বিচার হয় না পাহাড়খেকোদের by মহিউদ্দীন জুয়েল
প্রতিটি
প্রতিবেদনেই ঘুরেফিরে এসেছে প্রভাবশালী মহলের নাম। তুলে ধরা হয়েছে
রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় পাহাড়খেকোদের সিন্ডিকেটের কথা। কখনও পাহাড় দখলের
মহোৎসবের চিত্র কিংবা পাহাড়ের পাদদেশে লোকজনকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে
ঘর ভাড়া দেয়ার রমরমা বাণিজ্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আবার অনেক তদন্ত কমিটির সদস্য সরাসরি বলেছেন, রাতের আঁধারে গাছ কেটে নেয়ার কারণে মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই খসে পড়ছে বিশাল মাটির টুকরো। বনদস্যুদের দৌরাত্ম্য আর মাটি কেটে নেয়ার কারণে এক দশকে আরো ১০/১২টি পাহাড় যেকোনো সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামে গত ১৫ বছরে ঘটে যাওয়া একাধিক পাহাড় ধসে লোকজনের প্রাণহানির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনগুলো কখনই আলোর মুখ দেখেনি। অথচ সবক’টি প্রতিবেদনেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন কাজ করেছেন। তারা গড়ে ২০/৩৬টি করে সুপারিশও করেছেন।
তাদের দেয়া সেই সব সুপারিশের প্রতিবেদনগুলোর বেশির ভাগই এখন ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার কিংবা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের স্টোররুমে। কোনো প্রতিবেদনের আলোকেই আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক, কর্মী, পরিবেশবিদ ও সমাজের নানা স্তরের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই প্রতিবছর পাহাড় ধসে প্রচুর লোকের মৃত্যু হচ্ছে।
তারা জানান, পাহাড় ধসের ঘটনার পর প্রতিবছর প্রশাসন থেকে গঠিত হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। কিছুদিন এই নিয়ে হাঁকডাক শোনা যায়। কিন্তু মাস ফুরালেই আর আলোর মুখ দেখে না এসব তদন্ত প্রতিবেদন। ফলে পাহাড়খেকোরা পার পেয়ে যাওয়ায় আবারো তারা নানা ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পাহাড় নিয়ে বাণিজ্য শুরু করে।
এ বিষয়ে পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ও অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি চিহ্নিত করা ও তাদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদের সুপারিশগুলো কবে বাস্তবায়িত হবে আমাদের প্রশ্ন। দখল হওয়া পাহাড়গুলোর অধিকাংশের মালিক সরকারি সংস্থা। চট্টগ্রামে এখন ১১ মাসই পাহাড় কাটা চলে। এক মাসের উচ্ছেদে কি আর সমস্যার সমাধান হয়?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ই জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামে। সেই ঘটনায় তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার এম এন সিদ্দিকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬টি সুপারিশ প্রণয়ন করে।
২০১৭ সালের চলতি জুন মাস পর্যন্ত সেই সুপারিশের একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবেশ আন্দোলন কর্মীরা জানান, ওই প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটির সদস্যরা যেসব সুপারিশ করেছিলেন সেগুলো বাস্তবায়িত করতে গেলে খোদ প্রশাসনের লোকজনের নামই বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেবল তাই নয়, প্রতিবেদনে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছিলো। বর্তমানে এই কাজটি করতে গিয়ে জেলা প্রশাসনকে বেশ হিমশিম খেতে হয় বর্ষা আসলে।
কেননা, নগরীর খুলশী, বায়েজীদ, পাহাড়তলী, মতিঝর্ণা, লালখান বাজারসহ একাধিক এলাকার পাহাড়গুলো রাজনৈতিক নেতাদের হাতে বন্দি হয়ে আছে। সেখান থেকে তারা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। পাহাড় থেকে বসতি উচ্ছেদ করতে গিয়ে তারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
অন্যদিকে ২০১১ সালের জুন মাসে বাটালি হিলে পাহাড় ধসে মারা যান ১৭ জন। ২০১২ সালে নগরীর চার স্থানে পাহাড় ধসে ১৮ জন মারা যান। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মারা যায় আরো ৯ জন।
এসব ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা উল্লেখ করেছেন, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে পাহাড়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকতে হবে। পাহাড়ে কাঁটাতারের ঘের দেয়া ও সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা জরুরি। উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জন্য আধুনিক ও উন্নতমানের সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে হবে।
কিন্তু কোনো প্রতিবেদনের সুপারিশই আলোর মুখ দেখেনি। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার ভেড়া পাহাড় ও খুলশী থানা এলাকার পাহাড়টির বেশির ভাগ অংশ কেটে ফেলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক শরীফ চৌহান বলেন, যারা পাহাড় কেটে বাণিজ্য করছে তারা বহাল তবিয়তে আছে। ওদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর কেউ জানে না। পাহাড় থেকে সাময়িকভাবে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আবারো সেখানে বসতি গড়ে উঠে।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সত্যি কথা কী কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো ওভারকাম করলে আমি মনে করি বিষয়টি স্থায়ীভাবে নিরসন করা সম্ভব।
আবার অনেক তদন্ত কমিটির সদস্য সরাসরি বলেছেন, রাতের আঁধারে গাছ কেটে নেয়ার কারণে মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই খসে পড়ছে বিশাল মাটির টুকরো। বনদস্যুদের দৌরাত্ম্য আর মাটি কেটে নেয়ার কারণে এক দশকে আরো ১০/১২টি পাহাড় যেকোনো সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামে গত ১৫ বছরে ঘটে যাওয়া একাধিক পাহাড় ধসে লোকজনের প্রাণহানির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনগুলো কখনই আলোর মুখ দেখেনি। অথচ সবক’টি প্রতিবেদনেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন কাজ করেছেন। তারা গড়ে ২০/৩৬টি করে সুপারিশও করেছেন।
তাদের দেয়া সেই সব সুপারিশের প্রতিবেদনগুলোর বেশির ভাগই এখন ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে আছে জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার কিংবা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের স্টোররুমে। কোনো প্রতিবেদনের আলোকেই আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা।
পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক, কর্মী, পরিবেশবিদ ও সমাজের নানা স্তরের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই প্রতিবছর পাহাড় ধসে প্রচুর লোকের মৃত্যু হচ্ছে।
তারা জানান, পাহাড় ধসের ঘটনার পর প্রতিবছর প্রশাসন থেকে গঠিত হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। কিছুদিন এই নিয়ে হাঁকডাক শোনা যায়। কিন্তু মাস ফুরালেই আর আলোর মুখ দেখে না এসব তদন্ত প্রতিবেদন। ফলে পাহাড়খেকোরা পার পেয়ে যাওয়ায় আবারো তারা নানা ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পাহাড় নিয়ে বাণিজ্য শুরু করে।
এ বিষয়ে পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ও অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি চিহ্নিত করা ও তাদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদের সুপারিশগুলো কবে বাস্তবায়িত হবে আমাদের প্রশ্ন। দখল হওয়া পাহাড়গুলোর অধিকাংশের মালিক সরকারি সংস্থা। চট্টগ্রামে এখন ১১ মাসই পাহাড় কাটা চলে। এক মাসের উচ্ছেদে কি আর সমস্যার সমাধান হয়?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ই জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে চট্টগ্রামে। সেই ঘটনায় তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার এম এন সিদ্দিকের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬টি সুপারিশ প্রণয়ন করে।
২০১৭ সালের চলতি জুন মাস পর্যন্ত সেই সুপারিশের একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবেশ আন্দোলন কর্মীরা জানান, ওই প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটির সদস্যরা যেসব সুপারিশ করেছিলেন সেগুলো বাস্তবায়িত করতে গেলে খোদ প্রশাসনের লোকজনের নামই বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেবল তাই নয়, প্রতিবেদনে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছিলো। বর্তমানে এই কাজটি করতে গিয়ে জেলা প্রশাসনকে বেশ হিমশিম খেতে হয় বর্ষা আসলে।
কেননা, নগরীর খুলশী, বায়েজীদ, পাহাড়তলী, মতিঝর্ণা, লালখান বাজারসহ একাধিক এলাকার পাহাড়গুলো রাজনৈতিক নেতাদের হাতে বন্দি হয়ে আছে। সেখান থেকে তারা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। পাহাড় থেকে বসতি উচ্ছেদ করতে গিয়ে তারা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
অন্যদিকে ২০১১ সালের জুন মাসে বাটালি হিলে পাহাড় ধসে মারা যান ১৭ জন। ২০১২ সালে নগরীর চার স্থানে পাহাড় ধসে ১৮ জন মারা যান। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মারা যায় আরো ৯ জন।
এসব ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা উল্লেখ করেছেন, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে পাহাড়ে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত থাকতে হবে। পাহাড়ে কাঁটাতারের ঘের দেয়া ও সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা জরুরি। উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের জন্য আধুনিক ও উন্নতমানের সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে হবে।
কিন্তু কোনো প্রতিবেদনের সুপারিশই আলোর মুখ দেখেনি। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার ভেড়া পাহাড় ও খুলশী থানা এলাকার পাহাড়টির বেশির ভাগ অংশ কেটে ফেলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক শরীফ চৌহান বলেন, যারা পাহাড় কেটে বাণিজ্য করছে তারা বহাল তবিয়তে আছে। ওদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর কেউ জানে না। পাহাড় থেকে সাময়িকভাবে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আবারো সেখানে বসতি গড়ে উঠে।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। তবে সত্যি কথা কী কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো ওভারকাম করলে আমি মনে করি বিষয়টি স্থায়ীভাবে নিরসন করা সম্ভব।
No comments