‘আমরা কাপড় চাই না, মায়েরে ফেরত চাই’ by সামছুর রহমান ও কামরান পারভেজ
ঘরটির
প্রস্থ ৫ ফুট, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট। আসবাব বলতে একটা চৌকি। মেঝে-চৌকিতে ১২-১৩
জন মানুষ ইফতারি সামনে নিয়ে বসে আছেন। আজান পড়ছে। কেউ মুখে পানি তুলছেন
না। নিথর বসে থাকা মানুষগুলোর চোখে জল। হঠাৎ একজন ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন,
‘মায়ে কইছিল আজকে আমার লগে ইফতার করব।’
কাঁদতে থাকা রহমত আলীকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন অন্যরা। একে অন্যকে বলতে থাকেন, ‘মুখে দেন, একটু কিছু খান।’ কিন্তু মাখা মুড়ি, পাউরুটি সেভাবেই পড়ে থাকে। এই পরিবারের মা শামীমা বেগম গতকাল শুক্রবার ময়মনসিংহ শহরের অতুল চক্রবর্তী সড়কে জাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা গেছেন। শামীমা বেগমের মেয়ে সখিনা ও তাঁর দুই বছরের নাতনি লামিয়াও মারা গেছে একটি কাপড়ের জন্য।
গতকাল সন্ধ্যায় শহরের পাটগুদাম বিহারিপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের তিনজনকে হারিয়ে শামীমার পুরো পরিবার শোকে মুহ্যমান। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে আত্মীয়স্বজন এসেছেন। দুপুরে জুমার নামাজের পর নিহত ব্যক্তিদের দাফন দিয়ে এসেছেন।
মা, বোন, ভাগনিকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রহমত আলী বলেন, ‘আরও দুই-চার বছর ধইরা মায়েরে মানা করি। অন্যের কাছ থেকে চাওয়ার অভ্যাস নাই। মা বলে যামু না। এবার চইল্যা গেল। একটা কাপড়ের লিগা আমার মায়ে মইরা গেল। আমরা কাপড় চাই না, মায়েরে ফেরত চাই।’
দুই বছরের অবুঝ লামিয়া মায়ের কোলে চড়ে গিয়েছিল জাকাতের কাপড় আনতে। ফিরে এসেছে বাবার কাঁধে লাশ হয়ে। লামিয়ার মামি রেহানা বিলাপ করছেন, ‘কেন ওর মা ওরে নিয়া গেল। কার পায়ের চাপ খাইয়া বাচ্চাটার চেহারার একপাশ লাল হইয়া আছিল।’
রহমত আলীদের পাশের বাড়ি থেকে জাকাতের কাপড় আনতে গিয়েছিলেন হাবিবুর রহমান, তাঁর মা হাজেরা খাতুন, স্ত্রী শামীমা। হাবিবুর আর শামীমা জীবিত ফিরে এলেও হাজেরা খাতুন ফিরেছেন লাশ হয়ে।
ইফতারের আগ মুহূর্তে ছোট ঘরে বসে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একসঙ্গে যাওয়ার কথা। মা আগেই চলে গেছে। ওইখানে দেখা হইলে কইলাম, আম্মা যাইয়েন না ভিড় আছে। কোন দিক দিয়া গিয়া যে চিপার মধ্যে ঢুইকা গেছে। অনেকটি লাশ সরাইয়া মায়েরে বাইর করছি। ততক্ষণে মায়ের দম চইলা গেছে।’
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্রপারের থানা ঘাট থেকে কালীবাড়ি ঘাট এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় গতকাল ছিল কান্নার রোল। কেউ কেউ কাঁদছেন স্বজন হারিয়ে, কেউ কাঁদছেন চোখের সামনে প্রতিবেশীর মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। পদদলিত হয়ে প্রাণ হারানো অনেকেরই বাড়ি ওই এক কিলোমিটারের মধ্যে।
মা খোদেজা বেগমকে (৪৫) হারিয়ে তাঁর মেয়ে মিতু আক্তার ও ছেলে মো. এরশাদ বিলাপ করছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন কাছ থেকে খোদেজার মৃত্যু দেখা আনোয়ারা বেগম ও আশেয়া খাতুন। একটু পর পর চোখের পানি মুছে মুছে তাঁরা দুজন জানালেন, কাপড় আনতে থানা ঘাটের বস্তি থেকে কমপক্ষেÿ৫০০ নারী ও বেশ কিছু শিশু গিয়েছিল ওই বাড়িতে। খোদেজা বেগম যখন পদদলিত হন, তখন আনোয়ারা নিজে ওই বাড়ির ফটকের একটি লোহার অংশকে আঁকড়ে ধরে জীবন বাঁচান। একটু পর জনস্রোত কমলে তিনি নিজে ও আর কয়েকজন মিলে খোদেজার মৃতদেহ টেনে বের করে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভোরে রিকশা ছিল খুব কম, হাসপাতালে নেওয়া হয়নি—বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা।
কাঁদতে থাকা রহমত আলীকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন অন্যরা। একে অন্যকে বলতে থাকেন, ‘মুখে দেন, একটু কিছু খান।’ কিন্তু মাখা মুড়ি, পাউরুটি সেভাবেই পড়ে থাকে। এই পরিবারের মা শামীমা বেগম গতকাল শুক্রবার ময়মনসিংহ শহরের অতুল চক্রবর্তী সড়কে জাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা গেছেন। শামীমা বেগমের মেয়ে সখিনা ও তাঁর দুই বছরের নাতনি লামিয়াও মারা গেছে একটি কাপড়ের জন্য।
গতকাল সন্ধ্যায় শহরের পাটগুদাম বিহারিপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের তিনজনকে হারিয়ে শামীমার পুরো পরিবার শোকে মুহ্যমান। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে আত্মীয়স্বজন এসেছেন। দুপুরে জুমার নামাজের পর নিহত ব্যক্তিদের দাফন দিয়ে এসেছেন।
মা, বোন, ভাগনিকে হারিয়ে পাগলপ্রায় রহমত আলী বলেন, ‘আরও দুই-চার বছর ধইরা মায়েরে মানা করি। অন্যের কাছ থেকে চাওয়ার অভ্যাস নাই। মা বলে যামু না। এবার চইল্যা গেল। একটা কাপড়ের লিগা আমার মায়ে মইরা গেল। আমরা কাপড় চাই না, মায়েরে ফেরত চাই।’
দুই বছরের অবুঝ লামিয়া মায়ের কোলে চড়ে গিয়েছিল জাকাতের কাপড় আনতে। ফিরে এসেছে বাবার কাঁধে লাশ হয়ে। লামিয়ার মামি রেহানা বিলাপ করছেন, ‘কেন ওর মা ওরে নিয়া গেল। কার পায়ের চাপ খাইয়া বাচ্চাটার চেহারার একপাশ লাল হইয়া আছিল।’
রহমত আলীদের পাশের বাড়ি থেকে জাকাতের কাপড় আনতে গিয়েছিলেন হাবিবুর রহমান, তাঁর মা হাজেরা খাতুন, স্ত্রী শামীমা। হাবিবুর আর শামীমা জীবিত ফিরে এলেও হাজেরা খাতুন ফিরেছেন লাশ হয়ে।
ইফতারের আগ মুহূর্তে ছোট ঘরে বসে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একসঙ্গে যাওয়ার কথা। মা আগেই চলে গেছে। ওইখানে দেখা হইলে কইলাম, আম্মা যাইয়েন না ভিড় আছে। কোন দিক দিয়া গিয়া যে চিপার মধ্যে ঢুইকা গেছে। অনেকটি লাশ সরাইয়া মায়েরে বাইর করছি। ততক্ষণে মায়ের দম চইলা গেছে।’
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্রপারের থানা ঘাট থেকে কালীবাড়ি ঘাট এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় গতকাল ছিল কান্নার রোল। কেউ কেউ কাঁদছেন স্বজন হারিয়ে, কেউ কাঁদছেন চোখের সামনে প্রতিবেশীর মৃত্যুর দৃশ্য দেখে। পদদলিত হয়ে প্রাণ হারানো অনেকেরই বাড়ি ওই এক কিলোমিটারের মধ্যে।
মা খোদেজা বেগমকে (৪৫) হারিয়ে তাঁর মেয়ে মিতু আক্তার ও ছেলে মো. এরশাদ বিলাপ করছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন কাছ থেকে খোদেজার মৃত্যু দেখা আনোয়ারা বেগম ও আশেয়া খাতুন। একটু পর পর চোখের পানি মুছে মুছে তাঁরা দুজন জানালেন, কাপড় আনতে থানা ঘাটের বস্তি থেকে কমপক্ষেÿ৫০০ নারী ও বেশ কিছু শিশু গিয়েছিল ওই বাড়িতে। খোদেজা বেগম যখন পদদলিত হন, তখন আনোয়ারা নিজে ওই বাড়ির ফটকের একটি লোহার অংশকে আঁকড়ে ধরে জীবন বাঁচান। একটু পর জনস্রোত কমলে তিনি নিজে ও আর কয়েকজন মিলে খোদেজার মৃতদেহ টেনে বের করে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভোরে রিকশা ছিল খুব কম, হাসপাতালে নেওয়া হয়নি—বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা।
No comments