খুলনায় রেলের জমি দখলে একাট্টা আ’লীগ-বিএনপি
খুলনায়
রেলের জমি দখল প্রশ্নে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রভাবশালীরা
একাট্টা। সুযোগ পেলেই দুই দলের একটি সিন্ডিকেট রেলের জমিতে হাত বাড়ায়। দখলে
নিয়ে গড়ে তোলে মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
দখলদারিত্বের এসব কাজে রেলের কানুনগো অফিসসহ একাধিক বিভাগের অসাধু
কর্মকর্তারা সহযোগিতা করেন। বর্তমানে এ সিন্ডিকেট রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ
একটি জায়গা দখলে নিয়ে মার্কেট তৈরির আয়োজন করেছে। ইতিমধ্যে মার্কেটের পজিশন
বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। জানা যায়, খুলনা নগরীর
নিক্সন মার্কেটের পশ্চিমে ও রেলওয়ে বয়েজ স্কুলের মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় এক
বিঘা জমির ওপর রেলওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি বাসভবন ছিল। ব্রিটিশ
আমলে নির্মিত বিশাল ভবনটি ২০১৫ সালেও ব্যবহারের উপযোগী ছিল। ২১নং ওয়ার্ড
বিএনপির সভাপতি নাজির উদ্দিন নান্নু এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী
লীগ নেতা শামসুজ্জামান মিয়া স্বপনসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি রেলের
কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ভবনটি পরিত্যক্ত দেখিয়ে দখলে
নিয়ে নেন। কৌশলে বের করে দেয়া হয় ভবনের বাসিন্দাদের। এরপর সেখানে মার্কেট
তৈরির উদ্যোগ নেন তারা। ওই জায়গায় ৬০টির মতো দোকান ঘর নির্মাণ করা হবে।
ইতিমধ্যে পজিশন বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫-৬ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে। সে
হিসাবে নির্মাণের আগেই কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। তবে জায়গা
দখল করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা। ২১নং
ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজির উদ্দিন নান্নু বলেন, কোনো জমি দখল করা হয়নি।
এখানে ঢাকার একটি পার্টি বহুতল মার্কেট করার উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি রেলের
বর্তমান কানুনগো খুব ভালোভাবেই জানেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও ২১নং ওয়ার্ড
কাউন্সিলর শামসুজ্জামান স্বপন বলেন, ‘এই ভবন ভাঙা বা মার্কেট নির্মাণের
সঙ্গে আমি জড়িত নই। ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য আমি রেলওয়েকে চিঠি
দিয়েছিলাম। কারণ ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে পাশের স্কুলে চোর প্রবেশ করছে। আর এ
কাজে অনেক জটিলতা রয়েছে। যেগুলো নিয়ে এখন কথা বলা যাবে না।’
জানা গেছে,
রেলের জমি দখল করে নামে-বেনামে একের পর এক স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এর
পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটি সিন্ডিকেট। দখলবাজরা মার্কেটগুলোর
নামকরণ এমনভাবে করেন, যাতে সাধারণ কেউ কিছু বলতে পারে না। যেমন আনোয়ার
হোসেন মঞ্জু যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে ভাণ্ডারিয়া নিবাসী হায়দার আলী রেলওয়ের
জমি দখল করে নির্মাণ করেন মানিক মিয়া মার্কেট। প্রায় ৩ বিঘা জমিতে তিনি
তৈরি করেছেন এ মার্কেট। এভাবেই ডাকবাংলার মোড় সংলগ্ন রেলের জমিতে গড়ে তোলা
হয়েছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেট, ডাকবাংলো
সুপার মার্কেট, নিক্সন মার্কেট, দরবেশ মার্কেট, ভাসানী মার্কেট, রেলওয়ে
কর্মচারী মার্কেট, শেরেবাংলা মার্কেট, নিউমার্কেটের সামনে রেলওয়ে কর্মচারী
মার্কেট, সুপার মার্কেট, স্টেশন রোড মার্কেট ও নান্নু মার্কেটসহ বিভিন্ন
স্থাপনা। রেলওয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কাউন্সিল অফিসটি এখন ২১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ
কার্যালয়। ২১নং ওয়ার্ড বিএনপি অফিসটিও রেলওয়ের জমিতে। রেলওয়ে শ্রমিক
কর্মচারী লীগের অফিসটিও রেলের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। জানতে
চাইলে খুলনা রেলের কানুনগো জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, ‘রেলওয়ে হাসপাতাল
চিকিৎসকদের বাসভবনের জায়গায় কোনো ধরনের নির্মাণকাজ চলছে বলে আমার জানা নেই।
আর যেসব জমি দখল হয়েছে সেগুলো অনেক আগের। যুগ যুগ ধরেই তা দখলে রয়েছে।
এগুলো ইচ্ছা করলেই উদ্ধার করা সম্ভব না।’ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো.
হাফিজুর রহমান জানান, রাতের আঁধারে সন্ত্রাসী বা মাদকাসক্তরা ভবনটি
(চিকিৎসকদের বাসভবন) ভেঙে ফেলেছে। এ ব্যাপারে জিডি এবং আদালতে অজ্ঞাতদের
নামে মামলা করা হয়েছে। এরপর থেকে সেটি সেভাবেই রয়েছে। কোনো মার্কেট করা
হচ্ছে না।
No comments