্রসার ঘটেছিল পীর-অলি প্রচারিত সুফিবাদের মাধ্যমে। তারা প্রেম ও ভক্তিবাদের লোকায়ত ধারায় ধর্মের যে মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক বাণী নিজেদের জীবন ও কর্মে মূর্ত করে তুলতেন, এই অঞ্চলের নিপীড়িত জনগোষ্ঠী তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল।
জীবদ্দশায় নিজেরা তো বটেই, পীর-আউলিয়াদের মৃত্যুর পরও তাদের মাজার ও দরবার অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হয়ে আছে। ভক্ত-শিষ্যরা এখনও তাদের প্রদর্শিত পথে ইহ ও পারলৌকিক মুক্তি অন্বেষণ করে থাকেন। একই সঙ্গে সাম্প্রতিককালে পীর ও মাজারবিরোধী প্রচারণাও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি আমরা। এর পেছনে রয়েছে চরমপন্থি একটি রাজনৈতিক শক্তি। তারা প্রধানত বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট এবং চিন্তা-চেতনায় হাজার বছরের বঙ্গীয় সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। বাংলাদেশের সহজ-সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ সংঘবদ্ধ ওই প্রচারণার লক্ষ্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সফলও হচ্ছে। ধলায় পীরের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে কি-না আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে বলব। বিরোধীরা ওই পীরের বিরুদ্ধে ভণ্ডামির যে অভিযোগ সামনে এনেছে, তার সত্যতা কীভাবে যাচাই হয়েছে? 'অসামাজিক' কার্যক্রমের সংজ্ঞাই-বা কীভাবে নির্ধারিত হয়েছে। ধর্মীয় মত ও পথের মধ্যে যে বিভাজন রয়েছে, তার প্রতি সবাইকে সম্মান দেখাতে হবে। এক পীরের অনুসারীর সঙ্গে অপর পীরের অনুসারীদের বিরোধ এ দেশে বিরল নয়। আবার যারা সামগ্রিকভাবে মাজারবিরোধী, তাদের মধ্যেও রাজনৈতিক বিভাজন দেখি আমরা। অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী পীরের বিরুদ্ধে এ ধরনের হঠকারী পদক্ষেপ নিতে সফল হলে তারা যেসব পীর-অলি ও মাজার উচ্ছেদে কোমর বাঁধবে না, তার নিশ্চয়তা কী? সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্নেও এ ধরনের নৈরাজ্য প্রশ্রয় দেওয়ার অবকাশ নেই। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, তাড়াইলের অঘটনে খোদ পুলিশও অংশ নিয়েছে। বর্তমান সরকার যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গে এটা কতখানি সঙ্গতিপূর্ণ পুলিশ কর্তাদের ভেবে দেখতে বলব আমরা। কারও ভুলে যাওয়া চলবে না, ধর্মীয় চরমপন্থার সীমারেখা বলে কিছু নেই। এর বিপজ্জনক দিক আমরা ইতিমধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে প্রত্যক্ষ করেছি।
No comments