টক-ঝাল-মিষ্টি স্বাদের দইবড়া
ছিল নবাবী খাবার আর এখন সেটা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারের খাবার। টক-ঝাল-মিষ্টি স্বাদের দইবড়ার কথাই বলা হচ্ছে। একটা সময়ে দইবড়া শুধু পুরান ঢাকার মানুষই বেশি খেতেন। এখন এ খাবার ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। বিশেষ করে রোজার সময় এলেই বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য বিখ্যাত চকবাজারে দইবড়া বিক্রি করতে দেখা যায় বেশি। দইবড়া একই সঙ্গে মুখরোচক এবং হজমে সহায়তাকারী একটি খাবার। সারা দিন ইফতারের পর একটু দইবড়া শরীরে প্রশান্তির পরশ এনে দিতে পারে। আর এ কারণেই ইফতারে দইবড়ার বিশেষ কদর রয়েছে। দইবড়ার বড়া তৈরি হয় মাসকলাই, দারুচিনি গুঁড়া, এলাচ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, বিট লবণ, মরিচের গুঁড়া ও খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে। আর দই তৈরি করা হয় দুধ থেকে। ডালগুলো ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। জিরা, ধনে, গোলমরিচ ও শুকনো মরিচ আলাদা টেলে এক সঙ্গে গুঁড়ো করে রাখা হয়। এরপর ডালগুলো মিহি করে বেটে নেয়া হয়। একটা গামলায় পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে রাখা হয়। এরপর কড়াইয়ে শুরু হয় চ্যাপ্টা আকার করে বড়া ভাজা। ভাজা হলে তেল থেকে তুলে লবণ পানিতে ছাড়া হয়। দই আলাদা করে ফেটে নেয়া হয়। চিনি, লবণ ও দই একসঙ্গে মেশানো হয়। এতে আগে থেকে গুঁড়ো করে রাখা ভাজা মসলা মেশানো হয়। সবশেষে বড়ার ওপর দইয়ের মিশ্রণ ঢেলে দেয়া হয়। দইবড়ার জন্য বিখ্যাত হল চকবাজার।
চকবাজারে ৩৭ বছর ধরে দইবড়া বিক্রি করছেন খোকন মিয়া। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ৩৭ বছর ধরে আমি চকবাজারে দইবড়া বিক্রি করছি। রোজার এক মাস অন্য সব কাজ বাদ দিয়ে শুধু ইফতারের জন্য এ দইবড়া বিক্রি করি। প্রতিদিন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ দইবড়ার বাটি বিক্রি করেন খোকন মিয়া। দৈনিক গড়ে ১০-১২ হাজার টাকার দইবড়া বিক্রি করেন। সাদা রঙের প্লাস্টিকের ছোট, বড়, মাঝারি সাইজের বাটিতে করে বিক্রি হয় দইবড়া। পাঁচটি দইবড়ার এক বাটির দাম ১০০ টাকা, ১০টির এক বাটির দাম পড়ে ২০০ টাকা আর ১৫টির এক বাটির দাম ৩০০ টাকা। খোকন মিয়ার মতো চকবাজারে দইবড়া বিক্রি করেন অনেকেই। দইবড়ার জন্য আরেকটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট হল পুরান ঢাকার নর্থসাউথ রোডের আল রাজ্জাক হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট। এখানে দইবড়া বিক্রি হয় পিস হিসেবে। প্রতি পিস দইবড়ার দাম পড়ে ৪০ টাকা। যে যার প্রয়োজন মতো সংগ্রহ করে নেন। প্রিন্স সুইটস অ্যান্ড বেকারিতেও দইবড়া বিক্রি হয়। তবে সরেজমিন দেখা গেছে, প্রিন্সের একেক শাখায় দইবড়ার একেক দাম। প্রিন্সের মোহাম্মদপুর শাখায় প্রতি পিস দইবড়ার দাম রাখা হচ্ছে ৬০ টাকা। আবার মিরপুর শাখায় দাম রাখা হচ্ছে প্রতি পিস ৩০ টাকা। স্টার হোটেল অ্যান্ড বেকারির রেস্তোরাঁগুলোতেও দইবড়া বিক্রি হচ্ছে। দাম রাখা হচ্ছে প্রতি পিস ৪০ টাকা। বঙ্গবাজার থেকে একটু সামনে এগুলেই ওয়ান স্টার হোটেল। এখানকার দইবড়াও এখন বেশ জনপ্রিয়। এখানে প্রতি পিস দইবড়ার দাম পড়বে ২০ টাকা। ঐতিহ্যবাহী এ খাবারটি এখন গুলশান এলাকার কিছু রেস্তোরাঁতেও বিক্রি করতে দেখা যায়।
No comments