পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী বৈঠকে ‘অস্ত্র ব্যবসায়ী’ আ’লীগ নেতা



চট্টগ্রামে সন্ত্রাসবিরোধী উঠান বৈঠকে শনিবার সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার আবদুল ওয়ারীশের (বক্তৃতা করছেন) সঙ্গে এক মঞ্চে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ‘অস্ত্র ব্যবসায়ী’ দিদারুল আলম মাসুম (গোলচিহ্নিত) -যুগান্তর চট্টগ্রামের ২১ অস্ত্র ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে তালিকা পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই তালিকায় লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুমের নাম রয়েছে। আর এ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে সঙ্গে নিয়েই খুলশী থানা পুলিশ ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ উঠান বৈঠক করেছে। গত ১১ মার্চ লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় অনুষ্ঠিত উঠান বৈঠকে সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) আবদুল ওয়ারীশ, খুলশী থানার ওসি শেখ নাছির উদ্দীন এবং ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা এফআই কবির আহমেদ মানিক উপস্থিত ছিলেন। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার আবদুল ওয়ারীশ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘তালিকায় থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে উনি (দিদারুল আলম মাসুম) এমন কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত আছেন- এমন তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। তাছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের তালিকা হয়। কোনো মামলার রেফারেন্স হিসেবে আগে হয়তো এ তালিকায় তার নাম এসেছে।’ অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম থাকার বিষয়ে দিদারুল আলম মাসুম বলেন, ‘তালিকায় নাম আছে দেখে আমি নিজেও হতবাক ও হতভম্ব হয়েছি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তালিকাটি উঠেছে। কেন কী কারণে ওই তালিকায় আমার নাম উঠল তা বলতে পারব না। হয়তো কেউ ষড়যন্ত্র করে আমার নাম ঢুকিয়েছে।’ পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দিদারুল আলম মাসুমের বিরুদ্ধে সিএমপির বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লালখান বাজারের পোড়া কলোনি বস্তিতে দরিদ্র লোকজনের কাছে রিকশা বিতরণ করতে গিয়ে তার হামলার শিকার হন বিএনপির বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
ওই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল। নগরীর একটি হোটেল থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। এর আগে একাধিক হত্যা মামলা ও অস্ত্র মামলায়ও আসামি হন তিনি। তবে বেশিরভাগ মামলায় তিনি খালাস পান। কিছু কিছু মামলা রাজনৈতিক মামলা হিসেবে প্রত্যাহার করে বর্তমান সরকার। সূত্র আরও জানায়, ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাসুম জেল থেকে জামিনে বের হয়ে দুবাই পাড়ি জমান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আবার দেশে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে লালখান বাজার এলাকা থেকে ২ হাজার রাউন্ড গুলিসহ আনোয়ার নামে এক যুবক গ্রেফতার হয়। ওই যুবক পুলিশের কাছে স্বীকার করে, গুলিগুলো দিদারুল আলম মাসুমের। তিনি ছিলেন বহনকারী মাত্র। এ ছাড়া একই সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামে সরকার পতন আন্দোলনের নামে হেফাজত লালখান বাজার এলাকায় নাশকতা চালাতে গেলে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে তা প্রতিহত করেন দিদারুল আলম মাসুম। তবে লাইসেন্স করা নিজের অস্ত্র দিয়ে ওই ঘটনা প্রতিহত করে সমালোচনার পরিবর্তে দলের ভেতরে-বাইরে প্রশংসিত হন তিনি। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে অস্ত্র ব্যবসা করছে এমন ২১ জনের একটি তালিকা গত মাসের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার উপসচিব স্বাক্ষরিত তালিকাযুক্ত চিঠিতে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম ছাড়াও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করের নাম রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.