সীমিত দরপত্র বাস্তবায়নে পেরোতে হবে ২১ ধাপ
চীনের
অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য নতুন নীতিমালা জারি করেছে সরকার। নতুনভাবে প্রয়োগ
হতে যাওয়া সীমিত দরপত্রের চুক্তির ক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছয়টি
প্রধান ধাপের আওতায় ২১টি ধাপ পার হতে হবে। এগুলোর মধ্যে আবার রয়েছে বিভিন্ন
ক্ষুদ্র ধাপ। সীমিত দরপত্রের জন্য এ নীতিমালা শুধু চীনা ঋণের ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য হবে। তবে এক্ষেত্রেও কিছুটা ফাঁক রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, উভয়
রাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেমন- অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বা অন্যান্য
বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে সীমিত পর্যায়ে প্রয়োজনে ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত
গ্রহণের বিষয়টি ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচিত হবে। ৯ মার্চ এ সংক্রান্ত পরিপত্র
জারি করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক
সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম যুগান্তরকে বলেন, এ
নীতিমালা একবারেই নতুন কিছু নয়। এটি সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালার আলোকে
তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু চীন অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশে পরিণত হচ্ছে এবং
সীমিত দরপত্র পদ্ধতি এবারই প্রথম প্রয়োগ হচ্ছে, তাই একটি নীতিমালা থাকা
প্রয়োজন। এ চিন্তা করেই এটি করা হয়েছে। ইআরডি সূত্র জানায়, চীনের সরকারি
অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত চীন সরকারের মাধ্যমে সরাসরি ক্রয়
পদ্ধতিতে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়ে আসছে। কিন্তু এবারই প্রথম
সীমিত দরপত্র পদ্ধতি প্রয়োগ হতে যাচ্ছে। এ পদ্ধতির মূল কথা হল, চীনের
কর্তৃপক্ষ চীনা কোম্পানির একটি শর্ট লিস্ট বা অল্প কোম্পানির তালিকা
সুপারিশ করবে। তারপর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশের আইন ও বিধি
অনুযায়ী ওই শর্ট লিস্টের কোম্পানির মধ্য থেকে দরপত্র আহ্বান করবে। যদি
নেগোশিয়েটেড টেন্ডারিং হয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পক্ষ চীনা এক্সিম ব্যাংকের
চাহিদা অনুযায়ী তথ্যাবলি দাখিল করবে। ইআরডির এশিয়া শাখার উপসচিব ড.
একেএম মতিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা এরই মধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও
বিভাগকে এ নীতিমালার বিষয়ে অবহিত করেছি। তিনি জানান, সীমিদ দরপত্র পদ্ধতির
প্রয়োগ শুরুর আগে যেসব প্রকল্পে সরাসরি দরপত্রে বাস্তবায়নের কথা সেগুলোর
বিষয়ে চীন সরকারের প্রস্তাব হচ্ছে, যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প
বাস্তবায়নে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের জন্য চীন সরকার কর্তৃক মনোনীত
হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের মনোনয়ন প্রাপ্তির তারিখ থেকে দু’বছরের মধ্যে
বাণিজ্যিক চুক্তি সইয়ে ব্যর্থ হলে সেসব প্রকল্প তৎপরবর্তী সীমিত দরপত্রের
মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। নতুন জারি করা পরিপত্রে যেসব ধাপের উল্লেখ করা
হয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রথমত, সীমিত দরপত্র আহ্বানের আগের ধাপগুলো হচ্ছে,
প্রকল্প চিহ্নিতকরণ ও সম্ভাব্যতা জরিপ, পরিকল্পনা কমিশন-মন্ত্রণালয়-বিভাগের
মাধ্যম উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন, ইআরডির ফান্ড অনুসন্ধান
কমিটির মাধ্যমে সম্ভাব্য উন্নয়ন সহযোগী নির্বাচন, চীন সরকারের কাছে
প্রস্তাব পাঠানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন এবং চীন সরকারের কাছ থেকে
সম্মতিপত্র প্রাপ্তি হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সীমিত দরপত্রের ক্ষেত্রে উদ্যোগী
মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার দায়দায়িত্বের ধাপগুলো
হচ্ছে, ক্রয়ের উদ্দেশ্যে স্পেসিফিকেশন বা প্রস্তাবনা তৈরি, ক্রয়ের
আনুষ্ঠানিক প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ, স্ট্যান্ডার্ড দরপত্র দলিলাদি
অনুযায়ী প্রস্তাবিত দরপত্রের দলিলাদি তৈরিকরণ, দরপত্র আহ্বান প্রস্তুত করে
ইআরডিকে অবহিত করা। তৃতীয়ত, দরপত্র জারিপ্রাপ্তি ও প্রক্রিয়াকরণের ধাপগুলো
হচ্ছে, ইআরডি চীন সরকারকে সীমিত দরদাতা-সরবরাহকারী বা পরামর্শক চিহ্নিত করে
যোগ্য দরদাতার তালিকা সরবরাহের জন্য অনুরোধ করবে। চীন সরকারের কাছ থেকে
তালিকা পেলে ইআরডি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগ বা সংস্থাকে পরবর্তী
কার্যক্রমের জন্য পাঠাবে। তালিকার মধ্যে থাকা দরপত্রকারীদের কাছ থেকে
মন্ত্রণালয় বা বিভাগ দরপত্র আহ্বান করবে। এরপর দরপত্র খোলা ও প্রক্রিয়াকরণ
করবে। চতুর্থত, দরপত্র পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন এবং অনুমোদনের ধাপগুলো হচ্ছে-
দরপত্র পরীক্ষা ও মূল্যায়ন, যোগ্য দরদাতা নির্বাচন এবং চুক্তি অ্যাওয়ার্ড
অনুমোদন। পঞ্চমত, চুক্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ধাপগুলো হচ্ছে- চুক্তি
অ্যাওয়ার্ড জারি, চুক্তি অনুস্বাক্ষর এবং চুক্তি অনুমোদন। চুক্তি অনুমোদনের
ক্ষেত্রে একনেকে ডিপিপি অনুমোদন, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির
অনুমোদন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ ও ঋণ চুক্তি
স্বাক্ষরের জন্য সব প্রকার দলিলাদি ইআরডিতে পাঠাতে হবে। ষষ্ঠ, সব দলিলাদি
পাওয়ার পর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী অর্থায়নের প্রক্রিয়া সম্পাদন শেষে চীন ও
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের (চায়না এক্সিম ব্যাংক) সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর
করবে।
No comments