রাষ্ট্রগুলো ‘মানুষ নিয়ে পিংপং’ খেলছে
ভূমধ্যসাগরে
অভিবাসী পাচার ইস্যু নিয়ে যে শোরগোল তাতে আড়াল হয়ে গেছে হাজারো বাংলদেশী ও
রোহিঙ্গাদের চরম দূদর্শা। পশ্চিমা রাজনীতিক আর গণমাধ্যমের দৃষ্টিও তেমনটা
পড়েনি। কিন্তু সম্প্রতি প্রায় ৬০০ মানুষ বহনকারী দুটি নৌকা তীরে ভিড়তে না
দিয়ে সাগরে ঠেলে দেয়ার যে উদাসীন পদক্ষেপ মালয়েশিয়া নিয়েছে তাতে হয়তো
বিশ্বের অন্যতম বড় এ অভিবাসন সঙ্কটের দিকে সবার মনোযোগ ফিরতে পরে। একইরকম
অবিবেকপ্রসূত পদক্ষেপ নিয়েছে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া। বৃটেনের প্রভাবশালী
দৈনিক গার্ডিয়ানের সহকারী সম্পাদক সাইমন টিসডাল এক কলামে এসব কথা লিখেছেন।
তিনি আরও লিখেছেন, মালয়েশিয়ার বন্দরগুলো বন্ধ করে দেয়ার সরকারী
সিদ্ধান্তের পর দেশটির কর্মকর্তারা ওই দুই নৌকাকে সাগরে ফিরে যেতে বাধ্য
করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পরবর্তীতে থাইল্যান্ডের সমুদ্র সীমায় যে
নৌকাগুলোকে ভাসতে দেখা যায় তারমধ্যে সেটিও ছিল বলে ধারণ করা হয়। সে দেশের
কর্তৃপক্ষও সাফ জানিয়ে দেয় যে তারা স্বাগত নয়। ওই নৌকার এক রোহিঙ্গা
শরণার্থী জানিয়েছেন, তাদের ওই ভয়াল যাত্রায় ১০ জন মারা গেছে। মৃতদেহগুলো
তারা সাগরে ফেলে দেয়। দুমাস ধরে তারা সাগরে ভাসছেন বলে জানান। খাবার পানির
অভাবে দূর্বল হয়ে পড়া নৌকার যাত্রীর মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। সহায়তা
সংগঠনগুলোর কর্মীদের অনুমান, সাগরে ভাসছেন ৬হাজারের মতো অভিবাসী। তাদের
যাওয়ার কোন জায়গা নেই। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর সতর্কবার্তা
দিয়ে বলেছে, তাদেরকে সাহায্য করতে ইচ্ছাকৃত অস্বীকৃতি দ্রুতই বড় ধরণের
মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা
প্রকাশ করেছে, নৌকার আরোহীরা ক্ষুধার্থ ও অসুস্থ। একইসঙ্গে তারা
পানিশূন্যতায় ভুগছে। তাদের এ অবস্থা শুধুই অবনতির দিকে যাচ্ছে। আর এদিকে
দায়িত্বজ্ঞানহীন আঞ্চলিক সরকারগুলো উদ্ধার অভিযান চালানোর বিষয়টি এড়িয়ে
যাচ্ছে। বরং তারা এ সমস্যাটি অন্যের ওপর বর্তানোর চেষ্টা করছেন। নিউইয়র্ক
ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ফিল রবার্টসন বলেন, থাই,
মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় নৌ বাহিনীদের মানুষ নিয়ে এ ত্রিমুখি পিংপং খেলা বন্ধ
করা উচিত। এর পরিবর্তে দূর্দশাগ্রস্থ এসব নৌকার আরোহীদের উদ্ধারে তাদের
একসঙ্গে কাজ করা উচিত। লন্ডন ভিত্তিক অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে,
এটা চিন্তা করাই হৃদয়বিদারত যে শ’ শ’ মানুষ এ মুহুর্তে খাবার পানি ছাড়া
মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে সাগরে ভাসছে। তারা কোথায় আছে সেটাও জানেনা এসব অসহায়
মানুষ। ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, তারাও ৪০০ অভিবাসীবাহী একটি নৌকা ফিরিয়ে
দিয়েছে। তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা জানা যায় নি। সাগরে নৌকা ফিরিয়ে দেয়ার
সাম্প্রতিক এ সিদ্ধান্তের আগে অবশ্য কয়েক শ মানুষ ইন্দোনেশিয়ায় পৌছায়।
ওদিকে মালয়েশিয়ার লঙ্কাওয়িতে পৌছায় আনুমানিক ১০০০। থাইল্যান্ডের মতো
মালয়েশিয়াও তাদের রমরমা পর্যটন বানিজ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা
অপ্রত্যাশিত এ মানবিত সঙ্কট তাদের উপকূলে হাজির হওয়ায় তা পর্যটনের ওপর
নেতীবাচক প্রভাব ফেলবে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপপন্ত্রী ওয়ান
জুনাইদি টুয়ানকু জাফর বলেন, এ সমস্যার মূল কারণ হলো মিয়ানমার ও বাংলাদেশের
রাজনৈতিক অস্থীতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সমস্যা। তিনি আরও বলেন, ‘ আমরা কি
করবো বলে তারা আমাদের কাছে প্রত্যাশা করেন? যারা আমাদের সীমান্তে এসেছে,
তাদের সঙ্গে আমরা ভালো ব্যবহার করেছি। আমরা তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করেছি
কিন্তু এভাবে তারা দলে দলে আমাদের উপকূলে ভিড়তে পারে না। ধারণা করা হয়, গত
তিন বছরে মিয়ানমার থেকে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়েছে। বেশিরভাগ
ক্ষেেেত্র তারা মানবপাচারকারীদের হাতে মোটা অঙ্কের অর্থ তুলে দিয়ে নৌকায়
উঠেছে। পরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে থাইল্যান্ডের ট্রানসিট ক্যাম্পে যেখানে
ধর্ষণ, মারধোরসহ নানা শারীরিক নির্যাতন ঘটে অহরহ। থাইল্যান্ড সম্প্রতি এসব
ক্যাম্পগুলোর ওপর কঠোর অভিযান শুরু করায় সঙ্কট আরও বড় আকার ধারণ করেছে বলে
মনে হচ্ছে। এতে করে পাচারকারীদের নৌকাগুলো থাইল্যান্ডের উপকূলে না ভিড়ে
সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। আর যেখানে পারছে সেখানে শরণার্থীদের নামিয়ে দিচ্ছে।
থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী থানাসাক পাতিমাপ্রাকর্ণ বলেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো শরণার্থী শিবির স্থাপন করবে না। তবে, স্বল্পমেয়াদে মানবিক সহায়তা দিতে তারা ইচ্ছুক। এদিকে, ২৯শে মে এ অঞ্চলের দেশগুলো মানব পাচার ও চোরাচালান রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে বৈঠকে যোগ দেবে। দেশগুলোর সামনে এখন যে চ্যালেঞ্জ তা একাধারে বিরাট গুরুতর ও জরুরি।
থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী থানাসাক পাতিমাপ্রাকর্ণ বলেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো শরণার্থী শিবির স্থাপন করবে না। তবে, স্বল্পমেয়াদে মানবিক সহায়তা দিতে তারা ইচ্ছুক। এদিকে, ২৯শে মে এ অঞ্চলের দেশগুলো মানব পাচার ও চোরাচালান রোধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে বৈঠকে যোগ দেবে। দেশগুলোর সামনে এখন যে চ্যালেঞ্জ তা একাধারে বিরাট গুরুতর ও জরুরি।
No comments