স্মরণ-তাঁর অবদান ভোলার নয় by মুহাম্মদ লুৎফুল হক
গত ১৯ ডিসেম্বর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদুর রহমান মজুমদার ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর তিরোধানের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বের অন্যতম পরিকল্পনাকারী বিদায় নিলেন। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারের কমান্ড্যান্ট (ইবিআরসি) ছিলেন। ওই সময় তিনিই পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরতদের মধ্যে সর্ব জ্যেষ্ঠ বাঙালি অফিসার ছিলেন ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী
লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের আশাভঙ্গ হয়। পর্দার আড়াল থেকে সামরিক বাহিনী আওয়ামী লীগ তথা বাঙালির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে, যদিও প্রকাশ্যে বিভিন্ন আলোচনা আর সলাপরামর্শ চলতে থাকে। সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছিল পরিস্থিতি ততই জটিল হতে থাকল।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে সেনা সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানের সব ফর্মেশনে অতি গোপনীয় চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সেনাবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাই আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে না। পূর্ব পাকিস্তানে ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ছিলেন একমাত্র বাঙালি ফর্মেশন কমান্ডার। সম্ভবত সেনা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খেয়াল করেনি, ফলে অতি গোপনীয় চিঠির একটি কপি তাঁর কাছে এসে পৌঁছে। বিষয়টি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবকে তৎক্ষণাৎ জানানো জরুরি মনে করলেন। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার আরও লক্ষ করেন, ফেব্রুযারি মাসের মাঝামাঝি থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদ আর সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওদিকে পাকিস্তান সেনা সদর দপ্তরে কর্মরত বাঙালি অফিসার ব্রিগেডিয়ার (পরবর্তী সময়ে মেজর জেনারেল) খলিলুর রহমানের কাছ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে পাকিস্তানিদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনারও আভাস পান। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ব্রিগেডিয়ার মজুমদার জেনারেল ওসমানীকে চট্টগ্রামে আসার অনুরোধ জানান।
কয়েক দিনের মধ্যে ওসমানী চট্টগ্রামে আসেন। ডবলমুরিংয়ে এম্বারকেশন ইউনিটে তিনি ও ব্রিগেডিয়ার মজুমদার অতি গোপনীয় চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা একমত হন যে সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার জেনারেল ওসমানীকে ওই মুহূর্তে চট্টগ্রামে অবস্থানরত বাঙালি-অবাঙালি সেনা ও অস্ত্র শক্তির তুলনামূলক হিসাব দেখিয়ে জানান, হুকুম পেলে বাঙালি সেনাদের নিয়ে পুরো চট্টগ্রামকে অতিসহজে তাঁরা কব্জায় আনতে পারবেন। ওসমানী ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের মতামতকে গুরুত্ব দিলেও কোনো ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া থেকে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন, তবে বিষয়টি শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী নির্দেশ জানাবেন বলে উল্লেখ করেন।
ব্রিগেডিয়ার মজুমদার লে. কর্নেল এম আর চৌধুরীর (২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের দ্বারা হত) মাধ্যমে মেজর (পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমান, ক্যাপ্টেন (পরবর্তী সময়ে মেজর) রফিকুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন (পরবর্তী সময়ে মেজর জেনারেল) আমিন আহমেদ চৌধুরীসহ বেশ কিছু বাঙালি অফিসারকে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করেন। তিনি অন্যান্য সেনানিবাসে অবস্থিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি কমান্ডারদেরও তারবার্তা পাঠিয়ে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার অনুরোধ করেন। এ ছাড়া তিনি ইবিআরসিতে রাখা দলিলপত্রের সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনাদের নাম, ঠিকানাসহ তালিকা তৈরি করেন।
মার্চ মাসের শুরু থেকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। অপরদিকে সামরিক জান্তারাও আক্রমণের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখে। জেনারেল ওসমানীর কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ব্রিগেডিয়ার মজুমদার অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনাদের তালিকাসহ ক্যাপ্টেন আমিনকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য গোপনে ঢাকা পাঠান। ক্যাপ্টেন আমিন জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের ভাইয়ের বাসায় কাগজগুলো রেখে চট্টগ্রামে ফেরত আসেন। জেনারেল ওসমানী পরবর্তী সময়ে কাগজগুলো সংগ্রহ করেন।
অসহযোগ আন্দোলনকালে চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গা শুরু হলে বাঙালি ছাত্রনেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী (পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের মেয়র) ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের শরণাপন্ন হন। তিনি ইটের জবাব পাটকেলে দিতে বলেন। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার পাকিস্তান গমনে প্রস্তুত প্রায় অস্ত্রহীন ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে প্রশিক্ষণের নামে ইবিআরসি থেকে কর্জে রাইফেল ও গুলি দিয়ে আসন্ন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখেন, যাতে তাঁরা প্রয়োজনের মুহূর্তে তা ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রিগেডিয়ার মজুমদার আসন্ন যুদ্ধের জন্য চট্টগ্রামে সংগঠিত হতে থাকেন আর অপেক্ষা করতে থাকেন জেনারেল ওসমানীর মাধ্যমে শেখ মুজিবের আদেশের জন্য। তিনি ওসমানীকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনা ও ভারী অস্ত্র নিয়ে আসার সংবাদও নিয়মিতভাবে জানান। জবাবে জেনারেল ওসমানী রাজনৈতিক সমাধান আসন্ন বলে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে আশ্বস্ত করেন।
পাকিস্তানি সেনাদের অভিযানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে ২৪ মার্চ সেনা কর্তৃপক্ষ কৌশলে বা ধাপ্পা দিয়ে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা তুলে নিয়ে যায়। চূড়ান্ত আক্রমণ আসন্ন বুঝতে পেরে ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ঢাকা পৌঁছেই আবারও শেষ চেষ্টা করেন, যাতে শেখ মুজিব চট্টগ্রামে গিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ওসমানী ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে শেখ মুজিবের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার কারণে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় প্রস্তাবটি নিয়ে জেনারেল ওসমানী একাই শেখ মুজিবের কাছে যান। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও ওসমানী বা নির্দেশ কোনোটাই এল না, তিনি ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে এলেন।
পাকিস্তানি বাহিনী ওই রাতেই সারা দেশে হামলা শুরু করে। ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে রাতেই গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁকেও দেশদ্রোহী মামলার আসামি করা হয় এবং সারা বছর তাঁর ওপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের নির্যাতন চলতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ডিসেম্বর মাসে বন্দী অবস্থা থেকে ছাড়া পান এবং অন্যান্য বাঙালি সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে আটক থাকেন। ১৯৭৩ সালে দেশে ফেরত আসেন তিনি।
ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ১৯২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৯ সালের ৩০ জুলাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাঞ্জাব রেজিমেন্টে কমিশন পান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি চাকরি থেকে অকালীন অবসরে যান।
মুহাম্মদ লুৎফুল হক: লেখক ও গবেষক
lutful55@gmail.com
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে সেনা সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানের সব ফর্মেশনে অতি গোপনীয় চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সেনাবাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাই আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে না। পূর্ব পাকিস্তানে ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ছিলেন একমাত্র বাঙালি ফর্মেশন কমান্ডার। সম্ভবত সেনা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খেয়াল করেনি, ফলে অতি গোপনীয় চিঠির একটি কপি তাঁর কাছে এসে পৌঁছে। বিষয়টি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবকে তৎক্ষণাৎ জানানো জরুরি মনে করলেন। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার আরও লক্ষ করেন, ফেব্রুযারি মাসের মাঝামাঝি থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদ আর সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওদিকে পাকিস্তান সেনা সদর দপ্তরে কর্মরত বাঙালি অফিসার ব্রিগেডিয়ার (পরবর্তী সময়ে মেজর জেনারেল) খলিলুর রহমানের কাছ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে পাকিস্তানিদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনারও আভাস পান। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ব্রিগেডিয়ার মজুমদার জেনারেল ওসমানীকে চট্টগ্রামে আসার অনুরোধ জানান।
কয়েক দিনের মধ্যে ওসমানী চট্টগ্রামে আসেন। ডবলমুরিংয়ে এম্বারকেশন ইউনিটে তিনি ও ব্রিগেডিয়ার মজুমদার অতি গোপনীয় চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁরা একমত হন যে সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার জেনারেল ওসমানীকে ওই মুহূর্তে চট্টগ্রামে অবস্থানরত বাঙালি-অবাঙালি সেনা ও অস্ত্র শক্তির তুলনামূলক হিসাব দেখিয়ে জানান, হুকুম পেলে বাঙালি সেনাদের নিয়ে পুরো চট্টগ্রামকে অতিসহজে তাঁরা কব্জায় আনতে পারবেন। ওসমানী ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের মতামতকে গুরুত্ব দিলেও কোনো ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া থেকে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন, তবে বিষয়টি শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী নির্দেশ জানাবেন বলে উল্লেখ করেন।
ব্রিগেডিয়ার মজুমদার লে. কর্নেল এম আর চৌধুরীর (২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের দ্বারা হত) মাধ্যমে মেজর (পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমান, ক্যাপ্টেন (পরবর্তী সময়ে মেজর) রফিকুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন (পরবর্তী সময়ে মেজর জেনারেল) আমিন আহমেদ চৌধুরীসহ বেশ কিছু বাঙালি অফিসারকে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ করেন। তিনি অন্যান্য সেনানিবাসে অবস্থিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি কমান্ডারদেরও তারবার্তা পাঠিয়ে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার অনুরোধ করেন। এ ছাড়া তিনি ইবিআরসিতে রাখা দলিলপত্রের সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনাদের নাম, ঠিকানাসহ তালিকা তৈরি করেন।
মার্চ মাসের শুরু থেকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। অপরদিকে সামরিক জান্তারাও আক্রমণের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখে। জেনারেল ওসমানীর কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ব্রিগেডিয়ার মজুমদার অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনাদের তালিকাসহ ক্যাপ্টেন আমিনকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য গোপনে ঢাকা পাঠান। ক্যাপ্টেন আমিন জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের ভাইয়ের বাসায় কাগজগুলো রেখে চট্টগ্রামে ফেরত আসেন। জেনারেল ওসমানী পরবর্তী সময়ে কাগজগুলো সংগ্রহ করেন।
অসহযোগ আন্দোলনকালে চট্টগ্রামের কোথাও কোথাও বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গা শুরু হলে বাঙালি ছাত্রনেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী (পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের মেয়র) ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের শরণাপন্ন হন। তিনি ইটের জবাব পাটকেলে দিতে বলেন। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার পাকিস্তান গমনে প্রস্তুত প্রায় অস্ত্রহীন ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে প্রশিক্ষণের নামে ইবিআরসি থেকে কর্জে রাইফেল ও গুলি দিয়ে আসন্ন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখেন, যাতে তাঁরা প্রয়োজনের মুহূর্তে তা ব্যবহার করতে পারেন।
ব্রিগেডিয়ার মজুমদার আসন্ন যুদ্ধের জন্য চট্টগ্রামে সংগঠিত হতে থাকেন আর অপেক্ষা করতে থাকেন জেনারেল ওসমানীর মাধ্যমে শেখ মুজিবের আদেশের জন্য। তিনি ওসমানীকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনা ও ভারী অস্ত্র নিয়ে আসার সংবাদও নিয়মিতভাবে জানান। জবাবে জেনারেল ওসমানী রাজনৈতিক সমাধান আসন্ন বলে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে আশ্বস্ত করেন।
পাকিস্তানি সেনাদের অভিযানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে ২৪ মার্চ সেনা কর্তৃপক্ষ কৌশলে বা ধাপ্পা দিয়ে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে হেলিকপ্টারে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা তুলে নিয়ে যায়। চূড়ান্ত আক্রমণ আসন্ন বুঝতে পেরে ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ঢাকা পৌঁছেই আবারও শেষ চেষ্টা করেন, যাতে শেখ মুজিব চট্টগ্রামে গিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ওসমানী ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে শেখ মুজিবের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার কারণে ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় প্রস্তাবটি নিয়ে জেনারেল ওসমানী একাই শেখ মুজিবের কাছে যান। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও ওসমানী বা নির্দেশ কোনোটাই এল না, তিনি ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে এলেন।
পাকিস্তানি বাহিনী ওই রাতেই সারা দেশে হামলা শুরু করে। ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে রাতেই গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁকেও দেশদ্রোহী মামলার আসামি করা হয় এবং সারা বছর তাঁর ওপর সেনাবাহিনী ও পুলিশের নির্যাতন চলতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ডিসেম্বর মাসে বন্দী অবস্থা থেকে ছাড়া পান এবং অন্যান্য বাঙালি সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে আটক থাকেন। ১৯৭৩ সালে দেশে ফেরত আসেন তিনি।
ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ১৯২৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৯ সালের ৩০ জুলাই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাঞ্জাব রেজিমেন্টে কমিশন পান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি চাকরি থেকে অকালীন অবসরে যান।
মুহাম্মদ লুৎফুল হক: লেখক ও গবেষক
lutful55@gmail.com
No comments