মনুষ্যবিহীন যান!

প্রতিদিন কত বিচিত্র জিনিসই না উদ্ভাবিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে! তবে প্রযুক্তির কল্যাণে এবার তৈরি হলো তাক লাগানো এক গোয়েন্দা বিমান। মজার ব্যাপার হলো, এটি মনুষ্যবিহীন অবস্থায় চলবে এবং এর পাইলট থাকবেন ভূমিতে। এটি একনাগাড়ে ত্রিশ ঘণ্টা চলতে পারবে। যানটির নাম ইউরো হক। দীর্ঘ দশ বছরের পরিকল্পনা ও উন্নয়নের কাজ শেষে ২০১১ সালের অক্টোবরে জার্মান বিমানবাহিনী এ গোয়েন্দা বিমানটি প্রদর্শন করে। পাইলট কোনো এক বিমানঘাঁটিতে বসে


কম্পিউটার গেমের মতোই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৬০ হাজার ফুট উঁচুতে উড়তে সক্ষম। তবে শুধু ঘোরাঘুরিই এ বিমানটির কাজ নয়। ময়লা পরিষ্কারের যন্ত্র ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের সব তথ্য সংগ্রহ করতেও এটি বেশ পারদর্শী। বিমানটি যেমন কোনো শত্রুঘাঁটির ছবি কিংবা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারবে, তেমনি একেবারে ছেঁকে সংগ্রহ করবে কাঙ্ক্ষিত এলাকার টেলিফোন কল, মুঠোফোনে দেওয়া ক্ষুদে বার্তা, টেলিভিশন ও রেডিওতে প্রচারিত অনুষ্ঠানও। একই সঙ্গে সেসব তথ্য আবার পাঠিয়েও দেবে ভূমির নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। মনুষ্যবিহীন এ ড্রোন বিমানটি অনেকটাই মার্কিন গোয়েন্দা বিমানের মতো। এ বিমানগুলো এক দশক আগে দেশটি ব্যবহার শুরু করে। ইউরো হক দেখতে একই রকম হলেও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেকটাই আলাদা। এতে সংযুক্ত করা হয়েছে সেন্সর এবং নজরদারি ব্যবস্থা। তবে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৬০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে বিমানটি চললেও যাত্রীবাহী বাণিজ্যিক বিমানগুলোর জন্য কোনো বিড়ম্বনা সৃষ্টি করবে না। কারণ, বাণিজ্যিক বিমানগুলো সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়তে সক্ষম।
মনুষ্যবিহীন নতুন এ বিমানটি লম্বায় ১৪.৫ মিটার। তবে পাখাসহ ৪০ মিটার চওড়া। ওজন মাত্র ১৫ টন। এটি তৈরি করা হয়েছে কার্বন ফাইবার দিয়ে। মজার ব্যাপার হলো, একনাগাড়ে এটি ২৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে সক্ষম। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সেন্সর থাকায় মেঘাচ্ছন্ন আকাশ কিংবা বালুঝড়ের মধ্যেও এটি দিব্যি নজরদারি করতে পারবে। গোয়েন্দা বিমানটিতে জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলেও এটি তৈরি করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। ইউরোপিয়ান অ্যারোনটিক ডিফেন্স ও স্পেস কোম্পানি ইএডিএস এবং একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এটির ইউরোপীয় সংস্করণ তৈরি করেছে। গত বছরের জুলাইয়ে ইউরো হকের একটি নমুনা বিমান ১০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জার্মানির ম্যানশিং বিমানঘাঁটিতে পেঁৗছায়। মার্কিন এবং ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা এ গতিপথ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। ইতিমধ্যে এগারো পাইলটকে এ বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জার্মান বিমানবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল হোলগার নয়মান বলেন, বিমানটি এ বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে কাজে নামবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে সুসংহত হবে জার্মানের নিরাপত্তাও।
প্রদীপ সাহা

No comments

Powered by Blogger.