মুম্বইয়ে সমকামীদের ট্যাক্সিক্যাব
এক
সময় তারা মুম্বইয়ের রাস্তায় সিগন্যাল লাইটে ভিক্ষা করতেন। এখন তাদের হাত
উঠেছে ট্যাক্সিক্যাবে। তারা এখন ট্যাক্সিক্যাবের পাক্কা চালক। ভিক্ষার হাত
পরিণত হয়েছে সম্মানজনক উপার্জনের হাতে। সেখানকার নারী সমকামী, পুরুষ
সমকামী, উভগামী, হিজড়া (এলজিবিটি) সম্প্রদায় তাদের গোষ্ঠীর জন্য এমন
সম্মানের ব্যবস্থা করেছেন। তাদের সেই চেষ্টায় পাল্টে গেছে সঞ্জীবনী চৌহানের
জীবনধারা। এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে উইংস রেইনবো। এ প্রকল্পের পরিচালক
গণেশ সোমবংশী। তিনি বলেন, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের প্রথম চালকদের দিয়ে তারা
প্রথমবারের মতো চালু করেছেন এই ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস। গণেশ বলেন, যখন আমরা
মুম্বইয়ের রাজপথে দেখতে পাবো একজন হিজড়া অথবা একজন সমকামী ট্যাক্সিক্যাব
চালাচ্ছেন, তখন রাস্তায় অন্য যেসব হিজড়া ভিক্ষা করছেন তাদের মনে আঘাত করবে।
তারা নিশ্চয় মনকে পরিবর্তন করবেন। তারাও ভিক্ষা ছেড়ে দিয়ে এ পেশায় আসবেন।
মুম্বইভিত্তিক এনজিও প্রতিষ্ঠান হামসফর ট্রাস্ট যৌথভাবে উইংস ট্রাভেল চালু
করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ভারতের সমকামী সমাজের মধ্যে অধিকার ফিরিয়ে আনা।
এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন চৌহান ও অন্য চারজন। তাদের ধারণা, এ
বছরের শেষ নাগাদ এ প্রকল্পে কমপক্ষে ১৫০০ ট্যাক্সিক্যাব নামবে। গণেশ চৌহান
বলেন, আমাদের সমাজে অনেক মানুষ আছেন যারা যৌন ব্যবসায় নেমে পড়েছেন অথবা
রাস্তায় ভিক্ষা করছেন। তাদেরকে আমরা সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই। একজন
ট্যাক্সিচালক হিসেবে কাজ করা অসম্মানের কিছু নয়। এতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি
হচ্ছে। জীবনের নিরাপত্তা আছে। সমাজে এ পেশার মানুষের জন্য রয়েছে
ভিন্নমাত্রার একটা সম্মানবোধ। সমাজও তাদেরকে মেনে নেয় সহজে। সরকারি হিসাব
মতে, ভারতে রয়েছে ২৫ লাখ সমকামী। এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে গ্রহণযোগ্য সমাজে
ফিরিয়ে আনা হলে তাতে সমাজব্যবস্থা বদলে যাবে। যদিও ভারত হিজড়াদের আইনগত
স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু এলজিবিটি সম্প্রদায় ভীষণভাবে একপেশে হয়ে আছে। তারা
অসহিষ্ণুতার শিকার হচ্ছে। সামাজিক কর্মকাণ্ডে একীভূত হওয়ার সুযোগ পায় না
বললেই চলে। গণেশ সোমবংশী বলেন, আমাদের উদ্যোগে সবাইকে এক করতে দুই মাস সময়
লেগেছে। আমরা গবেষণা করেছি। সমকামী, হিজড়া সব শ্রেণির সঙ্গে কথা বলেছি। এতে
তারা মত দিয়েছে যে, এ প্রকল্প পছন্দ করে তারা। প্রথমদিকে তারা নিশ্চিত ছিল
না যে, এমন ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করা হলে তারা পর্যাপ্ত যাত্রী পাবে
কিনা। মানুষ তাদেরকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে কিনা। যদি যাত্রী ভাড়া দিতে
অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তাদের করণীয় কি হবে। এমন সব জিজ্ঞাসা ছিল তাদের।
২০১৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিয়ে
ঐতিহাসিক রায় দেন। তাতে শিক্ষা, চাকরি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে
তাদেরকে সমান অধিকার দেয়া হয়। তবে ভারতে সমকামিতাকে এখনও একটি শাস্তিযোগ্য
অপরাধ হিসেবে ধরা হয়।
No comments