দেশীয় ফলে ছেয়ে গেছে রাজধানী
মধু মাস জ্যৈষ্ঠ শেষ হলেও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আসছে মৌসুমি ফল। অলিগলি থেকে মহাসড়ক। সর্বত্রই আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, জামরুল, লিচু, বেল ও পেয়ারাসহ বিভিন্ন দেশীয় রসাল ফলে ছেয়ে গেছে। আর ক্রেতারাও আকৃষ্ট হয়ে ভিড় করছেন ফলের দোকানগুলোতে। যদিও পাইকারি ও খুচরা বাজারে ফলের দামে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। খুচরা বাজারে অধিকাংশ ফলের দাম পাইকারি আড়তের প্রায় দ্বিগুণ। সরেজমিন রাজধানীর ফলের পাইকারি আড়ত বাদামতলী ও কাওরান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মের রসাল ফলে ভরপুর বাজার। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা হরেকরকম মৌসুমি ফল থরে থরে সাজিয়ে রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছে আড়তদাররা। রাজধানীর আশপাশ থেকে খুচরা ফল বিক্রেতারা সকাল থেকে ভিড় করছে ফলের আড়তে। হাঁকডাক দিয়ে বিভিন্ন দেশীয় ফল বিক্রি করছে বিক্রেতারা। ভরা মৌসুম হওয়ায় বাজারে আম ও লিচুর আধিক্যই বেশি দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি আম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এর মধ্যে আকারভেদে হিমসাগর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ল্যাংড়া আম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং আম্রপালি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এই আম রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। রাজধানীর মালিবাগ বাজারের আম ব্যবসায়ী মো. সুলতান মিয়া যুগান্তরকে জানান, খুচরা বাজারে হিমসাগর কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১শ’ টাকা, ল্যাংড়া আম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং আম্রপালি মানভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেয়ারা কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জামরুল ১৪০ থেকে ২০০ টাকা। কালো জাম কেজিপ্রতি মানভেদে ১২০ থেকে ১৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি পিস বেল ২৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মালিবাগ বাজারে মৌসুমি ফল কিনতে আসা মো. নুরে আলম যুগান্তরকে বলেন, দেশে এখন মধু মাস যাচ্ছে। এ সময় বাজারে দেশীয় সব ধরনের ফল পাওয়া যায়।
তাই পরিবারের জন্য এসব ফল কিনতে এসেছি। তিনি জানান, বাজারে বেশ কয়েকটি জাতের আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে আরও কয়েকটি জাতের আম আসতে মনে হচ্ছে আরও এক সপ্তাহ লাগবে। তাই এই মৌসুম জুড়ে শুধু ফল আর ফল খাওয়া যাবে। এদিকে আনারসের বাজারেও সরবরাহের কমতি নেই। বাদামতলীর আড়তে রাঙ্গামাটির আনারসে ভরপুর। আকারভেদে ৮ থেকে ২০ টাকায় পাইকারি দরে আনারস বিক্রি হচ্ছে। আড়তদার জামাল শেখ জানান, তার আড়তে তিন আকারের আনারস আছে। এগুলোর প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, ১০ থেকে ১৫ টাকা ও ৬ থেকে ৮ টাকায়। তবে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে আকারভেদে এসব আনারস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৫০ টাকায়। শান্তিনগর বাজারের ফল ব্যবসায়ী আল-আমিন যুগান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজার থেকে এখানে ফল আনতে অনেক খরচ হয়। ঘাটে টাকা দিতে হয়, গাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ দিয়ে আমাদের আর খুব বেশি লাভ হয় না। এছাড়া দেশি ফল বেশি দিন রাখা যায় না। তাই শুরুতে দাম একটু বেশি থাকলেও শেষের দিকে কম দামে বিক্রি হয়। অন্যদিকে বাদামতলী ও কাওরান বাজার আড়তে রাজশাহীর লিচু ১০০ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৭০ টাকায়। অথচ রাজধানীর খুচরা বাজারে মৌসুমি এ ফলটি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। জাতীয় ফল কাঁঠাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ১৫০-৩৫০ টাকায়। বড় আকারের কাঁঠাল পল্টনে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। মতিঝিলে ওই আকারের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকায়। শান্তিনগরে ওই আকারের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। খুচরা বিভিন্ন বাজারে একাধিক দাম হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পল্টনের ফল বিক্রেতা আবুল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, একেক মার্কেটে ফলের একেক রকম চাহিদা থাকে। যার কারণে দামও অনেক সময় বিভিন্ন রকম হয়।
No comments