রিকশা চাকায় ঘুরছে স্কুল ছাত্র দেবাশীষ’র স্বপ্ন
বড় পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নিজের লেখাপড়া ও সংসার পরিচালনার খরচ যোগাতে অটোরিকশা চালাচ্ছে বরিশালের উজিরপুর পৌর এলাকার দেবাশীষ ঘরামী (১৪)। সে ডব্লিউ বি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর কিশোর ছাত্র। বর্তমানে নিজের লেখাপড়ার খরচ এবং সংসারের অভাব দূর করতে টাকার অভাবে সে অটোরিকশা চালাচ্ছে। উজিরপুর পৌরসভার পুরান বাজার এলাকার মৃত রতিকান্ত ঘরামীর ছেলে দেবাশীষ ঘরামী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার ছোট। দেবাশীষের জন্মের পরপরই তার বাবা অসুস্থ্য হয়ে মারা যায়। অনেক সময় তাদেরকে অনাহারে থাকতে হয়েছে। ওই সময় দেবাশীষের বড় ভাই রঙ্গলাল ঘরামী দিনমজুরের কাজ করে সংসারের দায়িত্ব নেয়। দেবাশীষের বয়স যখন ৪ বছর তখন হঠাৎ একটি দূর্ঘটনায় বড় ভাই রঙ্গলালের এক হাত পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় সংসারের দায়িত্বভার নেয় মেঝো ভাই আশিষ ঘরামী। সে একজন নির্মান শ্রমিক। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে এক বোনের বিবাহ হওয়ায় চার ভাই-বোন আর মা’কে নিয়ে চলে তাদের অভাবের সংসার জীবন। মেঝো ভাইয়ের সামান্য উপার্জনে চলা অভাব-অনটনের সংসারে দেবাশীষ স্বপ্ন দেখে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বড় পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার। তার স্বপ্ন পুরনে মেঝো ভাই তাকে উজিরপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। দেবাশীষ যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র তখনই টাকার অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম দেখা দেয়। কিন্তু কথায় আছে ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব হয়। তাই দেবাশীষও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। নিজের লেখাপড়া ও সংসারের অভাব দূর করতে ৪র্থ শ্রেণীতে উর্ত্তীন হওয়ার পর থেকেই দেবাশীষ মেশিন দিয়ে ইট ভাঙা শ্রমিকের কাজে যোগ দেয়। এ পেশায় ২ বছর কাজ করে পঞ্চম শ্রেণীতে ভালো ফলাফল করে ২০১৪ সালে পৌরএলাকার সদরে ডব্লিউ বি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় দেবাশীষ।
এরপর থেকে স্কুল ও লেখা-পড়ার পাশাপাশি অভাবের সংসারের অর্থের যোগান দিতে শুরু করে অটোরিকশা চালানো। স্কুল খোলাকালিন বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এবং ছুটির দিনগুলোতে সারাদিন রিকশা চালায়। এরপর রাতে বাড়ি ফিরে শুরু করে আবার লেখাপড়া। এভাবেই ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৪০ পেয়ে সে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। দেবাশীষ জানায়, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বড় পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শিশু বয়স থেকেই নিজ উপজেলার বিভিন্নস্থানে প্রতিবেশী সমীর দাসের ইট ভাঙা মেশিনের শ্রমিক এবং একই এলাকার জগদীশ হালদারের ভাড়ার রিকশা চালিয়ে সামান্য অর্থ উপার্জন করে নিজের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি সংসার চালিয়ে আসছি। প্রতিদিন অটোরিকশা ভাড়া বাবদ দিতে হয় ২শ’ টাকা। স্কুল চলাকালীন দিনগুলোতে সে রিকশা ভাড়া দিয়ে এক থেকে দেড় শত টাকা ও ছুটির দিনগুলোতে প্রায় ৩ শত টাকা আয় করতে পারে। দেবাশীষ অভিযোগ করে জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে কোন সুবিধা দিচ্ছে না বরং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মত তার নিকট থেকেও নির্ধারিত বেতন-ফিস আদায় করছে। কিন্তু বর্তমানে এই স্বল্প আয়ে নিজের লেখাপড়া খরচ আর অভাবের সংসার নিয়ে সে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে দেবাশীষ। তার আয়ের জন্য যে কোন একটি সু-ব্যবস্থার মাধ্যমে তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াসহ অভাবের পরিবারটিকে আলোর মুখ দেখাতে রিকশা চালক স্কুল ছাত্র দেবাশীষ বরিশাল জেলা প্রশাসকের নিকট সাহায্য-সহযোগীতা ও তার সু-দৃষ্টি কামনা করেছে।
No comments