পালপাড়া পোড়াচ্ছে এক সন্ত্রাসী by আনোয়ার পারভেজ
সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন পালপাড়ার মানুষ। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া পালপাড়া থেকে ছবিটি তোলা l ছবি: প্রথম আলো |
দুই
বোন পড়ত কলেজে। একদিন ছোট বোনটিকে তুলে নিয়ে আটকে রেখে তার বাবার কাছে
দুই লাখ টাকা চাঁদা চাইল এক সন্ত্রাসী। এ ঘটনার পরদিন ওই সন্ত্রাসীর ডেরা
থেকে পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হলো মেয়েটিকে। কিন্তু পুলিশ
সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করল না। এতে করে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা পরিবারটি
একদিন দেশ ছেড়ে সপরিবারে চলে গেল ভারতে। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ওই গৃহকর্তার
ভাইই নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য।
এ ঘটনা ২০১২ সালের। ঘটনাস্থল বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের খুব কাছের লোকালয় পালপাড়া। সংখ্যালঘু শতাধিক পাল পরিবার বসবাস করে এই গ্রামে। প্রায় এক যুগ ধরে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন সন্ত্রাসী মোরশেদ আলম (৩৫)। তাঁর বাড়ি পালপাড়ার পাশের আড়িয়া রহিমাবাদ গ্রামে। মোরশেদের ভয়ে ভারতে চলে গেছে ওই পাড়ার আরও কয়েকটি পরিবার। পাড়ার পুরুষেরা এখন রাত জেগে দল বেঁধে পাহারা দেন গ্রাম।
হত্যা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা আছে মোরশেদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, জবরদখল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া, নারী নির্যাতন, বসতবাড়ি ও মৃৎশিল্পে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, মূলত ২০০৩ সাল থেকেই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন মোরশেদ। এর মধ্যে ২০১০ সালে আড়িয়াবাজারে এক চাল ব্যবসায়ীর একটি ঘর দখল করে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন তিনি। সেখানে শুরু করেন মাদক ব্যবসা। এরপর মাদক ব্যবসা ও আধিপত্যের বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের লয়া মিয়া নামের একজনকে হত্যার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
গত ২৭ এপ্রিল গ্রামের বাসিন্দা উৎপল চন্দ্র পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মাটির জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন মোরশেদ ও তাঁর লোকজন। উৎপল জানান, মোরশেদ তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। তিনি ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ৩০ হাজার না দেওয়ায় মোরশেদ লোকজন নিয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা চালান।
পালপাড়ার বাসিন্দা অজয় কুমার পাল জানান, ওই ঘটনার দুই দিন পর ২৯ এপ্রিল রাতে আবার ওই পাড়ায় হানা দেয় মোরশেদের লোকজন। চাঁদা না পাওয়ায় ওই রাতেও হামলা করে পালদের তৈরি মাটির জিনিসপত্র ভাঙচুর করে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা।
অজয় কুমার পালের স্ত্রী পার্বতী পাল বলেন, ‘তিনডা ছল লিয়ে অভাবের সংসার। সারা দিন রোদে-ঘামে কষ্ট করে মাটির জিনিস বানাই। সোয়ামি ভারত করে লিয়ে তা বিক্রি করে। হাড়ভাঙা খাটুনির পর সেদিন রাতে ঘুমায়ে পরিচি। হঠাৎ মধ্যরাতে দরজাত টাক টাক শব্দ। কে কে বলে হামি চিৎকার দিয়ে উঠি। কয় “হামি মোরশেদ। দরজা খোল।” হামি কই, এত রাতে দরজা খোলা যাবে না। মোরশেদ কয়, “চাঁদা যখন দিবা না, আঙ্গিনায় সব মাটির জিনিস ভাঙ্গা ফেললাম।”’
পাড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ পাল বলেন, পর পর দুই রাতে হামলার পর ভয়ে-আতঙ্কে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২৯ এপ্রিল তাঁরা গ্রামের বাসিন্দারা মিলে জেলা সদরে গিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে স্মারকলিপি দেন। এ ছাড়া হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মোরশেদের বিরুদ্ধে ২ মে শাজাহানপুর থানায় তাঁরা মামলাও করেন। কিন্তু আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন পালপাড়া গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের খুব কাছের গ্রাম হলেও লোকালয়টি প্রায় দুর্গম। করতোয়া নদী, অন্য দুই দিকে ঘন জঙ্গলবেষ্টিত এই গ্রামের যাতায়াতের ভরসা একটি মেঠো পথ। সেই মেঠো পথ ধরে পালপাড়ার প্রবেশমুখে পৌঁছাতেই চোখে পড়ল একটি তালাবদ্ধ বাড়ি। এটিই মোরশেদ বাহিনীর আস্তানা বলে জানালেন স্থানীয় লোকজন। কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল পাড়ার উঠানজুড়ে ইটখোলা আর পোড়ামাটির মৃৎশিল্প ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। গ্রামজুড়ে সুনসান পরিবেশ। দেখা মিলল কয়েকজন যুবকের। চোখেমুখে ভীতি-আতঙ্ক। দুর্গামন্দিরের চত্বরে সংখ্যালঘু নারীদের জটলা। সবার চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সাংবাদিক এসেছে শুনেই কেঁদে ফেললেন এক গৃহবধূ। বললেন, ‘দাদা, হামাকেরে ইজ্জত বাঁচান, সম্ভ্রম বাঁচান, এতগুলা মানুষের প্রাণ বাঁচান। ওই সন্ত্রাসীটাক পুলিশ ধরছে না। রাতের বেলা থানা থেকে পুলিশ এসে দুয়েক ঘণ্টার লোক দেখানো টহল দিচ্ছে।’
পালপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অমরেশ চন্দ্র পাল বলেন, এ পাড়ায় ১২০টি পরিবারের বসবাস। অধিকাংশই দরিদ্র। মাটির তৈজসপত্র ও প্রতিমা তৈরি করে কোনো রকমে জীবিকা চালান। তিনি বলেন, ২০০৩ সালে এ পাড়ার গরিব কারিগরদের কাছে চাঁদাবাজি শুরু করেন মোরশেদ। চাঁদা না দেওয়ায় ওই সময় তাঁকেও মারধর করেন।
পালাপাড়ার লোকজন জানান, ২০১২ সালে কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর পাড়াজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রদীপ পাল নামের একজন দুই কন্যা আর স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে চলে যান। সপরিবারে দেশ ছাড়েন শ্যামাপদ পাল ও শ্যামা পাল। গত বছর পাড়ার ডাবলু পালের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন মোরশেদ। সাত দিনের মধ্যে না পেলে তাঁর স্ত্রীকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। এর চার দিনের মাথায় স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান ডাবলু পাল।
পাড়ার বাসিন্দা চায়না পাল বলেন, ‘মরদেরা সারা দিন খাটুনি করে বাড়িত ফিরে। রাতে ঘুম নাই। লাঠি হাতে দল বাঁধে পাহারা দিতে যায়। আর বউ-ঝিগেরে কোনো রকমে দিনটা কেটে যায়, সন্ধ্যা নামলেই বাড়তে থাকে আতঙ্ক।’
পুলিশের তথ্যমতে, মোরশেদ পলাতক। তাঁর বক্তব্য জানার জন্য গতকাল কয়েক দফায় তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মোরশেদ পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানান শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান। তিনি জানান, মোরশেদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা আছে। এর মধ্যে হত্যা ও মাদকের মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। সর্বশেষ চাঁদাবাজির মামলায় তিনি পলাতক।
ওসি মান্নান বলেন, ‘পালপাড়ায় আগে কী হয়েছে সেটা বলতে পারব না। তবে চাঁদাবাজির মামলা দায়েরের পর মোরশেদকে গ্রেপ্তারের সব ধরনের চেষ্টা চলছে। পালপাড়ার আতঙ্ক কাটাতে রাতে সেখানে পুলিশের টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
বগুড়ার এসপি মো. মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোরশেদ ও তাঁর লোকজনকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল মাঠে নামানো হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত প্রতি রাতেই পুলিশ পালপাড়ায় টহল দেবে। প্রয়োজনে সেখানে অস্থায়ী ক্যাম্প করা হবে।’
বগুড়ার ডিসি শফিকুর রেজা বিশ্বাস পালপাড়ার বাসিন্দাদের কাছ থেকে স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, সেখানকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতিতে কিংবা কারও ভয়ে ভীত হয়ে কেউ এলাকাছাড়া হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনা ২০১২ সালের। ঘটনাস্থল বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের খুব কাছের লোকালয় পালপাড়া। সংখ্যালঘু শতাধিক পাল পরিবার বসবাস করে এই গ্রামে। প্রায় এক যুগ ধরে সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন সন্ত্রাসী মোরশেদ আলম (৩৫)। তাঁর বাড়ি পালপাড়ার পাশের আড়িয়া রহিমাবাদ গ্রামে। মোরশেদের ভয়ে ভারতে চলে গেছে ওই পাড়ার আরও কয়েকটি পরিবার। পাড়ার পুরুষেরা এখন রাত জেগে দল বেঁধে পাহারা দেন গ্রাম।
হত্যা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা আছে মোরশেদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, জবরদখল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া, নারী নির্যাতন, বসতবাড়ি ও মৃৎশিল্পে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, মূলত ২০০৩ সাল থেকেই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন মোরশেদ। এর মধ্যে ২০১০ সালে আড়িয়াবাজারে এক চাল ব্যবসায়ীর একটি ঘর দখল করে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী একটি সংগঠনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন তিনি। সেখানে শুরু করেন মাদক ব্যবসা। এরপর মাদক ব্যবসা ও আধিপত্যের বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের লয়া মিয়া নামের একজনকে হত্যার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
গত ২৭ এপ্রিল গ্রামের বাসিন্দা উৎপল চন্দ্র পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মাটির জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন মোরশেদ ও তাঁর লোকজন। উৎপল জানান, মোরশেদ তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। তিনি ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ৩০ হাজার না দেওয়ায় মোরশেদ লোকজন নিয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা চালান।
পালপাড়ার বাসিন্দা অজয় কুমার পাল জানান, ওই ঘটনার দুই দিন পর ২৯ এপ্রিল রাতে আবার ওই পাড়ায় হানা দেয় মোরশেদের লোকজন। চাঁদা না পাওয়ায় ওই রাতেও হামলা করে পালদের তৈরি মাটির জিনিসপত্র ভাঙচুর করে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা।
অজয় কুমার পালের স্ত্রী পার্বতী পাল বলেন, ‘তিনডা ছল লিয়ে অভাবের সংসার। সারা দিন রোদে-ঘামে কষ্ট করে মাটির জিনিস বানাই। সোয়ামি ভারত করে লিয়ে তা বিক্রি করে। হাড়ভাঙা খাটুনির পর সেদিন রাতে ঘুমায়ে পরিচি। হঠাৎ মধ্যরাতে দরজাত টাক টাক শব্দ। কে কে বলে হামি চিৎকার দিয়ে উঠি। কয় “হামি মোরশেদ। দরজা খোল।” হামি কই, এত রাতে দরজা খোলা যাবে না। মোরশেদ কয়, “চাঁদা যখন দিবা না, আঙ্গিনায় সব মাটির জিনিস ভাঙ্গা ফেললাম।”’
পাড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ পাল বলেন, পর পর দুই রাতে হামলার পর ভয়ে-আতঙ্কে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২৯ এপ্রিল তাঁরা গ্রামের বাসিন্দারা মিলে জেলা সদরে গিয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে স্মারকলিপি দেন। এ ছাড়া হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মোরশেদের বিরুদ্ধে ২ মে শাজাহানপুর থানায় তাঁরা মামলাও করেন। কিন্তু আসামি এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন পালপাড়া গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের খুব কাছের গ্রাম হলেও লোকালয়টি প্রায় দুর্গম। করতোয়া নদী, অন্য দুই দিকে ঘন জঙ্গলবেষ্টিত এই গ্রামের যাতায়াতের ভরসা একটি মেঠো পথ। সেই মেঠো পথ ধরে পালপাড়ার প্রবেশমুখে পৌঁছাতেই চোখে পড়ল একটি তালাবদ্ধ বাড়ি। এটিই মোরশেদ বাহিনীর আস্তানা বলে জানালেন স্থানীয় লোকজন। কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল পাড়ার উঠানজুড়ে ইটখোলা আর পোড়ামাটির মৃৎশিল্প ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। গ্রামজুড়ে সুনসান পরিবেশ। দেখা মিলল কয়েকজন যুবকের। চোখেমুখে ভীতি-আতঙ্ক। দুর্গামন্দিরের চত্বরে সংখ্যালঘু নারীদের জটলা। সবার চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সাংবাদিক এসেছে শুনেই কেঁদে ফেললেন এক গৃহবধূ। বললেন, ‘দাদা, হামাকেরে ইজ্জত বাঁচান, সম্ভ্রম বাঁচান, এতগুলা মানুষের প্রাণ বাঁচান। ওই সন্ত্রাসীটাক পুলিশ ধরছে না। রাতের বেলা থানা থেকে পুলিশ এসে দুয়েক ঘণ্টার লোক দেখানো টহল দিচ্ছে।’
পালপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অমরেশ চন্দ্র পাল বলেন, এ পাড়ায় ১২০টি পরিবারের বসবাস। অধিকাংশই দরিদ্র। মাটির তৈজসপত্র ও প্রতিমা তৈরি করে কোনো রকমে জীবিকা চালান। তিনি বলেন, ২০০৩ সালে এ পাড়ার গরিব কারিগরদের কাছে চাঁদাবাজি শুরু করেন মোরশেদ। চাঁদা না দেওয়ায় ওই সময় তাঁকেও মারধর করেন।
পালাপাড়ার লোকজন জানান, ২০১২ সালে কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর পাড়াজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রদীপ পাল নামের একজন দুই কন্যা আর স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে চলে যান। সপরিবারে দেশ ছাড়েন শ্যামাপদ পাল ও শ্যামা পাল। গত বছর পাড়ার ডাবলু পালের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন মোরশেদ। সাত দিনের মধ্যে না পেলে তাঁর স্ত্রীকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। এর চার দিনের মাথায় স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান ডাবলু পাল।
পাড়ার বাসিন্দা চায়না পাল বলেন, ‘মরদেরা সারা দিন খাটুনি করে বাড়িত ফিরে। রাতে ঘুম নাই। লাঠি হাতে দল বাঁধে পাহারা দিতে যায়। আর বউ-ঝিগেরে কোনো রকমে দিনটা কেটে যায়, সন্ধ্যা নামলেই বাড়তে থাকে আতঙ্ক।’
পুলিশের তথ্যমতে, মোরশেদ পলাতক। তাঁর বক্তব্য জানার জন্য গতকাল কয়েক দফায় তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মোরশেদ পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানান শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মান্নান। তিনি জানান, মোরশেদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা আছে। এর মধ্যে হত্যা ও মাদকের মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। সর্বশেষ চাঁদাবাজির মামলায় তিনি পলাতক।
ওসি মান্নান বলেন, ‘পালপাড়ায় আগে কী হয়েছে সেটা বলতে পারব না। তবে চাঁদাবাজির মামলা দায়েরের পর মোরশেদকে গ্রেপ্তারের সব ধরনের চেষ্টা চলছে। পালপাড়ার আতঙ্ক কাটাতে রাতে সেখানে পুলিশের টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
বগুড়ার এসপি মো. মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোরশেদ ও তাঁর লোকজনকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের একাধিক দল মাঠে নামানো হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত প্রতি রাতেই পুলিশ পালপাড়ায় টহল দেবে। প্রয়োজনে সেখানে অস্থায়ী ক্যাম্প করা হবে।’
বগুড়ার ডিসি শফিকুর রেজা বিশ্বাস পালপাড়ার বাসিন্দাদের কাছ থেকে স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, সেখানকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতিতে কিংবা কারও ভয়ে ভীত হয়ে কেউ এলাকাছাড়া হয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
No comments