রহিমুদ্দিনের কম্বল ছিনতাই by সিদ্দিক আলম দয়াল
মুই
একটা মানুষ বাহে। মোর গায়ের কম্বল ছিনতাই হয়া যায়। এটা ক্যামন দুনিয়া আলো।
ঠাণ্ডা মেঝেতে শুয়ে থাকা রহিমুদ্দিন মানুষের পায়ের শব্দে ওঠে- এ কথাগুলো
বলেন। ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে যাওয়া বৃদ্ধ রহিমুদ্দিনের গায়ের কম্বল তিনটা ছিনতাই
হয়ে গেছে। তখন রাত সাড়ে ১২টা হবে। চোখে ঘুমঘুম ভাব আর পেটের ক্ষুধা। কম্বল
তিনটা গায়ে দিয়ে তন্দ্রা হতেই কে যেন তার গায়ের কম্বল দুটি হেচকা টান দিয়ে
দৌড় দেয়। সেই থেকে রহিমুদ্দিন এই কনকনে ঠাণ্ডায় কম্বল আর ছেঁড়া চাদর গায়ে
দিয়ে রাত কাটান। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি বন্দরের কড়াইবাড়ি গ্রামে
বাড়ি রহিমুদ্দিনের। একসময় জমি, বাড়ি, ভিটা সবই ছিল। পুকুর ভরা মাছ আর সুখের
সংসারের কথা মনে হলে রহিমুদ্দিন ডুকরে কেঁদে ওঠেন। এখন বয়সের ভারে ন্যুয়ে
পড়েছেন। মনে পড়ে ১৯৮০ সালের দিকে তার ঘরবাড়ি জমিজমা সব নদী গর্ভে চলে যায়
তিনবার।
তারপর ৪ ছেলে রশিদ, নজু, সামসুল, শাহাদুল আর ১ মেয়ে উর্মিকে নিয়ে ঠাই হয় ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধে। কিন্তু একে একে ৪ ছেলে বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে যায়। মেয়ে উর্মিও একদিন কার হাত ধরে পিতাকে ফেলে চলে যায় অজানায়। বাধ্য হয়েই রহিমুদ্দিনকে এক কাপড়ে বের হতে হয় নদীর বাঁধ ছেড়ে। এখন কিচ্ছু নেই তার। কেউ দিলে খায়, না দিলে উপস। কাজ না করলে পেটে খাবার জুটবে কীভাবে। ধানকাটা কাঁচি নিয়ে কাজের সন্ধ্যানে বের হন। বয়সের কারণে কেউ তাকে কাজে নেয় না। সে কারণে এক সময় তাকে চলে আসতে হয় গ্রাম ছেড়ে। ৬ বছর আগে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমান। আর থাকার জায়গা হয় শহরের বিভিন্ন বাড়ান্দায়। মানুষ যা দেয় তাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গরমে দিনরাত কাটলেও তার কষ্ট হয় শীতকালে। তবু থাকতে হয়। চলতি কনকনে শীতে রহিমুদ্দিনের ঠাঁই হয় গাইবান্ধা পৌর সভার পার্কের বিনোদন কক্ষে। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় থাকলে তার জায়গা হয় না । চারপাশে লাল, নিল বিভিন্ন বাতি জলে। নিচে পুকুরে নানা জাতের মাছের সমারোহ। পুকুরের এক কোণে চারপাশের খোলা বিনোদনের ঘর। শহর যখন ঘুমিয়ে পরে তখন রহিমুদ্দিন ঠাঁই নেয় খোলা ঘরে। সঙ্গে একটা নানা সামগ্রীর বস্তা। ওই বস্তার মধ্যে তার সংসার। কয়েকদিন হলো প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রহিমুদ্দিনের অবস্থা যায় যায়। শুয়ে ছিলেন পার্কের খোলা জায়গায়। দয়া করে কে যেন ঘুমন্ত অবস্থায় তার গায়ে দুটি কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়ে যায়। আর আগের একটি। এই তিন কম্বল গায়ে দিয়ে রহিমুদ্দিন ঘুমিয়ে থাকেন। কিন্তু কয়েকদিন হলো তিনি টের পান রাত গভীর হলে তার গায়ের কম্বল কে যেন টান দিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি শীতে রাত কাতরাচ্ছেন। দিনের বেলায় তিনি নড়াচড়া করতে পারলেও রাতে কাবু হয়ে পড়েন। অন্যদিকে তার কষ্ট দেখে আশেপাশের লোকজন তাকে খাবার দিয়ে যায়। শিশু বুড়ো মানুষও মাছের খাবার নিয়ে আসেন সঙ্গে খাবার আসে রহিমুদ্দিনের জন্যও। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার জোটে না তার। প্রশ্ন করতেই দু’চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ে, হাত দিয়ে দুচোখ মুছে বলে আর কেটা দিবে কম্বল? আর দিলেই বা কি। মোর গায়ের কম্বল গাওত থাকি টান মারি ছিনতাই করি নিয়া যায়। কি দুনিয়া আলো বাবা। মোর কষ্টের কতা চোরও বোঝে না বাহে। তাই বাধ্য হয়া সারারাত একান কম্বল গাওত দিয়া বসি থাকোম।
তারপর ৪ ছেলে রশিদ, নজু, সামসুল, শাহাদুল আর ১ মেয়ে উর্মিকে নিয়ে ঠাই হয় ব্রহ্মপুত্র নদীর বাঁধে। কিন্তু একে একে ৪ ছেলে বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে যায়। মেয়ে উর্মিও একদিন কার হাত ধরে পিতাকে ফেলে চলে যায় অজানায়। বাধ্য হয়েই রহিমুদ্দিনকে এক কাপড়ে বের হতে হয় নদীর বাঁধ ছেড়ে। এখন কিচ্ছু নেই তার। কেউ দিলে খায়, না দিলে উপস। কাজ না করলে পেটে খাবার জুটবে কীভাবে। ধানকাটা কাঁচি নিয়ে কাজের সন্ধ্যানে বের হন। বয়সের কারণে কেউ তাকে কাজে নেয় না। সে কারণে এক সময় তাকে চলে আসতে হয় গ্রাম ছেড়ে। ৬ বছর আগে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমান। আর থাকার জায়গা হয় শহরের বিভিন্ন বাড়ান্দায়। মানুষ যা দেয় তাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গরমে দিনরাত কাটলেও তার কষ্ট হয় শীতকালে। তবু থাকতে হয়। চলতি কনকনে শীতে রহিমুদ্দিনের ঠাঁই হয় গাইবান্ধা পৌর সভার পার্কের বিনোদন কক্ষে। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিনোদন কেন্দ্রে ভিড় থাকলে তার জায়গা হয় না । চারপাশে লাল, নিল বিভিন্ন বাতি জলে। নিচে পুকুরে নানা জাতের মাছের সমারোহ। পুকুরের এক কোণে চারপাশের খোলা বিনোদনের ঘর। শহর যখন ঘুমিয়ে পরে তখন রহিমুদ্দিন ঠাঁই নেয় খোলা ঘরে। সঙ্গে একটা নানা সামগ্রীর বস্তা। ওই বস্তার মধ্যে তার সংসার। কয়েকদিন হলো প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় রহিমুদ্দিনের অবস্থা যায় যায়। শুয়ে ছিলেন পার্কের খোলা জায়গায়। দয়া করে কে যেন ঘুমন্ত অবস্থায় তার গায়ে দুটি কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়ে যায়। আর আগের একটি। এই তিন কম্বল গায়ে দিয়ে রহিমুদ্দিন ঘুমিয়ে থাকেন। কিন্তু কয়েকদিন হলো তিনি টের পান রাত গভীর হলে তার গায়ের কম্বল কে যেন টান দিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি শীতে রাত কাতরাচ্ছেন। দিনের বেলায় তিনি নড়াচড়া করতে পারলেও রাতে কাবু হয়ে পড়েন। অন্যদিকে তার কষ্ট দেখে আশেপাশের লোকজন তাকে খাবার দিয়ে যায়। শিশু বুড়ো মানুষও মাছের খাবার নিয়ে আসেন সঙ্গে খাবার আসে রহিমুদ্দিনের জন্যও। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার জোটে না তার। প্রশ্ন করতেই দু’চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ে, হাত দিয়ে দুচোখ মুছে বলে আর কেটা দিবে কম্বল? আর দিলেই বা কি। মোর গায়ের কম্বল গাওত থাকি টান মারি ছিনতাই করি নিয়া যায়। কি দুনিয়া আলো বাবা। মোর কষ্টের কতা চোরও বোঝে না বাহে। তাই বাধ্য হয়া সারারাত একান কম্বল গাওত দিয়া বসি থাকোম।
No comments