বার্নিকাটের প্রশ্ন তারেককে কীভাবে সংযুক্ত করবে বিএনপি by কাফি কামাল
বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সোমবারের দীর্ঘ বৈঠকে দলটির ভবিষ্যৎ
নেতৃত্ব, পরবর্তী নির্বাচন, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক
পরিস্থিতি উত্তরণে দলটির ভাবনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট। বৈঠক সংশ্লিষ্ট
একাধিক সূত্রের সঙ্গে আলাপে এমন তথ্য জানা গেছে। বৈঠক শেষে মার্কিন
রাষ্ট্রদূতের তরফে গণমাধ্যমের কাছে সার-সংক্ষেপ নিয়ে তিন বাক্যের একটি নোট
দেয়া হয়। বিএনপির তরফেও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নোটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে
সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করা হয়। কিন্তু দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে
বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দীর্ঘ বৈঠক নিয়ে নানা
কৌতূহল এখন রাজনৈতিক মহলে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে মার্কিন
রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
তিনি জানতে চান, আইনি জটিলতার মধ্যে থাকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার
বিরুদ্ধে আদালত কোন ধরনের শাস্তির রায় দিলে বিএনপি কিভাবে পরিচালিত হবে?
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কে দলের হাল ধরবেন? কার নেতৃত্বে দল পরিচালিত
হবে? তিনি জানতে চেয়েছেন- লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান
তারেক রহমানকে কিভাবে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করবে বিএনপি। কারণ
তিনিও আইনি জটিলতায় এবং বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। ফলে তারেক রহমানকে
নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা কি? তবে বার্নিকাটের এমন জিজ্ঞাসার জবাবে বিএনপির
তরফে কি বলা হয়েছে- সেটা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট
সূত্রগুলো। তারা জানান, বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে
বিএনপির ভাবনা জানতে চেয়েছেন। তিনি পরিষ্কার জানতে চান, বিএনপি পরবর্তী
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা। যদি সে নির্বাচন বর্তমান পদ্ধতিতে বা
বর্তমান সরকারের অধীনেই হয়। পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনাগুলোও তিনি
আগ্রহ ভরে জানতে চেয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতার কাছে। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচন
নিয়ে বৈঠকে কোন ধরনের আলাপ হয়নি। সূত্র জানায়, বৈঠকে বার্নিকাট বলেছেন,
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নিরাপত্তা। এই ইস্যুতে বিএনপির
পরিকল্পনাগুলো কি এবং কিভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলার কথা চিন্তা করছে দলটি।
বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য সবাইকে
অতীতচারিতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি হতে হবে
ভবিষ্যৎমুখী। এ বিষয়ে বিএনপি কি ভাবছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পথচলার রূপরেখা
কেমন হবে? সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বিএনপির
তরফে জানানো হয়েছে- তারা অতীত নয়, সবসময় ভবিষ্যৎমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাস
করে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক সময় অতীত ইস্যু সামনে চলে
আসে। যদিও বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় ভবিষ্যৎমুখী। বৈঠকে মার্কিন
রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বিক
রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে
বিএনপির ভাবনাগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জানা প্রয়োজন। তিনি জানতে চান
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বিএনপি কি ভাবছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পরিষ্কার বলেছেন- বিএনপি এখন সংসদে নেই। ফলে তারা
আনুষ্ঠানিক বিরোধী দল নয়। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও
বলেছেন, সামপ্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি
টমাস শ্যাননসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিএনপি নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ
করেছেন। বৈঠকে বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি
সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওয়াকিবহাল। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বর্তমান
নাজুক পরিস্থিতির বিষয়টিও তাদের অজানা নয়। তারা সবসময় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ
করছে। তিনি বলেছেন, কূটনীতিক রীতি-নীতির কারণে দেশে যে সরকারই থাকুক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সঙ্গে কাজ করতে হয়। তাই প্রকাশ্যে অনেক বিষয়ে
কথা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত ও গণতান্ত্রিক
পরিবেশ নিশ্চিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। তারই
প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির উল্লেখ ও প্রতিফলন ঘটছে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে।
No comments