সন্তোষজনক অগ্রগতি আশা করছে ভারত


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরকালে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান ইস্যু এবং নতুন ক্ষেত্রে সন্তোষজনক অগ্রগতির আশা করছে ভারত। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার ঢাকা ও দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সফরের ঘোষণা দেবে। সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সফরে ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে চুক্তি নয়, বরং সমঝোতা স্মারক সই হবে। এই স্মারকে দু’দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ, সফর বিনিময়, যৌথ মহড়া, দুর্যোগ মোকাবেলা এবং জঙ্গি দমনে সহায়তার মতো উপাদান থাকছে। তবে এই সমঝোতা স্মারকটির কোনো মেয়াদকাল থাকছে কিনা সে বিষয়ে আরও আলোচনা করে ঠিক করা হবে। এ ছাড়া ভারত থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করার জন্য ভারত ৫০ কোটি ডলারের একটি ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে। এ লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে ‘লাইন অব ক্রেডিট’ (এলওসি) দেয়াসংক্রান্ত আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরেও তিস্তা চুক্তি সই হওয়া অনিশ্চিতই থাকছে। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পে সহায়তা নিয়ে আরও সমীক্ষার কথা বলা হতে পারে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হবে। এ ছাড়া কানেকটিভিটি নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ এপ্রিল চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরকালে প্রায় দু’ডজন চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও বিভিন্ন দলিল সই হতে পারে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে আজমীর শরিফ গিয়ে হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে দু’দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সোমবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মনোয়ার হোসেন, ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার ড. আদর্শ সোয়াইকা, ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তা মনোস্মৃতি ও নিনাদ দেশপান্ডে উপস্থিত ছিলেন। বিকাল সোয়া ৪টায় শুরু হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয় এ বৈঠক। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতির সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘আমরা যখন পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করি, তখন আমরা অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে কথা বলি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর হল সেগুলোর অন্যতম। এ সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ সফর। ভারতের পক্ষ থেকে আমরা এ সফরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটা একটা খুবই ব্যতিক্রমী বিষয়।
কেননা সাধারণত কোনো রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধান রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকেন না। আমরা দেখছি, কী কী কর্মসূচি থাকছে, কী ধরনের লজিস্টিক সেখানে প্রয়োজন, কী কী ইস্যু ও এজেন্ডা। এখনও কিছুটা সময় আছে। আমরা দেখছি, এসব ক্ষেত্রে আমাদের আরও অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ জানতে চাইলে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘এ সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, এটি বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশীর সরকারপ্রধানের সফর। এমন একটা দেশের সঙ্গে এ সফর, যে দেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘতম সীমান্ত রয়েছে, যা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে নেই। এমন একটা দেশের সঙ্গে এই সফর হচ্ছে, যে দেশের সঙ্গে স্বল্প সময়ের মধ্যেই স্থল ও সমুদ্রসীমার ইস্যুর নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী মোদি উভয়ের নেতৃত্বে এসব হচ্ছে। এ কারণে সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রধানমন্ত্রীর সফরের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, খুব শিগগির সফরের তারিখ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করবে। আমি এটা শেয়ার করতে পারব না।’ বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা সহায়তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘এটা আপনারা আমাকে বলুন। এ ব্যাপারে আমি আপনাদের কিছু বলতে পারব না।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের এজেন্ডা ও ইস্যু কী কী থাকছে- জানতে চাইলে শ্রিংলা বলেন, ‘এ ধরনের সফরে আমরা অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করি। আমাদের মধ্যে প্রতীকী ইস্যু আছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা উভয়ে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। বাংলাদেশের মাটিতে অনেক ভারতীয় সৈন্য প্রাণ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দু’দেশের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছেন। আমরা কীভাবে তাদের সম্মান জানাতে পারি, তারা কীভাবে আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তারা কীভাবে আমাদের দু’দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখবেন- এসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করতে পারি। অবশ্যই এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের সফরে বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট উপাদান থাকে। শীর্ষ ব্যবসায়ীরা কীভাবে একে অন্যের দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন, বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার কী কী ক্ষেত্র আছে- এসব ইস্যু আমরা দেখছি। ফরের মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে কীভাবে সহযোগিতা জোরদার হতে পারে এসবই আমরা দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পূর্বেই তিস্তা নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ আলোচনা সমাপ্ত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, ‘সবকিছুতেই অগ্রগতি হচ্ছে।
আমরা দেখছি যে কী সম্ভব আর কী সম্ভব নয়।’ গঙ্গা ব্যারাজের বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা দু’দেশের মধ্যে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছি। আমরা ইতিমধ্যে কমিটির টার্মস অ্যান্ড রেফারেন্স ঠিক করেছি, কমিটি কাদের নিয়ে গঠিত সেটা ঠিক করেছি। আরও অনেক তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা দেখছি, এ ব্যারাজের ফলে ভারতের অংশে কী প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ অংশেও স্টাডি হচ্ছে। ফলে কারিগরি অগ্রগতি হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিদ্যমান ইস্যু ও নতুন কোনো ক্ষেত্রে অগ্রগতি আশা করছেন কিনা- জানতে চাইলে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ফলাফল আশা করছি। এ মাত্রার সফরে ফলাফল অবশ্যই থাকবে। আমরা সন্তোষজনক অগ্রগতি আশা করছি। আমরা আশা করি, আমাদের উভয় দেশের জনগণ এ সফরের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার উন্নতি করতে পারবেন। এ ধরনের সফরে আমরা ভারত আর বাংলাদেশের জনগণের ওপর প্রভাবের অপেক্ষা করি। এসবই আমরা আলোচনা করছি।’ বাংলাদেশে ২০০১ সালের নির্বাচনে জড়িত থেকে বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’

No comments

Powered by Blogger.