ধুলো জমছে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতে
ট্রাম্প
প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোর শীর্ষ পদের কর্মকর্তা নিয়োগ এখনও
সম্পন্ন হয়নি। এক্ষেত্রে চরম ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কর্মকর্তাদের অভাবে
গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতে কার্যত ধুলো জমছে। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে,
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শপথগ্রহণের পর সাত সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও
নির্বাহী অফিসগুলোর মূল কেন্দ্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যত চুপচাপ ও
শূন্য পড়ে আছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস যেখান থেকে বিশ্বের
সর্বাধিক গোলযোগপূর্ণ এলাকায় সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন, সেই
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান অফিস পেন্টাগনের শীর্ষ পদগুলোতে কোনো
কর্মকর্তা নেই। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনেক শীর্ষ পদই এখনও খালি রয়েছে। যদিও
মন্ত্রণালয়গুলোকে জাতীয় স্বাস্থ্যবীমা পদ্ধতি পর্যালোচনার মতো গুরুত্বপূর্ণ
বহু কাজ সরবরাহ করা হয়েছে। ট্রাম্প স্বাস্থ্যসেবা, ট্যাক্স, বাণিজ্য ও
পরিবেশ নীতিমালার মতো ইস্যুগুলোকে নীতি হিসেবে অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা
করছেন, তবে তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো এখনও
নেতৃত্বশূন্য রয়েছে। অনেকগুলো মন্ত্রণালয় এবং অফিসের কর্মকাণ্ড কার্যত অচল
হয়ে পড়েছে। এই অফিসগুলোর নিন্মস্তরের কর্মচারীরা এখন এমন সব অস্থায়ী বসের
অধীনে কাজ করছেন, যাদের প্রভাব ও ক্ষমতা অনেকটাই অস্পষ্ট। পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক কর্মকর্তা নিকোলাস বার্নস উভয় দলের প্রেসিডেন্টদের
অধীনে কাজ করেছেন এবং ১৯৮৮ সাল থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরের সঙ্গে জড়িত।
নিকোলাস বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন নেই যে, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ
প্রক্রিয়া কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ধীর গতির। এটা খুব বড় ধরনের ভুল। বিশ্ব
ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়াকে শ্রদ্ধার চোখে দেখছে না। অবশ্য ট্রাম্প
বলছেন যে, তার সরকারের শীর্ষ পদগুলোতে আসলে কোনো ঘাটতি নেই। রাষ্ট্রের
আমলাতন্ত্রের আকার ছোট রাখার ক্ষেত্রে এটা তার সরকারের একটা পরিকল্পনা।’ গত
মাসে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, সরকারের এত সব পদে
আমি কোনো নিয়োগ দিতে চাই না। কারণ এগুলোর কোনো দরকার নেই। এতগুলো লোক কী
করবে? এতগুলো চাকরি রাখার আপনার কোনো দরকার নেই। তবে গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ
পদে ছাঁটাইয়ের কোনো পরিকল্পনা প্রেসিডেন্ট প্রস্তাব করেননি। হোয়াইট হাউসের
একজন মুখপাত্র লিন্ডসে ই. ওয়াল্টার অবশ্য জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
শেষ পর্যন্ত ওই পদগুলোতে লোক নিয়োগ পরিকল্পনা করেছেন। নিজের মন্ত্রিসভার ১৮
জন সদস্য নিশ্চিত হওয়ার পর ৫ শতাধিক অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য আর
কাউকেই নিয়োগ দেননি ট্রাম্প। প্রশাসনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর পদগুলোতে
নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি পূর্বসূরিদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছেন।
অথচ এ
কর্মকর্তারাই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দৈনন্দিন কার্যাবলীর বেশিরভাগ পরিকল্পনা
করেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ পদগুলোতে লোকবল নিয়োগের কাজ শুরু করেছেন
ট্রাম্প। যেমন রোববার তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর জন্য ৩৬ জন প্রার্থীর নাম
যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সিনেটে পাঠিয়েছেন। তবে এ সংখ্যা ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট
বারাক ওবামার ক্ষমতা গ্রহণের সময় পাঠানো সংখ্যার মাত্র অর্ধেক।
পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিসের সেন্টার ফর প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রানজিশনের
দেয়া তথ্য মতে, ২০০৯ সালে ওবামা গণপূর্ত বিভাগের জন্য ৭০ জনের নাম সিনেটে
পাঠিয়েছিলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেনি
ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘমেয়াদি এ যাচাই প্রক্রিয়ায় কয়েক সপ্তাহ থেকে দুই
মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। সিনেটে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার আগে এসব
প্রার্থীর অবশ্যই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। নিউইয়র্ক
টাইমসের মতে, অফিস অব গভর্নমেন্ট এথিকস নামের যে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটি
প্রেসিডেন্ট মনোনীত প্রার্থীদের আর্থিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করে, ৫ মার্চ
পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে ৬৩ জন প্রার্থীর প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে
তারা। এ সংখ্যা ২০০৯ সালে ওবামা প্রশাসনের দেয়া ২২৮ জনের তালিকার
এক-তৃতীয়াংশের কম।
No comments