বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কে? by হায়দার আকবর খান রনো
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বিরুদ্ধে সরকার ও সরকারদলীয় লোকজন যে যথেষ্ট খাপ্পা হয়েছেন তা বোঝাই যাচ্ছে। তারা কেবল মিছিলের ওপর আক্রমণ করে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদসহ অর্ধশতাধিক মিছিলকারীকেই আহত করেননি, এখন জাতীয় কমিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচারেও নেমেছেন। তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটি সরকারের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছে।
সরকার যে আমাদের গ্যাসসম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিয়ে সেই গ্যাস বিদেশে রফতানির জন্য অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, এটাই ফাঁস করে দিয়েছে জাতীয় কমিটি। ফলে এ জাতীয় কমিটির ওপর খাপ্পা হওয়াটা স্বাভাবিক। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সবাই কোমর বেঁধে নেমেছেন। তারা সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানাতে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। সমুদ্রবক্ষের তিনটি গ্যাস ক্ষেত্রকে তারা দুটি বিদেশি কোম্পানির কাছে লিজ দিতে চলেছেন এমন শর্তে যাতে ওই দুটি কোম্পানি ৮০ শতাংশ গ্যাস দখলে নিয়ে বিদেশে পাচার করতে পারবে। জাতীয় কমিটি এ তথ্যটি জনসম্মুখে তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলছে। এখন সরকার বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বিষয়ে একেবারে মনগড়া মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে পাল্টা জাতীয় কমিটির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ এনেছে। এই রচনায় দেখার চেষ্টা করব আসলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কে? জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া সাংবাদিকদের সামনে বললেন, চুক্তির খসড়ায় নাকি গ্যাস রফতানির কোনো বিধান নেই। অধিকাংশ মানুষের এই চুক্তি সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার জন্য তিনি যা খুশি বলে অপপ্রচারের সুযোগ পাচ্ছেন। অপপ্রচার শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। সরকারের আরেক কর্মকর্তা প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন তাজ এক ডিগ্রি এগিয়ে গিয়ে জাতীয় কমিটির নেতৃত্বকে বিদেশের এজেন্ট বলতেও ছাড়েননি। যে সরকার ও যে আওয়ামী লীগ এখন বিদেশি প্রভুকে খুশি করতে বহুজাতিক কোম্পানির হাতে আমাদের জাতীয় সম্পদ তুলে দিচ্ছে, যারা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদেশের দালাল বলেই পরিচিত হবেন, তারাই নাকি উল্টো অপবাদ দিচ্ছেন তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে, যারা জাতীয় সম্পদ রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছেন। একেই বলে চোরের মার বড় গলা। প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন তাজের গলাটা একটু বেশি বড়। তিনি জাতীয় কমিটির নেতৃত্বের পাসপোর্ট দেখার সুপারিশ পর্যন্ত করেছেন। অর্থাৎ জাতীয় কমিটির নেতারা কোন কোন দেশ ভ্রমণ করেছেন, সেটা তদন্ত করে দেখা দরকার। প্রথমে এই মন্ত্রী সম্পর্কে দুটো কথা বলে রাখা দরকার। এই মন্ত্রী মনে করেন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ নাকি প্রধানত করেছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। অর্থাৎ তার বিবেচনায় মুক্তিযুদ্ধে জনগণের ভূমিকা বা রাজনৈতিক ভূমিকা ছিল গৌণ। সংসদে এমন কথা বলার পর তিনি নিজ দলীয় সংসদ সদস্যদের কাছ থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। সেই মন্ত্রী এখন জাতীয় কমিটির নেতৃত্বের দেশপ্রেমের প্রতি কটাক্ষ করার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন। যাদের নিজেদের টিকিটা বাঁধা রয়েছে অন্যত্র, যারা বিদেশির স্বার্থরক্ষা করতে গ্যাসসম্পদ তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন, তাদের মুখে অন্যের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা ডবল অপরাধ বলে আমি মনে করি। ক্যাপ্টেন তাজের কথাকে আমি খুব একটা মূল্য দিই না। তবে তার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করলাম এটা বোঝানোর জন্য যে, সরকার কী ধরনের অপপ্রচারে নেমেছে। এবার আসা যাক মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে। বস্তুত জেনারেল সুবিদ আলী ভূঁইয়ার কোনো পরিষ্কার ধারণাই নেই মডেল পিএসসি-২০০৮ প্রসঙ্গে। টেলিভিশনে তার যে বক্তব্য শুনলাম তাতে মনে হলো তিনি পিএসসি শব্ধটির মানেও ঠিকমতো জানেন না। কারণ তিনি পিএসসি শব্ধটি ভেঙে বলার সময় ভুল শব্ধ উল্লেখ করেছিলেন। মনে হয় তাকে যা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে সেটাই তিনি বলেছেন দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে। প্রথম কথা, চুক্তিটি কী হচ্ছে তার কিছুই আমরা জানি না। তবে কেন আমরা গ্যাস রফতানির অভিযোগ আনলাম? কারণ আমরা এইটুকু জানি যে, চুক্তিটি হতে যাচ্ছে ২০০৮ সালের মডেল পিএসসির ভিত্তিতে। সেই মডেল পিএসসিটি তদানীন্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুমোদন করেছিল। সেই মডেল পিএসসির (২০০৮ সালের) বিষয়বস্তু ওয়েবসাইটে আছে। ফলে ২০০৮ সালের মডেল পিএসসি আমরা দেখেছি। সেখানে ধূর্ততার সঙ্গে লিখিত হলেও এটা পরিষ্কার যে, গ্যাস অনুসন্ধানকারী বিদেশি কোম্পানিকে তাদের অংশ ৮০ শতাংশ রফতানি করার সুযোগ দেয়া হবে। মডেল পিএসসির ধারাগুলো উল্লেখ করে এর আগে অনেক লেখা হয়েছে। আমি নিজেও লিখেছি। এখানে জনগণকে বোকা বানানোর কোনো জায়গা নেই। মডেল পিএসসি ২০০৮ সুষ্ঠুভাবেই গ্যাস রফতানির সুযোগ রেখে দিয়েছে; কিন্তু গোয়েবলসীয় পদ্ধতি অনুসরণ করে সরকার ও সরকারদলীয় কর্মকর্তারা নিজেরাই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। চুক্তি করতে চলেছেন এক রকম আর মুখে বলছেন অন্যটা। মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভূঁইয়ার বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের জবাবে তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মহম্মদ শহীদুল্লাহ যে বক্তব্য রেখেছেন তার থেকে কিছুটা উদ্ধৃত করছি। 'অধিকাংশ জনগণের মনে চুক্তির শর্ত সম্পর্কে সুসপষ্ট ধারণা না থাকার সুযোগ নিয়ে সরকার ও বহুজাতিক কোম্পানি জাতীয় কমিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। প্রকৃত সত্য এই যে, চুক্তিতে আক্ষরিকভাবে লেখা না থাকলেও চুক্তির শর্তের কারণেই ১০০% গ্যাস পাচার অনিবার্য হয়ে যাবে। শুধু পেতে পারি আমাদের অংশের অর্থাৎ সর্বোচ্চ ২০ ভাগ গ্যাসের বিনিময় মূল্য, তাও গভীর সাগরে কেনা-বেচাতে কন্ট্রাক্টর বহুজাতিক কোম্পানি যে সামান্য মূল্য দিতে রাজি হবেন তাই পাব। ... চুক্তিতে আছে কন্ট্রাক্টরের অংশ যদি আমরা কিনতে চাই কন্ট্রাক্টর তা বেচতে বাধ্য। না কিনতে পারলে বা কিনতে না চাইলে কন্ট্রাক্টর তরলায়িত করে রফতানি করতে পারবে। এর মধ্যেই লুকানো আছে প্রকান্ড ঠগবাজি।' হ্যাঁ, আমরা অবশ্যই কোম্পানির যে অংশ রয়েছে তা চড়াদামে আন্তর্জাতিক মূল্যে কিনতে পারি। অর্থাৎ কোম্পানি যে গ্যাস তরলায়িত করে বিদেশে বিক্রি করবে, আমরা ইচ্ছা করলে ক্রেতা হতে পারি। অর্থাৎ আমরা আমাদেরই গ্যাস তরলায়িত আকারে কিনতে পারি। নিজের পয়সা খরচ করে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ক্রয় করার অধিকার মাত্র আছে। তাহলে মোদ্দা কথা দাঁড়াচ্ছে, গ্যাসের ওপর আমাদের অধিকার নেই। আমাদের যে অংশ ২০ শতাংশ তা অবশ্য আমরা পাইপ লাইন বসিয়ে স্থলভাগে আনতে পারি; কিন্তু পিএসসি মডেলে কন্ট্রাক্টর কোম্পানির জন্য বাধ্যবাধকতা নেই যে, তারা পাইপলাইন তৈরি করে দেবে। তাহলে আমাদের অংশটুকু আনতে হলেও আমাদের নিজ খরচে সাগরবক্ষে পাইপলাইন বসাতে হবে। এ জন্য দেড়শ' মাইল দূরত্বে বহু সাপোর্ট পিলার বসাতে হবে। সুনামি ও সাইক্লোন প্রতিহত করার জন্য পিলারগুলোকে যথেষ্ট মজবুত করতে হবে। এটা খুবই ব্যয়বহুল। ফলে আমরা ওই অংশটুকুও বিদেশে রফতানি করতে বাধ্য হবো। তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, 'এই কাজ এত ব্যয়বহুল ও কারিগরিভাবে জটিল যে, আমাদের জন্য তা বর্তমানে অসম্ভব। তাই কন্ট্রাক্টরের অংশও আমাদের কাছে বিক্রির প্রস্তাব একটি নিদারুণ রসিকতা। সার কথা, কন্ট্রাক্টরের অংশ এবং সামান্য পয়সার বিনিময়ে আমাদের অংশ অর্থাৎ সম্পূর্ণ ১০০ ভাগ গ্যাস রফতানি তথা পাচার হয়ে যাবে।' এখন যে প্রশ্নগুলো সাধারণত সাম্রাজ্যবাদ তথা বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির দালালরা উত্থাপন করেন, সেগুলো খুঁটিয়ে দেখা যাক। তারা বলেন, আমাদের টাকা নেই, প্রযুক্তি নেই তাই বিদেশিদের লোভ দেখিয়ে আনতে হবে। আর বিদেশি কোম্পানি লাভের মুখ না দেখলে আসবেই-বা কেন? উপরন্তু তারা একটা ঝুঁকি নিচ্ছে, অনুসন্ধানের পর গ্যাস নাও পাওয়া যেতে পারে ইত্যাদি। প্রশ্নগুলো একটা একটা করে বিবেচনা করে দেখা যাক। আমাদের অর্থ নেই, প্রযুক্তি নেই সেই অজুহাতে প্রায় পুরো সম্পদ বিদেশিদের কাছে সামান্য ক'টা টাকার বিনিময়ে দিয়ে দেয়া যে মূর্খতার সমান তা একমাত্র বিদেশি দালাল ছাড়া সবাই স্বীকার করবেন। যেমন-কয়লার ক্ষেত্রে মাইনিং অ্যাক্ট আছে যে, কোম্পানি পাবে উত্তোলিত কয়লার ৯৫ বা ৯৬ শতাংশ। আমাদের ৫ অথবা ৬ শতাংশ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এর চেয়ে কয়লা উত্তোলন না করাই ভালো। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের সম্পদ রিজার্ভ থাক। পাঁচ কী দশ বছর পর আমাদের পরবর্তী শিক্ষিত প্রজন্ম কয়লা উত্তোলনের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করবে। তখন বাংলাদেশ তার পুরো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মালিকানা রক্ষা করতে পারবে। স্থলভাগে গ্যাস উত্তোলনের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও অতীতের ভালো রেকর্ড আমাদের আছে। অতএব স্থলভাগে কোনোভাবেই বিদেশি কোম্পানি ডেকে আনা চলবে না। হাইকোর্টও তাই এ মর্মে রায় দিয়েছেন। গভীর সমুদ্রে আমরা এখনও গ্যাস উত্তোলন করার মতো আর্থিক ও প্রযুক্তিগত যোগ্যতা অর্জন করিনি। তাই বিদেশি কোম্পানিকে ডাকতে হচ্ছে; কিন্তু কী শর্তে? দেশপ্রেমিক জনগণের প্রস্তাব, চুক্তির প্রথমেই উল্লেখ থাকবে যে, গ্যাস রফতানি করা হবে না। এরপর আমরা কোম্পানির অনুসন্ধান ও উত্তোলন খরচ এবং ঝুঁকির জন্য কিছু পরিমাণ হিসেবে রেখে এবং কিছুটা ন্যায়সঙ্গত মুনাফা ধরে নতুনভাবে দরপত্র সাজাতে পারি। দেখা যাক, তখন কোন বিদেশি কন্ট্রাক্টর সবচেয়ে কমে সম্মত হয়। এ কথা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, একেবারে গ্যাস পাচারের কোনো সম্ভাবনা না থাকলে কোন কোম্পানি এখানে ঝুঁকি নিতে আসবে। তাদের আগের থেকেই যথেষ্ট ষ্টাডি আছে। সাগরবক্ষ থেকে পাইপলাইনে গ্যাস পরিবহনের খরচও কোম্পানিকে করতে হবে, পিএসসিতে এমন শর্তও জুড়ে দিতে হবে। এক কথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রণীত মডেল পিএসসি বাতিল করে উপরোক্ত শর্তের ভিত্তিতে নতুন পিএসসি প্রণয়ন ও নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা দরকার। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগের ঘোষণা '৫০ বছরের মজুত না রেখে গ্যাস রফতানি হবে না' তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। এখন যেভাবে দুটি বিদেশি কোম্পানিকে (কনোকো ফিলিপস ও তাল্লো) অতি তড়িঘড়ি করে, জনগণের কাছ থেকে গোটা বিষয়কে আড়াল করে এবং ধরা পড়ে যাওয়ার পর মিথ্যা কথা বলে গ্যাসক্ষেত্র ইজারা দেয়ার চক্রান্ত চলছে, তা একদিকে শেখ হাসিনার নিজস্ব অঙ্গীকারের বরখেলাপ, অন্যদিকে তা জাতীয় বেঈমানির পর্যায়ে পড়ে। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির আরেকটি দিকও একই সঙ্গে ধরা পড়ে। আমরা সমুদ্রের ব্লক বিদেশিদের দিচ্ছি; কিন্তু সমুদ্রের যেসব অংশ ভারত বা মিয়ানমার দাবি করে বসে আছে (ন্যায় বা অন্যায়ভাবে), সেসব অংশে যে আমরা গ্যাস অনুসন্ধানের চেষ্টা চালাব না, তা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ আপত্তি করলে আমরা গ্যাস উত্তোলন থেকে সরে আসব, বিরোধে জড়াব না। এটা প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধে জড়ানোর বিষয় নয়। এটা হলো আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিজস্ব সম্পদের ওপর মালিকানা রক্ষার বিষয়। কিছুদিন আগে সাম্রাজ্যবাদের দালালরা এই যুক্তি দিয়েছিলেন যে, বিদেশি কোম্পানিকে সমুদ্রের ব্লক ইজারা দেয়া হচ্ছে সমুদ্রে আমাদের দাবিকে নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তারা এখন চুপ হয়ে গেছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই তাদের কথার জবাব দিয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদ ও বহুজাতিক কোম্পানির এবং তাদের দালালদের ছলচাতুরির ও কু-যুক্তির অভাব নেই। আমরা চাই সব যুক্তি (অথবা কুযুক্তি, যাই-ই থাকুক) ও তথ্য প্রকাশ্যে আসুক। প্রকাশ্যে আলোচিত হোক। পার্লামেন্টে চুক্তির বিষয়গুলো উত্থাপিত হোক। মহাজোটের অংশ হয়েও কোনো কোনো সংসদ সদস্য এ দাবি করেছেন। সংসদকে সব কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু করার ঘোষণা দেয়ার পরও সরকার কেন সংসদকে এড়িয়ে যাচ্ছে? কেন সংসদে আলোচিত হচ্ছে না? ভয় কি এই যে, তাহলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়বে? পাঠকরা, এর উত্তর আপনাদের বিবেচনার ওপরই ছেড়ে দিতে চাই। বলুন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কে? তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি? নাকি সরকার নিজেই? সেই সরকার যারা এখনও পর্যন্ত সবকিছু গোপনে রেখে তড়িঘড়ি করে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে এত বড় জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি করতে যাচ্ছে? মনের মধ্যে কালো আছে বলেই এত গোপনীয়তা, এত তড়িঘড়ি। পেট্রোবাংলা ও সরকার কার স্বার্থরক্ষা করছে, দেশের না বিদেশি প্রভুর?
No comments