চালবাজিতে বাড়ছে মোটা চালের দাম
চাল নিয়ে প্রতারণা চলছে। মোটা চাল ছেঁটে চিকন ও পলিশ করে মিনিকেট নামে বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে দেশে মোটা চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। সার্বিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে চালের দামে। ফলে এক মাসে পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিতে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। যা নিন্ম আয়ের মানুষের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এদিকে চালের দাম বৃদ্ধির জন্য মিল মালিকদের দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, চাল নিয়ে এটি এক ধরনের চালবাজি। জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার শপিং কমপ্লেক্সের আল্লার দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারে এখনও পর্যাপ্ত চাল রয়েছে। কিন্তু মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে রেখেছে। এছাড়া মোটা চাল থেকে মিনিকেট চাল বানানোর কারণেই মোটা চালের কৃত্রিম সংকট চলছে। যার কারণে মোটা চালের দাম বেশি বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশি দামে কিনছি। ফলে বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। তবে তার মতে, সপ্তাহখানেক পর বাজারে নতুন মৌসুমের ধান উঠলেই চালের দাম অনেকাংশে কমবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক শ্রেণীর চালকল মালিক মোটা চাল ছেঁটে সরু করে মিনিকেট চাল বলে বাজারে বিক্রি করে। দীর্ঘদিন থেকে চক্রটি এ প্রক্রিয়ায় বিপুল অংকের মুনাফা লুটে নিচ্ছে। বাজারে মিনিকেট চালের চাহিদা বেশি থাকায় কিছু চালকল মালিক কম দামে মোটা চাল সংগ্রহ করে মিনিকেট চাল বানিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। বিশেষ করে মাঝারি সরু বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও বিআর-৩৯ জাতের ধান ছেঁটে পলিশ করে মিনিকেট চাল বলে বাজারজাত করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, পাশাপাশি চালের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করতে এখনও আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে সরকারকে চাপে রাখার জন্য সব ধরনের চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। যার কারণে দফায় দফায় বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম। এদিকে সব ধরনের চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে। দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে চালের মিলমালিক, পাইকার, আমদানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া খাদ্য এবং কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার এই দাম বৃদ্ধির চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার দরের তালিকায় লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা ও চায়না ইরি চালের মূল্য দেয়া আছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪২ টাকা, যা এক মাস আগে মূল্য ছিল ৩৭ থেকে ৪০ টাকা। মাসের ব্যবধানে এর দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর এক বছর আগে এর মূল্য ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকায়। সেক্ষেত্রে বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ টিসিবির তথ্য বলছে, সাধারণ ও নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য মোটা চালের দাম এক বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। জানতে চাইলে দেশের চালের বৃহৎ পাইকারি বাজার বাদামতলি ও বাবুবাজার আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা চালকল ও মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনে এনে বিক্রি করি।
তারা চালের যে দাম ঠিক করে আমাদের সে দামেই কিনে বিক্রি করতে হয়। তিনি দাবি করেন, চালের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়। এদিকে দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে বিভিন্ন বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চালের সিন্ডিকেট ওপেন সিক্রেট। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আগে কোনো কিছুর দাম বাড়লেই সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি করা হতো। কিন্তু এখন তা না হওয়ায় মিল মালিকরা তাদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা বলেন, বোরো মৌসুম সামনে রেখে মিলারদের তৎপরতা বেড়েছে। বোরো ধান সস্তায় কিনতে কৌশল আঁটছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হলে মিলারদের অপতৎপরতা কিছুটা কমতে পারে। কারওয়ান বাজার, বাদামতলি পাইকারি চালের বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাসে পাইকারি বাজারে চালের দাম অনেকটা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৩ থেকে ৩৪ টাকায়। পারিজাত চাল ৪১ টাকা। এক মাস আগে এর দাম ছিল ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা। বি আর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকায়। নাজিরশাইল ৪৮ টাকা, মাসখানেক আগে দাম ছিল ৪৩ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এই চালই খুচরা বাজারে এসে কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়ে যায়। খুচরা বাজারে মঙ্গলবার মোটা চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকায়। এছাড়া পারিজাত প্রতিকেজি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, বি আর-২৮ ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা, ভালো মানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা এবং মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫৩ থেকে ৫৬ টাকায়।
No comments