জামায়াতের ব্যাপারে ভারতের মুনিসের আশা -ভারতীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর বই থেকে
ভারতীয় জামায়াতের শীর্ষ নেতা মাওলানা শফি মুনিস বিশ্বাস করেন পাকিস্তানের জামায়াতের চেয়ে বাংলাদেশের জামায়াতের ভবিষ্যৎ ভাল। তারাই একদিন বাংলাদেশে একটি নতুন ইসলামি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটাতে পারে। তবে লক্ষণীয় হচ্ছে- মাওলানা মুনিস তার এ রকম আশাবাদ ২০০৮ সালে অধ্যাপক মাইদুল ইসলামের কাছে ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি এ রকম আশাবাদের পেছনে একটি ‘স্ট্র্যাটেজিক কারণ’ চিহ্নিত করেন। কিন্তু সেই কৌশলগত কারণটা কি তা অধ্যাপক ইসলাম তাঁর বইয়ে প্রকাশ করেননি।
অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘এখানে এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ভারতের জামাত ইসলামী হিন্দ নেতা মাওলনা শফি মুনিস কেবল নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে কথা বলা নয়, বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্রের একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রকল্পের জন্য একটি স্ট্র্যাটেজিক কারণের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে জামায়াত অদূর ভবিষ্যৎ তার আদর্শগত ও নির্বাচনগত সংকট কাটিয়ে উঠতে কিংবা দীর্ঘমেয়াদে তারা বাংলাদেশে একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করতে পারে কিনা তার উত্তর কালক্রমে ইতিহাস দেবে।’
অধ্যাপক ইসলাম লিখেছেন, এটা কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার পূববর্তী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী অবস্থান থেকে সরে আসতে শুরু করেছে। তারা ভাষাগত এবং জাতীয়বাদী প্রশ্নেও আপস করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে জাতীয়তাবাদ ও ভাষাগত এই দুটি প্রশ্নই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভাবধারায় মিশে গিয়েছিল। জামায়াত এখন বলছে, তারাও ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রভৃতিতে শরিক হয়েছিল। ওই গৌরবের ভাগ তাদেরও আছে। এমনকি তারা তাদের সংগঠনের নাম জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ পাল্টে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রেখেছে। তবে এসব পরিবর্তন মনে হতে পারে তারা নিজেদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন করার প্রয়োজনে করছে। এটা কৌশলগত কিংবা কসমেটিক আর এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের ইসলামবাদীদের সংকট ফুটে উঠছে। এর কারণ হলো একটি পর্যায়ের পরে জনসাধারণের কাছে ইসলাম দিয়ে যেসব কিছু দাবি করা হয়, তার আবেদন হারিয়ে ফেলে। ইসলামবাদীদের এই সংকট সাম্প্রতিককালে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশে অ-ধর্মনিরপেক্ষ কোন একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এবং ইসলামী রাজনৈতিক দল বা প্রকল্পের সঙ্গে জনগণের নিজেদেরকে একাত্ম করার উভয় বিষয় একটি সংকটে নিপতিত হয়েছে। এ রকম একটি সংকটকালীন পরিস্থিতি কেবলই ইসলামবাদীদের সীমাবদ্ধতাই পরিষ্কার করছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে. বাংলাদেশে একটি নতুন ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক মোর্চার উত্থানের প্রেক্ষাপটে তাদের পক্ষে আরেকটি শক্তিশালী আদর্শগত দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব নয়।
ওই বইয়ে লেখা হয়, ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার সরকারের চিন্তা-ভাবনার ফলেও জামায়াতের সংকট গভীরতর হয়েছে। চলমান সংকটকে জামায়াত কিভাবে মোকাবিলা করে এবং নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে জামায়াত কি করে একটি প্রতিসাম্যমূলক শক্তি হয়ে ওঠে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটা প্রতীয়মান হয় যে, জামায়াত তার বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে ভারতবিরোধী অবস্থানকে শক্তিশালী করে তুলছে এবং তারা একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের উভয়ের পুতুল সরকার হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই তারা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের উত্তরে টিপাইমুখ বাঁধ দেয়াকে কেন্দ্র করে তারা তাদের ভারতবিরোধী বাগাড়ম্বরকে তীব্র করেছে।
জামায়াত নেতৃবৃন্দ আরও বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য ভারত বিরোধী জনগোষ্ঠী রয়েছে এবং তাদের অন্যতম বড় লক্ষ্য হচ্ছে ওই জনগোষ্ঠীর কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। এ ধরনের ভারতবিরোধিতা অবশ্য বাংলাদেশে নতুন নয়। মুজিব শাসনামলের শেষ দিনগুলোতে এবং আশির দশকের গোড়ায় জিয়াউর রহমানের আমলে এটা দেখা গিয়েছিল। কতিপয় ভাষ্যকার মনে করেন যে, বাংলাদেশে এ ধরনের ভারতবিরোধী মনোভাব জাগরুক হওয়ার পেছনে রয়েছে ভারতের ব্যবসায়ী স্বার্থ এবং রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহোযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখা।
অধ্যাপক ইসলাম লিখেছেন, জামায়াত বুদ্ধিজীবী প্রফেসর চৌধুরী মাহমুদ হাসান মনে করেন, বিশেষ কোন আদর্শগত ভিত্তি ছাড়াই বিএনপি যেহেতু শিথিলভাবে গঠিত একটি সংগঠন তাই দলটি বহুলাংশে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ক্যারিশমার উপর অনেকটাই নির্ভর করে থাকে। আর তাই খালেদা জিয়ার পরে বিএনপি দুর্বল হবে। অসংগঠিত এমনকি খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেতে পারে। আর তখনই জামায়াত ভারত বিরোধী অবস্থানকে পুঁজি করে বিএনপির একটি বড় অংশের সমর্থন নিতে পারবে।’
অধ্যাপক ইসলাম লিখেছেন যে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে আমি যখন বাংলাদেশের ওপর কাজ করছিলাম তখন একদিন ভারতীয় জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতা মাওলানা শফি মুনিস আমার কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা কিন্তু পাকিস্তান জামায়াতের চেয়ে একটি সফল রাজনৈতিক প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের জামায়াতের উপর বেশি আস্থাবান। তিনি উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তানে জমিদার শ্রেণীর অস্তিত্ব এ ধরনের একটি রাজনৈতিক প্রকল্পের জন্য একটি বাড়তি প্রতিবন্ধকতা। কারণ জমিদারি শ্রেণীর কারণে অনেক ধরনের ‘অ-ইসলামিক বিনোদন’ উপভোগের বিষয় থাকে এবং মানুষ তার উপর আকৃষ্ট হয়। এর বিপরীতে দেখা যায় বাংলাদেশে পাকিস্তানের মতো কোন জামিদারি শ্রেণী নেই।’
অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘এখানে এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ভারতের জামাত ইসলামী হিন্দ নেতা মাওলনা শফি মুনিস কেবল নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে কথা বলা নয়, বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্রের একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রকল্পের জন্য একটি স্ট্র্যাটেজিক কারণের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে জামায়াত অদূর ভবিষ্যৎ তার আদর্শগত ও নির্বাচনগত সংকট কাটিয়ে উঠতে কিংবা দীর্ঘমেয়াদে তারা বাংলাদেশে একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করতে পারে কিনা তার উত্তর কালক্রমে ইতিহাস দেবে।’
অধ্যাপক ইসলাম লিখেছেন, এটা কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার পূববর্তী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী অবস্থান থেকে সরে আসতে শুরু করেছে। তারা ভাষাগত এবং জাতীয়বাদী প্রশ্নেও আপস করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে জাতীয়তাবাদ ও ভাষাগত এই দুটি প্রশ্নই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভাবধারায় মিশে গিয়েছিল। জামায়াত এখন বলছে, তারাও ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রভৃতিতে শরিক হয়েছিল। ওই গৌরবের ভাগ তাদেরও আছে। এমনকি তারা তাদের সংগঠনের নাম জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ পাল্টে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রেখেছে। তবে এসব পরিবর্তন মনে হতে পারে তারা নিজেদের ভাবমূর্তি পরিচ্ছন্ন করার প্রয়োজনে করছে। এটা কৌশলগত কিংবা কসমেটিক আর এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের ইসলামবাদীদের সংকট ফুটে উঠছে। এর কারণ হলো একটি পর্যায়ের পরে জনসাধারণের কাছে ইসলাম দিয়ে যেসব কিছু দাবি করা হয়, তার আবেদন হারিয়ে ফেলে। ইসলামবাদীদের এই সংকট সাম্প্রতিককালে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশে অ-ধর্মনিরপেক্ষ কোন একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান এবং ইসলামী রাজনৈতিক দল বা প্রকল্পের সঙ্গে জনগণের নিজেদেরকে একাত্ম করার উভয় বিষয় একটি সংকটে নিপতিত হয়েছে। এ রকম একটি সংকটকালীন পরিস্থিতি কেবলই ইসলামবাদীদের সীমাবদ্ধতাই পরিষ্কার করছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে. বাংলাদেশে একটি নতুন ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক মোর্চার উত্থানের প্রেক্ষাপটে তাদের পক্ষে আরেকটি শক্তিশালী আদর্শগত দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা সম্ভব নয়।
ওই বইয়ে লেখা হয়, ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার সরকারের চিন্তা-ভাবনার ফলেও জামায়াতের সংকট গভীরতর হয়েছে। চলমান সংকটকে জামায়াত কিভাবে মোকাবিলা করে এবং নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে জামায়াত কি করে একটি প্রতিসাম্যমূলক শক্তি হয়ে ওঠে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটা প্রতীয়মান হয় যে, জামায়াত তার বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে ভারতবিরোধী অবস্থানকে শক্তিশালী করে তুলছে এবং তারা একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের উভয়ের পুতুল সরকার হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই তারা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের উত্তরে টিপাইমুখ বাঁধ দেয়াকে কেন্দ্র করে তারা তাদের ভারতবিরোধী বাগাড়ম্বরকে তীব্র করেছে।
জামায়াত নেতৃবৃন্দ আরও বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য ভারত বিরোধী জনগোষ্ঠী রয়েছে এবং তাদের অন্যতম বড় লক্ষ্য হচ্ছে ওই জনগোষ্ঠীর কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। এ ধরনের ভারতবিরোধিতা অবশ্য বাংলাদেশে নতুন নয়। মুজিব শাসনামলের শেষ দিনগুলোতে এবং আশির দশকের গোড়ায় জিয়াউর রহমানের আমলে এটা দেখা গিয়েছিল। কতিপয় ভাষ্যকার মনে করেন যে, বাংলাদেশে এ ধরনের ভারতবিরোধী মনোভাব জাগরুক হওয়ার পেছনে রয়েছে ভারতের ব্যবসায়ী স্বার্থ এবং রাজনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহোযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখা।
অধ্যাপক ইসলাম লিখেছেন, জামায়াত বুদ্ধিজীবী প্রফেসর চৌধুরী মাহমুদ হাসান মনে করেন, বিশেষ কোন আদর্শগত ভিত্তি ছাড়াই বিএনপি যেহেতু শিথিলভাবে গঠিত একটি সংগঠন তাই দলটি বহুলাংশে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ক্যারিশমার উপর অনেকটাই নির্ভর করে থাকে। আর তাই খালেদা জিয়ার পরে বিএনপি দুর্বল হবে। অসংগঠিত এমনকি খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেতে পারে। আর তখনই জামায়াত ভারত বিরোধী অবস্থানকে পুঁজি করে বিএনপির একটি বড় অংশের সমর্থন নিতে পারবে।’
অধ্যাপক ইসলাম লিখেছেন যে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে আমি যখন বাংলাদেশের ওপর কাজ করছিলাম তখন একদিন ভারতীয় জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতা মাওলানা শফি মুনিস আমার কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা কিন্তু পাকিস্তান জামায়াতের চেয়ে একটি সফল রাজনৈতিক প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশের জামায়াতের উপর বেশি আস্থাবান। তিনি উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তানে জমিদার শ্রেণীর অস্তিত্ব এ ধরনের একটি রাজনৈতিক প্রকল্পের জন্য একটি বাড়তি প্রতিবন্ধকতা। কারণ জমিদারি শ্রেণীর কারণে অনেক ধরনের ‘অ-ইসলামিক বিনোদন’ উপভোগের বিষয় থাকে এবং মানুষ তার উপর আকৃষ্ট হয়। এর বিপরীতে দেখা যায় বাংলাদেশে পাকিস্তানের মতো কোন জামিদারি শ্রেণী নেই।’
No comments