মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া ভুল ছিল
বড়
মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছিলেন আলি আহমেদ। এখন তিনি উপলব্ধি করেন যে
সেটা ভুল ছিল। আর তাই মাথার ঘাম পায় ফেলে ছোট মেয়ে দুটির পড়াশোনা চালিয়ে
যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের অভিশাপ নিয়ে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সরেজমিন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আলি
ও তার পরিবারের গল্প। প্রতিবেদকদের দলে ছিলেন সংস্থাটির যোগাযোগ বিষয়ক
পরিচালক এমা ডেলি। এইচআরডব্লিউ-এর ওয়েবসাইটে এমা লিখেছেন, আলি আহমেদ ও তার
স্ত্রী নূরজান দুজনই নিরক্ষর। তাদের ভাষায়- নিজেদের নাম কোনমতে স্বাক্ষর
করতে পারেন তারা। তবে তারা দুজনই শিক্ষার শক্তিতে বিশ্বাস করেন। আলি একজন
রিকশাচালক। তিনি দিনভর রিকশা চালান। আর তার স্ত্রী পরিশ্রম করেন বাড়িতে।
প্রতি মাসে তারা এক সপ্তাহের আয় ব্যয় করেন কনিষ্ঠ দুই কন্যার স্কুলের খরচ
মেটাতে। একজন রেহানা (১৫) অপর জন সুমা (৯)। বাড়ির বাইরের দিকে ছোট টুলে বসে
দুজন একে অপরকে বই পড়ে শোনাচ্ছে। এদিকে আলি তার নাতিকে কোলে নিয়ে আদর
করছেন। আলির ছোট্ট মেয়ে দুটি তাদের পড়াশোনা নিয়ে গর্বিত। বাড়িতে আসা
অতিথিদের সেটা দেখানোর একটা প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় তাদের মধ্যে। আমাদের
সঙ্গে দেখা করার জন্য তারা আজকে বাড়িতে থেকে গেছে। আলিদের বাড়িতে আমাদের
যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের অভিশাপ নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি
করা। আলি বিশ্বাস করেন এটা তার ছোট মেয়েদের জন্য শিক্ষার একটি সুযোগ। তাদের
বড় মেয়ে ফাতেমা তাদের মতো পড়াশোনার সুযোগ পায়নি। ফাতেমা সপ্তম শ্রেণী
পর্যন্ত পড়েছে। আনুমানিক ১২ বা ১৩ বছর বয়সে পিতা-মাতা তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়।
আলি জানালেন, এর কারণ ছিল দুটি। প্রথমত, তারা দরিদ্র আর দ্বিতীয়ত, তখন
বাল্যবিবাহ আর শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এখনকার মতো উপলব্ধি ছিল না।
বাংলাদেশে অনেকের জন্যই এটা অন্ধকারাচ্ছন্ন এক অদৃষ্ট। ইউনিসেফের এক গবেষণা
অনুযায়ী, ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের হারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের
মধ্যে এগিয়ে আছে (২৯ শতাংশ)। অর্থাৎ বছরে হাজার হাজার অল্প বয়সী মেয়েদের
জোর করে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়।
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের মূল কারণ হলো দারিদ্র্য। নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বৃদ্ধি পায় দরিদ্র সম্প্রদায়ের দৈন্যদশা। নদীভাঙনে ভেসে যায় তাদের বাড়ি ঘর, জমিজমা। এসব কারণে জীবিকা হারানোর আগে অনেক পিতা-মাতা তাদের অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর অনেকে বিয়ে দিয়ে দেন কারণ তারা অনুভব করেন সন্তানদের পেটে খাবার জোগানোটা তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে।
অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে এমন যত মেয়েদের সঙ্গে আমরা দেখা করেছি তাদের প্রত্যেকের স্কুলের পড়া বন্ধ করানো হয়েছিল। এদের অনেককেই অল্প বয়সে গর্ভধারণের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিয়ের পর তারা প্রায়ই শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হয়েছে। আর দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে তাদের মুক্তির আশা সামান্যই।
আলি এখন ফাতেমাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুতাপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশী আইনে বাল্যবিবাহ অবৈধ তা সে সময় জানতেন না তিনি। বাংলাদেশী আইনে মেয়েদের ১৮ বছরের নিচে এবং পুরুষদের ২১ বছরের নিচে বিবাহ নিষিদ্ধ। তবে, এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে প্রয়োগ হয় কদাচিৎ। পরবর্তীকালে আলি বাল্যবধূদের ঝুঁকি সম্পর্কে জেনেছেন। আর এ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন। আলি বলেন, আমি আমার অন্য মেয়েদেরকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেবো না। আমি যদি আমরা মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে তারা চাকরি করতে পারবে। ভাল জীবনযাপন করতে পারবে।
তবে এটা করা যে খুব সহজ তা নয়। কষ্টসাধ্য এক জীবন এটা। আলি বলেন, আমাকে ঋণ নিতে হয়। আর ঋণ নিলে সুদ বাড়তেই থাকে। আর কখনই ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হতে পারি না। আমি সবসময়ই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবনযাপন করছি। কিন্তু তারপরও আমি বলবো, আমাকে যতো কঠিন পরিশ্রম করতে হোক না কেন আল্লাহ চাইলে আমার সন্তানেরা তাদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখবে আর তারা ভাল করবে। এটা আমাদের জন্য ভাল হবে। এ কারণে যত পরিশ্রমই হোক না কেন আমি তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। সুমার পড়াশোনার পেছনে তার পিতামাতার মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ব্যয় হয়। আর মাসে সরকারের পক্ষ থেকে ১০০ টাকা ভর্তুকি পায় সে। রেহানা এখন কোন সরকারি সহায়তা পায় না। তাদের পেছনে খরচের মধ্যে রয়েছে খাতা, কলম, পরীক্ষার ফি আর নাস্তার খরচ।
কিছু কিছু দিক দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের এক সফলতার গল্প। দেশটি বিনামূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু সরকারের উচিত বই, ইউনিফর্ম, স্কুলের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহে ভর্তুকি দেয়ার ক্ষেতে আরও বেশি কিছু করা। এসব খরচ মেটাতে গিয়ে অনেক দরিদ্র পরিবারের কাছে স্কুল সামর্থ্যের বাইরে চলে যেতে পারে। সরকারের উচিত তাদেরকে সহায়তা দেয়া। এতে করে শিক্ষার সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। আর মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকবে না পিতামাতার।
আলির তিন ছেলেই স্কুলে পড়াশোনা সম্পন্ন করেছে। তারা এখন ভাল চাকরি করছে। আলি বলেন, আমার পিতামাতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছে। যা কিছু প্রশিক্ষণ আমি পেয়েছি তা দিয়ে আমি একটু ভাল করতে পারছি। আর আমার সন্তানেরা আমার থেকে একটু ভাল করছে। আমার ছেলেদের রিকশা চালাতে হবে না। আর যে সামাজিক কুসংস্কার বাংলাদেশের মেয়েদের পিছিয়ে রাখে সেটা বিবেচনায় আলি বললেন, আমি উপলব্ধি করেছি আমাদের ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের মূল কারণ হলো দারিদ্র্য। নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বৃদ্ধি পায় দরিদ্র সম্প্রদায়ের দৈন্যদশা। নদীভাঙনে ভেসে যায় তাদের বাড়ি ঘর, জমিজমা। এসব কারণে জীবিকা হারানোর আগে অনেক পিতা-মাতা তাদের অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর অনেকে বিয়ে দিয়ে দেন কারণ তারা অনুভব করেন সন্তানদের পেটে খাবার জোগানোটা তাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে।
অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে এমন যত মেয়েদের সঙ্গে আমরা দেখা করেছি তাদের প্রত্যেকের স্কুলের পড়া বন্ধ করানো হয়েছিল। এদের অনেককেই অল্প বয়সে গর্ভধারণের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিয়ের পর তারা প্রায়ই শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হয়েছে। আর দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে তাদের মুক্তির আশা সামান্যই।
আলি এখন ফাতেমাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুতাপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশী আইনে বাল্যবিবাহ অবৈধ তা সে সময় জানতেন না তিনি। বাংলাদেশী আইনে মেয়েদের ১৮ বছরের নিচে এবং পুরুষদের ২১ বছরের নিচে বিবাহ নিষিদ্ধ। তবে, এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে প্রয়োগ হয় কদাচিৎ। পরবর্তীকালে আলি বাল্যবধূদের ঝুঁকি সম্পর্কে জেনেছেন। আর এ ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছেন। আলি বলেন, আমি আমার অন্য মেয়েদেরকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেবো না। আমি যদি আমরা মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে তারা চাকরি করতে পারবে। ভাল জীবনযাপন করতে পারবে।
তবে এটা করা যে খুব সহজ তা নয়। কষ্টসাধ্য এক জীবন এটা। আলি বলেন, আমাকে ঋণ নিতে হয়। আর ঋণ নিলে সুদ বাড়তেই থাকে। আর কখনই ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হতে পারি না। আমি সবসময়ই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবনযাপন করছি। কিন্তু তারপরও আমি বলবো, আমাকে যতো কঠিন পরিশ্রম করতে হোক না কেন আল্লাহ চাইলে আমার সন্তানেরা তাদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখবে আর তারা ভাল করবে। এটা আমাদের জন্য ভাল হবে। এ কারণে যত পরিশ্রমই হোক না কেন আমি তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। সুমার পড়াশোনার পেছনে তার পিতামাতার মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ব্যয় হয়। আর মাসে সরকারের পক্ষ থেকে ১০০ টাকা ভর্তুকি পায় সে। রেহানা এখন কোন সরকারি সহায়তা পায় না। তাদের পেছনে খরচের মধ্যে রয়েছে খাতা, কলম, পরীক্ষার ফি আর নাস্তার খরচ।
কিছু কিছু দিক দিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের এক সফলতার গল্প। দেশটি বিনামূল্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু সরকারের উচিত বই, ইউনিফর্ম, স্কুলের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহে ভর্তুকি দেয়ার ক্ষেতে আরও বেশি কিছু করা। এসব খরচ মেটাতে গিয়ে অনেক দরিদ্র পরিবারের কাছে স্কুল সামর্থ্যের বাইরে চলে যেতে পারে। সরকারের উচিত তাদেরকে সহায়তা দেয়া। এতে করে শিক্ষার সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। আর মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকবে না পিতামাতার।
আলির তিন ছেলেই স্কুলে পড়াশোনা সম্পন্ন করেছে। তারা এখন ভাল চাকরি করছে। আলি বলেন, আমার পিতামাতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করেছে। যা কিছু প্রশিক্ষণ আমি পেয়েছি তা দিয়ে আমি একটু ভাল করতে পারছি। আর আমার সন্তানেরা আমার থেকে একটু ভাল করছে। আমার ছেলেদের রিকশা চালাতে হবে না। আর যে সামাজিক কুসংস্কার বাংলাদেশের মেয়েদের পিছিয়ে রাখে সেটা বিবেচনায় আলি বললেন, আমি উপলব্ধি করেছি আমাদের ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
No comments