তিন ক্যাটাগরিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তিন ক্যাটাগরিতে প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সাবেক এমপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং পেশাজীবীদের মধ্য থেকে তিন ক্যাটাগরির নেতা বেছে নেয়া হবে। তিনশ’ আসনেই বিএনপি প্রার্থী বাছাই করবে। পরে আলোচনার মাধ্যমে জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে তৃণমূলের মত নেয়া হতে পারে। আগামীতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে দল ও সরকার পরিচালনার কৌশল হিসেবে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনশ’ আসনের মধ্যে দুইশ’তে পুরনো এবং একশ’ আসনে নতুন মুখ বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে। এসব আসনে ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতাদেরই প্রাধান্য দেয়া হবে। পেশাজীবীদের পাশাপাশি দলের ডোনার হিসেবে পরিচিত কিছু ব্যবসায়ীদেরও মনোনয়ন দেয়া হবে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের ওপর তৃণমূলকে তীক্ষ্ণ নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে যারা দলীয় মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সেই তালিকাও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে এদের মধ্যে যারা নিষ্ক্রিয় আছেন বা কথিত সংস্কারপন্থী ছিলেন কিংবা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। ওই আসনগুলোতে নতুন প্রার্থী দেয়া হবে। দলীয় নেতাদের পাশাপাশি এবার পেশাজীবীদের মধ্যে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে তাদেরকেও মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। এ ধরনের একটি তালিকা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের জন্য সবসময় দলটির প্রস্তুতি রয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমরা অংশ নিতে চাই। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির প্রার্থী সংকট নেই। বরং প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। এদের মধ্য থেকে যোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামতকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে এমনটা ভেবে নিয়ে অনেকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে পারে বলে জানান ফখরুল। এবারের নির্বাচনে দলের সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতাদের ভাগ্যে কি ঘটবে এখনও সেটা পরিষ্কার নয়। তাদের অনেকেই এখনও দলের কোনো কর্মকাণ্ডে নেই। যদিও ইতিমধ্যে জহির উদ্দিন স্বপন, সর্দার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও নজির হোসেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব সাবেক এমপিদের নিয়েও সংশ্লিষ্টদের নির্বাচনী এলাকায় নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। একটি সূত্র জানায়, এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে যারা অতীতের দুরুত্ব ঘুচাতে পেরেছেন এমন কয়েকজনকে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে হাইকমান্ড চিন্তাভাবনা করছে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে অনেককে ডেকে এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছে হাইকমান্ড। কেন্দ্রের নির্দেশ পেয়ে অনেকেই এখন এলাকামুখী। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। দলীয় মনোনয়নে কে কোথায় নমিনেশন পাচ্ছেন বা পাবেন তা নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যার যার মতো নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। এদের কাছে বেড়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কদর। দেশের প্রায় সব আসনেই জনসংযোগ, দান-খয়রাত, গ্রুপি-লবিং চলছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবীণদের তুলনায় নবীন মনোনয়ন প্রত্যাশীরাই এবার এগিয়ে রয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণা ও শোডাউনের ক্ষেত্রে। তবে তৃণমূল নেতকর্মীদের অভিযোগ, বিগত সময়ে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যেত না। নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের অনেকেই পাশে দাঁড়াননি। ওইসব সুযোগ-সন্ধানী অনেক নেতা নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নিজ এলাকায় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যে কোনো উপায়ে মাঠ দখল করে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন জুটিয়ে নেয়াই তাদের মূল লক্ষ্য। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী এবারও ৩টি আসনে নির্বাচন করবেন। ফেনী, বগুড়া ছাড়াও ঢাকা অথবা দিনাজপুর থেকে তার নির্বাচন করার কথা শোনা যাচ্ছে। সুযোগ হলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বগুড়ার যে কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। ডা. জোবায়দা রহমান সিলেটের বিয়ানীবাজার পৈতৃক এলাকা থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে বিএনপিও অংশ গ্রহণ করবে। তাই এবারও তিনি ঢাকার কোনো এক আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। গতবার মোহাম্মদপুর থেকে করেছি, এবার ঢাকা-১৫ (কাফরুল) থেকেও হতে পারে। তবে, পুরো বিষয়টি ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।’ ময়মনসিংহ সদর থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী পেশাজীবী নেতা ডা. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দল আমাকে যখন যেখানে কাজ দেয়, সেটা আমি দায়িত্ব নিয়ে করতে ভালোবাসি। আমার কাজের মূল্যায়ন হিসেবে মনোনয়ন দেয় তাহলে ভাল। আর না দিলেও ক্ষুব্ধ হব না। প্রায় একই বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ-২ থেকে নির্বাচনে আগ্রহী বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
No comments