‘আইএস জোর করে তুলে নিয়ে যায় আবদুল মান্নানের পরিবারকে’
বৃটেনে
বসবাসরত এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পরিবারের ১২ সদস্যকে কৌশলে ফাঁদে ফেলে
সিরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা সেখানে শীর্ষ জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে
(আইএস) যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করছে আইএস। ইংল্যান্ডের বেডফোর্ডশায়ারের লুটন
শহরতলিতে পরিবারটির বসবাস। লুটন থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন
৭৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, তার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও
নাতি-নাতনিসহ পরিবারের ১০ সদস্য। আর এখন ওই পরিবারটিকে তাদের ইচ্ছার
বিরুদ্ধে সিরিয়ায় আটকে রেখেছে আইএস। আবদুল মান্নানের পুত্র সেলিম হোসেন
বৃটেনভিত্তিক আইটিভি নিউজকে এ তথ্য দিয়েছেন। গত মে মাসে লুটান থেকে
বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন মান্নান ও তার পরিবারের ১১ সদস্য। এরপর
থেকেই তারা নিরুদ্দেশ। গত সপ্তাহে হঠাৎ আবদুল মান্নানের একটি ছবি সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আইএসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়,
পরিবারটি ‘অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে নিরাপদ’ রয়েছে এবং পরিবার ১২ সদস্যই
আইএসে যোগদান করেছেন। কিন্তু, আইটিভি নিউজকে সেলিম জানান, তার পিতাকে জোর
করে একটি গাড়িতে তোলা হয় এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে সিরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সিরিয়া থেকে টেলিফোনে কথা বলার সময় তার পিতা ভীষণ কান্নাকাটি করছেন বলে
জানান সেলিম হোসেন। তিনি বলেন, আমার পিতা দ্বিধান্বিত, বিমর্ষ এবং তিনি
প্রতিদিন কান্নাকাটি করছেন। তিনি শান্তিতে নেই। সেলিম দাবি করেন, ঘটনার দিন
তার পরিবার ইস্তাম্বুলে ছিলেন। এ সময় তাদের হোটেল কক্ষে একদল অজ্ঞাত
ব্যক্তি পাসপোর্ট যাচাই করতে যায়। এরপর একে একে ওই পরিবারের ১০ সদস্যকে
হোটেল ভবনের নিচে নামানো হয়। সেলিম জানান, ওই ব্যক্তিরা আবদুল মান্নান ও
তার স্ত্রীকে সন্তান ও নাতি-নাতনীদের ছাড়াই বৃটেনে ফিরে যেতে বলে। কিন্তু,
তারা রাজি হননি। এরপর ১২ জনকে দুই ভাগে হোটেলের বাইরে অপেক্ষমান দুটি
গাড়িতে ওঠানো হয়। আইএস সদস্যদের মতো পিতা কেন ছবিতে একটি আঙুল প্রদর্শন
করছেন? এর জবাবে সেলিম বলেন, আইএসকে সমর্থন জানানোর জন্য নয়, বরং তা আইএসের
‘প্রোপাগান্ডা’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার কোন ভাইবোনের মধ্যে মৌলবাদে
জড়িয়ে পড়ার কোন লক্ষণ কখনোই দেখা যায়নি এবং তারা কখনও সিরিয়ায় পালিয়ে
যাওয়ার পরিকল্পনাও করেননি। পরিবারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তার কাছে কোন ক্লু
বা সূত্র আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। সেলিম বলেন, না, অস্বাভাবিক কিছুই
নয়। তিনি বলেন, আমি যদি তেমন কিছু জানতাম, আমি তাদের থামাতাম। পুলিশ তাদের
মধ্যে মৌলবাদের কিছুই খুঁজে পায়নি। কোন প্রমাণ নেই, সন্দেহজনক কিছুই নেই।
তিনি বলেন, যদি এটা স্বাভাবিক না হতো বা সন্দেহজনক হতো, তাহলে সেটা আমার
জানা থাকতো। কিন্তু, তেমন কিছুই ঘটেনি। কোন লক্ষণ নেই। যদি কোন লক্ষণ
থাকতো, তাহলে সেটা আমি ধরতে পারতাম। আবেগের সুরে তিনি তার পরিবারকে বৃটেনে
ফেরার অনুরোধ জানান। তারা চলে যাওয়ার পর, তিনি শূন্য বোধ করছেন বলে জানান।
ইংল্যান্ডের ফরেইন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা
বেডফোর্ডশায়ার পুলিশ ও তুরস্কের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে ঘনিষ্ঠভাবে
কাজ করছেন।
No comments