ইসলাম ও সর্বজনীন মানবাধিকার by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
ইসলামে সর্বজনীন মানবাধিকারের বিষয়টি জীবনের সর্বক্ষেত্র ও বিভাগে পরিব্যাপ্ত। ইসলাম মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবময় অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে। মানুষকে সাম্য, মৈত্রী, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের মর্মবাণী শুনিয়ে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব, বংশীয় মর্যাদা, শ্রেণীবৈষম্য ও বর্ণপ্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে। অধীনদের প্রতি সদাচারী ও ন্যায়পরায়ণ হতে শিক্ষা দিয়েছে। আরব-অনারব, সাদা-কালো সবাই একই পিতা-মাতা হজরত আদম (আ.) ও বিবি হাওয়া (আ.)-এর সন্তান। মানুষের মধ্যে মর্যাদার কোনো পার্থক্য হতে পারে না। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানবজাতির সম্মান ও মর্যাদার অধিকার, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি জীবনযাত্রার মৌলিক অধিকার, ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার, জীবনরক্ষণ ও সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, একতা, সংঘবদ্ধ ও সাম্যের অধিকার, হালাল উপার্জনের অধিকার, এতিম, মিসকিন, অসহায় নারী ও শিশুর অধিকার, প্রতিবেশীর অধিকার, কৃষক-শ্রমিকের অধিকার, প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রভৃতি সব ব্যাপারেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ও কালজয়ী চিরন্তন আদর্শ হিসেবে ইসলাম মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।
জাতিসংঘের ঘোষণারও প্রায় ১৪০০ বছর আগে ইসলাম মানবসমাজের সর্বজনীন মানবাধিকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রদান করেছে। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ জুমার দিন পবিত্র আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের পাদদেশে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের যে অবিস্মরণীয় ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ছিল সর্বজনীন মানবাধিকারের একটি ঐতিহাসিক দলিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) জনসমুদ্রে ঘোষণা করেছিলেন, ‘ওহে লোকেরা! অবশ্যই তোমাদের প্রতিপালক এক এবং তোমাদের পিতাও এক; সুতরাং কোনো আরবের কোনো অনারবের ওপর প্রাধান্য নেই। শ্বেতবর্ণের লোকের কালো বর্ণের লোকের ওপর এবং কালো বর্ণের লোকের শ্বেতবর্ণের লোকের ওপর কোনোই প্রাধান্য নেই; কিন্তু তাকওয়া ও পরহেজগারী হলো মর্যাদার একমাত্র মানদণ্ড।’ তারপর তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বললেন, ‘মনে রেখো! প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই, সবাই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ। কেউ কারও থেকে ছোট নও, কারও চেয়ে বড় নও। আল্লাহর চোখে সবাই সমান। নারী জাতির কথা ভুলে যেয়ো না। নারীর ওপর পুরুষের যেমন অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও তেমন অধিকার আছে। তাদের প্রতি অত্যাচার করো না। মনে রেখো! আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের গ্রহণ করেছ। সাবধান! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করো না। এ বাড়াবাড়ির কারণে অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।’
সর্বপ্রথম ইসলাম মানুষের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করেছে। মুসলিম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, বহিরাক্রমণ বা অন্য যেকোনো ধরনের বিপদ থেকে নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। ইসলাম সব মানুষের বৈধভাবে সম্পদ অর্জন, আয়-ব্যয়, ভোগ ও সঞ্চয়ের অধিকার দিয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র নাগরিকের সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করবে। নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের পর অমুসলিমদের জানমাল রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। কোনো মানুষের ধন-সম্পদ জোরপূর্বক দখল বা আত্মসাৎ করা ইসলামসম্মত নয়। ইসলাম মানুষের ইজ্জত ও সম্মানের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নানা বিধিব্যবস্থা প্র্রবর্তন করেছে। পরনিন্দা, অন্যায়-অত্যাচার, মিথ্যা অপবাদ, কুৎসা রটনা প্রভৃতিকে হারাম ঘোষণা করেছে। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যার প্রতি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করলো; আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করলো।’ (সূরা আল মায়িদা, আয়াত-৩২)
ইসলামে সব মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কার্যকলাপ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে কোনো ধরনের বাধাবিঘ্ন নেই। সব ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ের রক্ষণাবেক্ষণের সুবন্দোবস্ত রয়েছে। কখনো ভিন্নধর্মাবলম্বীদের জোরপূর্বক ইসলামে দীক্ষিত করা যাবে না এবং তাদের ধর্মীয় কাজে কটাক্ষ করা যাবে না। মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম ও সংখ্যালঘুদের সম-অধিকার ইসলাম প্রদান করেছে। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান ‘মদীনা সনদ’-এর একটি বিশেষ ধারায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদার সর্বজনীন ঘোষণা রয়েছে, ‘মদীনায় বসবাসরত ইহুদী, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক এবং মুসলমান সবাই একদেশী এবং সবাই সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে। সব ধর্মের লোক স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না। এমনকি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুমতি ব্যতীত কারো সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারবে না। মদীনা নগরী বহিঃশত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে সবাই সম্মিলিতভাবে শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করবে। নিজেদের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফয়সালা মেনে নিতে হবে।’ মানবাধিকারের রক্ষাকবচ ‘মদীনা সনদ’ প্রদান করে নবী করিম (সা.) মদীনায় বসবাসরত বহুমাত্রিক ধর্মাবলম্বী ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমানদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ইসলামে নারী-পুরুষদের উভয়ের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে। স্বামী যা উপার্জন করবে, তা তার অধিকারে থাকবে আর স্ত্রী যা কিছু উপার্জন করবে, তা তার অধিকারে থাকবে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারীরাও পুরুষদের ন্যায় সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। ইসলামের সম্পদ বণ্টনব্যবস্থায় নারীরা তাদের মৃত পিতা-মাতা, স্বামী ও সন্তানদের একটি নির্দিষ্ট অংশ ভোগ করতে পারবে।
নবী করিম (সা.) যখন মদীনাকেন্দ্রিক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তথায় নাগরিকদের সর্বপ্রকার মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করেন। মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সম্পদের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ইসলাম জাকাত, উত্তরাধিকার, খারাজ প্রভৃতি বিধান প্রবর্তন করেছে এবং দান-সাদকার প্রতি উৎসাহিত করেছে। সক্ষম লোকদের ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি নিরুৎসাহিত করেছে। ইসলাম সমাজের ধনী লোকের সম্পদে এতিম-মিসকিন, দুস্থ ও অসহায়দের অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। তাই দরিদ্রদের সঙ্গে সর্বাবস্থায় সদ্ব্যবহার করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের (ধনী) সম্পদে প্রার্থী (গরিব) ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আল-যারিআত, আয়াত-১৯)
এমনিভাবে ইসলামে মানবজাতির গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সর্বক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক জীবনবিধান ও আইনকানুন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবাধিকার সংরক্ষণের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করা হয়েছে। যখন সমাজে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বিধান ও ধর্মীয় অনুশাসন পরিপূর্ণরূপে পালিত হবে এবং সামগ্রিকভাবে তা বাস্তবায়িত হবে, তখন মানুষ আর অধিকারবঞ্চিত থাকবে না।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
জাতিসংঘের ঘোষণারও প্রায় ১৪০০ বছর আগে ইসলাম মানবসমাজের সর্বজনীন মানবাধিকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রদান করেছে। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে জিলহজ মাসের ৯ তারিখ জুমার দিন পবিত্র আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতের পাদদেশে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের যে অবিস্মরণীয় ভাষণ দিয়েছিলেন, তা ছিল সর্বজনীন মানবাধিকারের একটি ঐতিহাসিক দলিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) জনসমুদ্রে ঘোষণা করেছিলেন, ‘ওহে লোকেরা! অবশ্যই তোমাদের প্রতিপালক এক এবং তোমাদের পিতাও এক; সুতরাং কোনো আরবের কোনো অনারবের ওপর প্রাধান্য নেই। শ্বেতবর্ণের লোকের কালো বর্ণের লোকের ওপর এবং কালো বর্ণের লোকের শ্বেতবর্ণের লোকের ওপর কোনোই প্রাধান্য নেই; কিন্তু তাকওয়া ও পরহেজগারী হলো মর্যাদার একমাত্র মানদণ্ড।’ তারপর তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বললেন, ‘মনে রেখো! প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই, সবাই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ। কেউ কারও থেকে ছোট নও, কারও চেয়ে বড় নও। আল্লাহর চোখে সবাই সমান। নারী জাতির কথা ভুলে যেয়ো না। নারীর ওপর পুরুষের যেমন অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও তেমন অধিকার আছে। তাদের প্রতি অত্যাচার করো না। মনে রেখো! আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের গ্রহণ করেছ। সাবধান! ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করো না। এ বাড়াবাড়ির কারণে অতীতে বহু জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।’
সর্বপ্রথম ইসলাম মানুষের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করেছে। মুসলিম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, বহিরাক্রমণ বা অন্য যেকোনো ধরনের বিপদ থেকে নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে। ইসলাম সব মানুষের বৈধভাবে সম্পদ অর্জন, আয়-ব্যয়, ভোগ ও সঞ্চয়ের অধিকার দিয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র নাগরিকের সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করবে। নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয়ের পর অমুসলিমদের জানমাল রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। কোনো মানুষের ধন-সম্পদ জোরপূর্বক দখল বা আত্মসাৎ করা ইসলামসম্মত নয়। ইসলাম মানুষের ইজ্জত ও সম্মানের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নানা বিধিব্যবস্থা প্র্রবর্তন করেছে। পরনিন্দা, অন্যায়-অত্যাচার, মিথ্যা অপবাদ, কুৎসা রটনা প্রভৃতিকে হারাম ঘোষণা করেছে। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যার প্রতি কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করলো; আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করলো।’ (সূরা আল মায়িদা, আয়াত-৩২)
ইসলামে সব মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কার্যকলাপ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে কোনো ধরনের বাধাবিঘ্ন নেই। সব ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ের রক্ষণাবেক্ষণের সুবন্দোবস্ত রয়েছে। কখনো ভিন্নধর্মাবলম্বীদের জোরপূর্বক ইসলামে দীক্ষিত করা যাবে না এবং তাদের ধর্মীয় কাজে কটাক্ষ করা যাবে না। মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম ও সংখ্যালঘুদের সম-অধিকার ইসলাম প্রদান করেছে। ইসলামের ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান ‘মদীনা সনদ’-এর একটি বিশেষ ধারায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদার সর্বজনীন ঘোষণা রয়েছে, ‘মদীনায় বসবাসরত ইহুদী, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক এবং মুসলমান সবাই একদেশী এবং সবাই সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে। সব ধর্মের লোক স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না। এমনকি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুমতি ব্যতীত কারো সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারবে না। মদীনা নগরী বহিঃশত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে সবাই সম্মিলিতভাবে শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করবে। নিজেদের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ফয়সালা মেনে নিতে হবে।’ মানবাধিকারের রক্ষাকবচ ‘মদীনা সনদ’ প্রদান করে নবী করিম (সা.) মদীনায় বসবাসরত বহুমাত্রিক ধর্মাবলম্বী ইহুদি, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমানদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ইসলামে নারী-পুরুষদের উভয়ের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে। স্বামী যা উপার্জন করবে, তা তার অধিকারে থাকবে আর স্ত্রী যা কিছু উপার্জন করবে, তা তার অধিকারে থাকবে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী নারীরাও পুরুষদের ন্যায় সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। ইসলামের সম্পদ বণ্টনব্যবস্থায় নারীরা তাদের মৃত পিতা-মাতা, স্বামী ও সন্তানদের একটি নির্দিষ্ট অংশ ভোগ করতে পারবে।
নবী করিম (সা.) যখন মদীনাকেন্দ্রিক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তথায় নাগরিকদের সর্বপ্রকার মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করেন। মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সম্পদের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ইসলাম জাকাত, উত্তরাধিকার, খারাজ প্রভৃতি বিধান প্রবর্তন করেছে এবং দান-সাদকার প্রতি উৎসাহিত করেছে। সক্ষম লোকদের ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি নিরুৎসাহিত করেছে। ইসলাম সমাজের ধনী লোকের সম্পদে এতিম-মিসকিন, দুস্থ ও অসহায়দের অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। তাই দরিদ্রদের সঙ্গে সর্বাবস্থায় সদ্ব্যবহার করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমাদের (ধনী) সম্পদে প্রার্থী (গরিব) ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আল-যারিআত, আয়াত-১৯)
এমনিভাবে ইসলামে মানবজাতির গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-দল-মতনির্বিশেষে সর্বক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক জীবনবিধান ও আইনকানুন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবাধিকার সংরক্ষণের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা করা হয়েছে। যখন সমাজে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বিধান ও ধর্মীয় অনুশাসন পরিপূর্ণরূপে পালিত হবে এবং সামগ্রিকভাবে তা বাস্তবায়িত হবে, তখন মানুষ আর অধিকারবঞ্চিত থাকবে না।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments