চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের তাণ্ডব পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধ করতে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগ। ভাংচুর করেছে দোকানপাট ও ২০-৩০টি যানবাহন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ব্যাপক গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে কোতোয়ালি জোনের এসি, থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য ও ছাত্রলীগের অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্রলীগের তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। তাণ্ডব চলাকালে স্টেডিয়াম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। কাজীর দেউড়ী, লালখানবাজার, এনায়েতবাজার মোড়সহ আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে, নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগ এ তাণ্ডব চালায়। এদিকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের একটি অংশ ওয়াসা মোড় হয়ে জিইসি মোড়ের দিকে যাচ্ছিল। পথে মেয়র আ জ ম নাছির গ্রুপের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গেও তাদের সংঘর্ষ বাধে। চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ রোববার প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধ করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে। এর আগে ১০ এপ্রিল নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী লালদীঘি পাড়ের সমাবেশ থেকে অবিলম্বে সুইমিংপুল নির্মাণ বন্ধের দাবি জানান। না হলে তার ছেলেরা এটি ভেঙে দেবে বলে হুশিয়ারি দেন। আউটার স্টেডিয়ামে খেলা ও বিজয় মেলার মাঠ দখল করে সুইমিংপুল নির্মাণ করায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ৪শ’-৫শ’ নেতাকর্মী কাজীর দেউড়ীর আউটার স্টেডিয়ামে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ তাদের সুশৃঙ্খলভাবে বিক্ষোভ করার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু একপর্যায়ে রনির নির্দেশে নেতাকর্মীরা নির্মাণকাজের জন্য দেয়া টিনের ঘেরা ভাংচুর করতে শুরু করে। পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। নূর আহমদ সড়ক ও কাজীর দেউড়ি মোড়ে সড়কে এলোপাতাড়ি রিকশা, ট্যাক্সি, পিকআপ, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর করে। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ ছাত্রলীগ কর্মীদের থামাতে একপর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়ে। ছাত্রলীগের ইটের আঘাতে কোতোয়ালি জোনের এসি জাহাঙ্গীর আলম, কোতোয়ালি থানার ওসি জসিম উদ্দিন, এসআই আক্তার হোসেন, মুহিবউল্লাহ ও কনস্টেবল মুনির হোসেন আহত হন। বিপরীতে গুলিবিদ্ধ হন নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চৌধুরী বাবু, ছাত্রলীগ নেতা গোলাম সামদানি বাবু ও সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন। আহত হন আরও অন্তত ২০ নেতাকর্মী। ওসি জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের জন্য অনুরোধ করি। তাদের বলি, এটি সরকারি কাজ। আপনারা সরকারি দলের লোক। আমরাও সরকারের স্বার্থ রক্ষা করছি। আপনারা অনৈতিক কিছু করবেন না। কিন্তু তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে। পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। নিরুপায় হয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করে ও রাবার বুলেট ছোড়ে।’
সিএমপির ডিসি (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগ। যারা এখানে ভাংচুর চালিয়েছে তাদের ভিডিও ফুটেজ আছে। এ ঘটনায় মামলা হবে। জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। নগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, খেলার মাঠ ও বিজয় মেলার মাঠ দখল করে সিজেকেএস আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণ করছে। আমরা এটি বন্ধে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু এতেও কাজ বন্ধ না করায় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করি। টেন্ডার ছাড়াই এ সুইমিংপুল নির্মাণ করা হচ্ছে। সুইমিং পুল বাস্তবায়ন কমিটির সংবাদ সম্মেলন : এর আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলা হয়, ‘খেলার মাঠ আর সুইমিং পুল বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। দুটি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। জ্ঞানের অভাবে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন সুইমিংপুল নির্মাণের বিরোধিতা করছে।’ এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ও সুইমিংপুল বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলী আব্বাস লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ‘সব নিয়মনীতি মেনে সিটি মেয়র ও ক্রীড়া সংগঠক আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদানের টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে সুইমিংপুল নির্মাণের কাজ শুরু করেন। দেশের অন্য জেলাগুলোয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার মালিকানাধীন জায়গাতেই সুইমিংপুল নির্মিত হয়েছে। অন্যের কিংবা মূল স্টেডিয়াম থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো স্থানে সুইমিংপুল নির্মাণের কোনো নজির দেশে নেই। কারণ এর রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির প্রয়োজনেই সুইমিংপুল নির্মাণের স্থান নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭০ হাজার ৩৮০ বর্গফুটের ৩০৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৩০ ফুট প্রস্থের এ আধুনিক মানের সুইমিংপুল নির্মাণ করা হচ্ছে, যা আমাদের ক্রীড়াবিদদের উৎকর্ষ সাধনে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকমানের সাঁতারু গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।’ আলী আব্বাস আরও বলেন, ‘ক্রিকেট-ফুটবল-হকি-হ্যান্ডবলের চর্চায় যেমন খেলার মাঠের প্রয়োজন, তেমনি সাঁতারচর্চার জন্যও সুইমিংপুলের প্রয়োজন। চট্টগ্রাম একটি বিভাগীয় শহর হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও এখানে একটি সুইমিংপুল নেই, চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের সাঁতার শেখার সুযোগও নেই। এ লজ্জা আমাদের সবার। বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই ছাত্রলীগ সুইমিংপুল ঘেরাও কর্মসূচির নামে আউটার স্টেডিয়ামে তাণ্ডবে মেতে ওঠে।
No comments