প্রবাসী বন্ধুর সঙ্গে কথা বলায় স্ত্রীকে হত্যা
রিকশাচালক
নূর আলমের বন্ধু সৌদি প্রবাসী মনির হোসেন। কয়েক মাস আগে দেশে ফিরে বন্ধুর
বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন মনির। তখন মনিরের সঙ্গে আলমের স্ত্রী তাছলিমা বেগমের
পরিচয় হয়। সৌদি আরব ফিরে তাছলিমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন
মনির। বিষয়টি আলমের ভালো লাগত না। বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে স্ত্রীকে নিষেধ
করেছিলেন আলম। নিষেধের পরও একদিন রাতে বাসায় ফিরে তাছলিমাকে সেই প্রবাসী
বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে দেখেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চার ঘণ্টা ঝগড়া
হয়। এক পর্যায়ে আলম তার স্ত্রী তাছলিমাকে গলা টিপে হত্যা করেন। তারপর ঘরের
দরজা লাগিয়ে পালিয়ে যান। গত ২৮ জানুয়ারি নির্মম এ হত্যাকাণ্ড হয় রাজধানীর
মিরপুর-৭ নম্বর সেকশনের একটি বাসায়। এ ঘটনার প্রায় এক মাস পর ৪ মার্চ
যাত্রাবাড়ী থেকে আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারায়
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন আলম। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা
এসআই ফারুকুজ্জামান মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, আলম হত্যার দায় স্বীকার করে
আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আলমকে একমাত্র আসামি করে শিগগিরই আদালতে
চার্জশিট দেয়া হবে। তিনি বিভিন্ন সময় স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করতেন।
পুলিশ জানায়, ১৭ বছর আগে আলম ও তাছলিমার বিয়ে হয়। তাদের ১৫ বছর বয়সী একটি
মেয়ে ও ১০ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। অনেক আগে থেকেই দুই সন্তান
মুন্সীগঞ্জে নানা বাড়িতে থাকে।
আলম মিরপুর এলাকায় ভাড়ায় রিকশা চালাতেন।
তাছলিমা মিরপুরে একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে মিরপুরের ৭
নম্বর সেকশনের ৪ নম্বর রোডের ৭০৭ নম্বর বাড়িতে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে বসবাস
করছিলেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যেই পরস্পরকে সন্দেহ করার প্রবণতা ছিল।
এর জেরে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। বিভিন্ন সময় তাছলিমাকে শারীরিক
নির্যাতন করত আলম। দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রীকে হত্যা করে পালিয়ে যান আলম।
আলম স্বীকারোক্তিতে বলেছেন, সন্দেহ করার প্রবণতা থেকেই স্ত্রী তাছলিমাকে
একাধিকবার চাকরি করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তাছলিমা কখনই তার কথা
শোনেননি। এমনকি সংসার ভেঙে দেয়ার হুমকিও দিতেন। ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে
তিনি বাসায় ফিরে দেখেন মনিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন তাছলিমা। এ
নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রাত ৩টার দিকে তাছলিমার গলা টিপে তাকে
শ্বাসরোধে হত্যা করেন আলম। তারপর মেঝেতে লাশ ফেলে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে
তিনি পালিয়ে যান।
যেভাবে গ্রেফতার : হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময়
স্ত্রীর মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে যান আলম। নিজের মোবাইল ফোনটি বন্ধ রাখলেও
স্ত্রীর মোবাইল ফোনটি তিনি খোলা রেখেছিলেন। ঘটনার পর ১৫ দিন তিনি কুমিল্লায়
ছিলেন। পরে তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় চলে আসেন। মোবাইল ফোনের সূত্র
ধরে নিশ্চিতভাবে তার অবস্থান চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। ওই সময় তিনি
যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, গেণ্ডারিয়াসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান
করছিলেন। মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলে তিনি বিভ্রান্ত করছিলেন। চলতি মাসের
শুরুতে কল দেয়া হলে একজন নারী মোবাইল ফোনটি রিসিভ করেন। কৌশলে কথা বলে ওই
নারীর সঙ্গে দেখা করেন পল্লবী থানা পুলিশের কয়েক সদস্য। ওই নারী পুলিশকে
জানান, তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকার রিকশাচালকদের মেসে বাবুর্চির কাজ করেন।
কয়েকদিন ধরে আলমের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আলম তাকে বিয়ে করার
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ কারণে আলমের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। আলম ভুল
করে মোবাইল ফোনটি তার কাছে রেখে কুমিল্লায় গেছেন। আলম ফিরে এলে ওই নারীর
সহায়তায় ৪ মার্চ আলমকে গ্রেফতার করা হয়। আলম ওই নারীকে বলেছিলেন, কয়েকদিন
আগে তার স্ত্রী মারা গেছেন। কোনো সন্তান নেই। তিনি সরল মনে আলমকে বিশ্বাস
করেছিলেন।
No comments