ইরানে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে অস্বস্তি
ইরানের বুশেহর শহরে পারমাণবিক স্থাপনা। এই কর্মসূচি নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। ছবি: এএফপি |
‘আমি
একজন সাধারণ শ্রমিক। আমি পারমাণবিক বিষয় বা রাজনীতি বুঝি না। পারমাণবিক
চুক্তি যদি আমাকে চাকরি পেতে সহায়তা করে, আমার সন্তানদের মুখে খাবার জোগায়,
আমাদের অবশ্যই এই চুক্তি করা উচিত।’
পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে যখন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দর-কষাকষি চলছে, তখন বিষয়টি নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন সাধারণ শ্রমিক মোহাম্মদ সেরাফজাদেহ (৪৭)।
ইরানের সাধারণ মানুষের জীবন কেমন কাটছে, তা বোঝার জন্য সেরাফজাদেহর বর্তমান অবস্থা জানলেই অনেকটা অনুমান করা যায়। ১৫ বছর ধরে তিনি একটি টেক্সটাইল কারখানায় কাজ করতেন। তিন মাস বেতন দিতে না পারায় কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেছে। এই বয়সে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো বিপদেই পড়েছেন তিনি।
শুধু সেরাফজাদেহ নন, ইরানের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরা আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে ইরানের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবরোধে দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে আছে। ক্রমাগত বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। কমে যাচ্ছে কর্মসংস্থান। এমন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক চুক্তিটি দেশটির এই শ্রেণির মানুষের জীবনে আনতে পারে স্বস্তির পরশ।
ইরানের নেতাদের কাছে পারমাণবিক চুক্তির বিষয়টি সম্মান বা ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখার বিষয়। তবে সাধারণ মানুষের কাছে এটি অর্থ, খাদ্য আর চাকরির নিশ্চয়তা।
ইরান সামরিক উদ্দেশে পারমাণবিক কর্মসূচি চালাচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। ২০১১-১২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইরানের তেল বিক্রি এবং বৈদেশিক লেনদেনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। তখন থেকে মূলত সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে থাকে। আয়ের উৎস না থাকায় রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ, পানি ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে তিনগুণ করা হয়েছে। এই বাড়তি খরচ মেটাতে না পেরে শুধু তেহরানেই শত শত কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মালিকেরা।
ইরানের প্রতি পশ্চিমাদের এ ধরনের আচরণকে ‘যড়যন্ত্রমূলক’ বলে মনে করেন অনেক নাগরিক। তাঁদের কাছে, পারমাণবিক কর্মসূচি জাতীয় অহংকারের বিষয়। এমনই একজন—২৮ বছর বয়সী ব্যবস্থাপনার ছাত্র মোসলেম আলী ইয়াই বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা সরকারকে বিশ্বাস করি না।’ শত্রুর বিরুদ্ধে পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগের অধিকার আদায়ে তিনি নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত বলে জানান।
আগে এমনটা মনে করলেও ২০১৩ সালে হাসান রুহানি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে। তিনি বিশ্ব থেকে ইরানের এভাবে বিচ্ছিন্নতা ঠেকাতে এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সচেষ্ট হন। একটি অন্তর্বর্তীকালীন পারমাণবিক চুক্তিও করেছেন পশ্চিমাদের সঙ্গে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে তাঁকে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনিও সমর্থন দিয়েছেন।
বর্তমানে ইরানে মূল্যস্ফীতি ১৮ শতাংশ। সরকারি হিসাবে বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশ। তবে প্রকৃত হার আরও অনেক বেশি। কোনো রকমে জীবন ধারণ করতে পারার মতো আয় হয় না, এমন অনেকের তথ্য এই পরিসংখ্যানে নেই। এ ছাড়া দিন দিন বাড়ছে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য।
আলী খেইরখা (৪৮) নামের এক গৃহ পরিচ্ছন্নতা কর্মী জানালেন, তিনি যে কারখানায় কাজ করতেন, গত পাঁচ মাস আগে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর তিনি এই কাজটি নেন। তেহরানে রেখে পরিবারের খরচ মেটাতে পারছেন না বলে তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ সন্তানের মুখ দেখতে না পারার কষ্টের কথা জানান তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘জীবন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। রুহানির প্রতিশ্রুতি শুনে আমি তাঁকে ভোট দিয়েছিলাম, আশা করি তিনি তা পূরণ করবেন।’
ইরানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, খাদ্যসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র বা ইইউ কোনো অবরোধ আরোপ করেনি। তবে বৈদেশিক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এগুলো কেনা যাচ্ছে না। আবার দেশটির অনেক বন্দর কালো তালিকাভুক্ত থাকায়, এগুলো ব্যবহার করে পণ্য আমদানি করা যায় না। চাহিদা বেশি আর জোগান কম থাকায় অর্থনীতির সূত্র মেনে পণ্যের দাম দিন দিন চড়া হচ্ছে।
বন্দর আব্বাসের ৩৫ বছর বয়সী শিক্ষিকা মিনা ভাকিলি বলেন, ‘আমার দুই সন্তান। আমি ও আমার স্বামী দুজনেই আয় করি। এর পরও সন্তানদের মৌলিক চাহিদাটুকু মেটাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। আমার মনে হয়, পারমাণবিক চুক্তিটি হবে। এই চুক্তির রাজনৈতিক দিক নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমার জীবন ও অর্থনীতির উন্নতি হোক, এটাই আমার চাওয়া।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকটি সফল হবে এবং দুই পক্ষ চুক্তিতে যাবে—এমন আশায় আছেন ব্যবসায়ীরাও। গোলাম আলী হাসানি নামের এক ব্যবসায়ীর ভাষায়, ‘আমি চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় আছি। চুক্তিটি হলেই নতুন নতুন পণ্য কিনব। পণ্যের দাম তখন কমবে, ব্যবসাও জমবে।’
এই বৈঠকের সাফল্যের আশায় আছেন তরুণেরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাসের দাদপারভার বলেন, ‘আমি সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে চাই।’ এএফপি অবলম্বনে
পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে যখন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দর-কষাকষি চলছে, তখন বিষয়টি নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন সাধারণ শ্রমিক মোহাম্মদ সেরাফজাদেহ (৪৭)।
ইরানের সাধারণ মানুষের জীবন কেমন কাটছে, তা বোঝার জন্য সেরাফজাদেহর বর্তমান অবস্থা জানলেই অনেকটা অনুমান করা যায়। ১৫ বছর ধরে তিনি একটি টেক্সটাইল কারখানায় কাজ করতেন। তিন মাস বেতন দিতে না পারায় কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেছে। এই বয়সে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো বিপদেই পড়েছেন তিনি।
শুধু সেরাফজাদেহ নন, ইরানের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরা আর্থিক সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে ইরানের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক অবরোধে দেশটির অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে আছে। ক্রমাগত বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। কমে যাচ্ছে কর্মসংস্থান। এমন পরিস্থিতিতে পারমাণবিক চুক্তিটি দেশটির এই শ্রেণির মানুষের জীবনে আনতে পারে স্বস্তির পরশ।
ইরানের নেতাদের কাছে পারমাণবিক চুক্তির বিষয়টি সম্মান বা ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখার বিষয়। তবে সাধারণ মানুষের কাছে এটি অর্থ, খাদ্য আর চাকরির নিশ্চয়তা।
ইরান সামরিক উদ্দেশে পারমাণবিক কর্মসূচি চালাচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে। ২০১১-১২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইরানের তেল বিক্রি এবং বৈদেশিক লেনদেনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। তখন থেকে মূলত সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে থাকে। আয়ের উৎস না থাকায় রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ, পানি ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে তিনগুণ করা হয়েছে। এই বাড়তি খরচ মেটাতে না পেরে শুধু তেহরানেই শত শত কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন মালিকেরা।
ইরানের প্রতি পশ্চিমাদের এ ধরনের আচরণকে ‘যড়যন্ত্রমূলক’ বলে মনে করেন অনেক নাগরিক। তাঁদের কাছে, পারমাণবিক কর্মসূচি জাতীয় অহংকারের বিষয়। এমনই একজন—২৮ বছর বয়সী ব্যবস্থাপনার ছাত্র মোসলেম আলী ইয়াই বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা সরকারকে বিশ্বাস করি না।’ শত্রুর বিরুদ্ধে পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগের অধিকার আদায়ে তিনি নিজের জীবন দিতেও প্রস্তুত বলে জানান।
আগে এমনটা মনে করলেও ২০১৩ সালে হাসান রুহানি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে। তিনি বিশ্ব থেকে ইরানের এভাবে বিচ্ছিন্নতা ঠেকাতে এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সচেষ্ট হন। একটি অন্তর্বর্তীকালীন পারমাণবিক চুক্তিও করেছেন পশ্চিমাদের সঙ্গে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে তাঁকে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনিও সমর্থন দিয়েছেন।
বর্তমানে ইরানে মূল্যস্ফীতি ১৮ শতাংশ। সরকারি হিসাবে বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশ। তবে প্রকৃত হার আরও অনেক বেশি। কোনো রকমে জীবন ধারণ করতে পারার মতো আয় হয় না, এমন অনেকের তথ্য এই পরিসংখ্যানে নেই। এ ছাড়া দিন দিন বাড়ছে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য।
আলী খেইরখা (৪৮) নামের এক গৃহ পরিচ্ছন্নতা কর্মী জানালেন, তিনি যে কারখানায় কাজ করতেন, গত পাঁচ মাস আগে এটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর তিনি এই কাজটি নেন। তেহরানে রেখে পরিবারের খরচ মেটাতে পারছেন না বলে তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ সন্তানের মুখ দেখতে না পারার কষ্টের কথা জানান তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘জীবন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। রুহানির প্রতিশ্রুতি শুনে আমি তাঁকে ভোট দিয়েছিলাম, আশা করি তিনি তা পূরণ করবেন।’
ইরানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, খাদ্যসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র বা ইইউ কোনো অবরোধ আরোপ করেনি। তবে বৈদেশিক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এগুলো কেনা যাচ্ছে না। আবার দেশটির অনেক বন্দর কালো তালিকাভুক্ত থাকায়, এগুলো ব্যবহার করে পণ্য আমদানি করা যায় না। চাহিদা বেশি আর জোগান কম থাকায় অর্থনীতির সূত্র মেনে পণ্যের দাম দিন দিন চড়া হচ্ছে।
বন্দর আব্বাসের ৩৫ বছর বয়সী শিক্ষিকা মিনা ভাকিলি বলেন, ‘আমার দুই সন্তান। আমি ও আমার স্বামী দুজনেই আয় করি। এর পরও সন্তানদের মৌলিক চাহিদাটুকু মেটাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। আমার মনে হয়, পারমাণবিক চুক্তিটি হবে। এই চুক্তির রাজনৈতিক দিক নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমার জীবন ও অর্থনীতির উন্নতি হোক, এটাই আমার চাওয়া।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকটি সফল হবে এবং দুই পক্ষ চুক্তিতে যাবে—এমন আশায় আছেন ব্যবসায়ীরাও। গোলাম আলী হাসানি নামের এক ব্যবসায়ীর ভাষায়, ‘আমি চুক্তি সইয়ের অপেক্ষায় আছি। চুক্তিটি হলেই নতুন নতুন পণ্য কিনব। পণ্যের দাম তখন কমবে, ব্যবসাও জমবে।’
এই বৈঠকের সাফল্যের আশায় আছেন তরুণেরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাসের দাদপারভার বলেন, ‘আমি সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে চাই।’ এএফপি অবলম্বনে
No comments