আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে সংশয় -বার ও বেঞ্চের ভূমিকা নিয়ে সেমিনারে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা |
আইনের
শাসন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে বিচার বিভাগ। কিন্তু
আইনজীবীদের মধ্যে স্পষ্ট রাজনৈতিক বিভক্তি এবং বার (আইনজীবী) ও বেঞ্চের
(বিচারক) মধ্যে সৃষ্ট দূরত্বের ফলে বিচার বিভাগের ওই ভূমিকা নিয়ে সংশয়
দেখা দিয়েছে।
‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বার ও বেঞ্চের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিচারপতি-আইনজীবী নির্বিশেষে সব বক্তা এই সংশয় প্রকাশ করেন। গতকাল শনিবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন এই সেমিনারের আয়োজন করে।
আয়োজক সংস্থার সভাপতি আইনজীবী মনজিল মোরসেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারকেরা কতটা ভূমিকা নিতে পারবেন তা নির্ভর করে আইনজীবীদের ওপর। আইনজীবীরাই হচ্ছেন “আর্কিটেক্ট”। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শুনানির সময় মামলার প্রধান বিষয়টি তাঁরা স্পষ্ট করতে পারেন না। এই কারণে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মামলায় হার হয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এত মামলা অনিষ্পন্ন রেখে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় না।’ তিনি বলেন, আইনজীবীরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে আদালতে আসেন সেই আদালতেরই অবমাননা করেন। আইনি বাধ্যবাধকতায় কোনো মামলায় মক্কেলের জামিন না পেলে তাঁরা ভাঙচুর করেন। আদালত বর্জনের মতো ঘটনাও ঘটে।’
উচ্চ আদালতের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া দ্রুততর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আপিল বিভাগে আমরা প্রতিদিন ২৫-৩০টি মামলা শুনতে চাই। কিন্তু বেলা ১১টার পর সেখানে আইনজীবী খুঁজে পাওয়া যায় না। আগে মামলা শুনানির তালিকায় (কজ লিস্ট) ওঠাতে তদবির করতেন। এখন শুনতে পাই, তালিকায় না ওঠানোর জন্য তদবির করেন। এই অবস্থায় বেঞ্চ কীভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন!’
বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ব্যাপারে অনেকে কটাক্ষ করেন। আমরা চুপ করে থাকি। উচ্চ আদালত সব সময়ই স্বাধীন ছিল। কথা উঠেছিল নিম্ন আদালত সম্পর্কে। মাসদার হোসেন মামলার রায়ে সে বিষয়ে বিচার বিভাগকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, গত ১৪ বছরেও তা আমাদের হাতে আসেনি। নিম্ন আদালতের ওপর তত্ত্বাবধানের ক্ষমতার অনেকটাই এখনো নির্বাহী বিভাগের হাতে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ব্যারিস্টার মইন ফিরোজী বলেন, বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। পারস্পরিক সহযোগিতার ঘাটতি, শ্রদ্ধাবোধের অভাব, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব প্রভৃতি বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করছে। তিনি বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয় ও হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে ৮ দফা সুপারিশ করেন।
সেমিনারে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে একটা মামলা নিয়ে আদালতকে তা বুঝাতে পারব না কেন। একইভাবে বিচারক হলে সময়মতো আদালতে বসব এবং নামবে না কেন। মামলা শুনে সময়মতো রায় দেব না কেন। এগুলো যদি না-ই করি কিংবা করতে না পারি তা হলে বিচারপতি হওয়ার জন্য তদবির করব কেন?’
বিচারপতি আওলাদ আলী বলেন, ‘রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত আইনজীবীদের সমন্বয়ে শক্তিশালী বার হতে পারে না। আর বার শক্তিশালী না হলে বেঞ্চও শক্তিশালী হবে না।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘আইনের শাসনের অত্যন্ত করুণ অবস্থা। আমরা কিছু বলতেও পারি না, আবার সইতেও পারি না। এখানে অনেক কথাই বলা সম্ভব নয়। সামনে আমাদের কিছু ভেজাল আছে। পরে সীমিত পরিসরে সব কথা বলা যাবে।’
আরেকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘আজকাল যাঁরা বেশি বেশি করে আইনের শাসনের কথা বলেন তাঁদের আচরণ আইনের শাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
সেমিনারের সব বক্তাই আইনজীবীদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভক্তির যে কথা বলেছেন, সেমিনারেও তার ছাপ ছিল স্পষ্ট। সেখানে বিএনপিপন্থী কোনো পরিচিত আইনজীবীকে দেখা যায়নি। অথচ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রধানসহ অধিকাংশ পদে তাঁরাই নির্বাচিত প্রতিনিধি।
‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বার ও বেঞ্চের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিচারপতি-আইনজীবী নির্বিশেষে সব বক্তা এই সংশয় প্রকাশ করেন। গতকাল শনিবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন এই সেমিনারের আয়োজন করে।
আয়োজক সংস্থার সভাপতি আইনজীবী মনজিল মোরসেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারকেরা কতটা ভূমিকা নিতে পারবেন তা নির্ভর করে আইনজীবীদের ওপর। আইনজীবীরাই হচ্ছেন “আর্কিটেক্ট”। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শুনানির সময় মামলার প্রধান বিষয়টি তাঁরা স্পষ্ট করতে পারেন না। এই কারণে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মামলায় হার হয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ মামলা বিচারাধীন। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এত মামলা অনিষ্পন্ন রেখে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় না।’ তিনি বলেন, আইনজীবীরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে আদালতে আসেন সেই আদালতেরই অবমাননা করেন। আইনি বাধ্যবাধকতায় কোনো মামলায় মক্কেলের জামিন না পেলে তাঁরা ভাঙচুর করেন। আদালত বর্জনের মতো ঘটনাও ঘটে।’
উচ্চ আদালতের প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া দ্রুততর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। আপিল বিভাগে আমরা প্রতিদিন ২৫-৩০টি মামলা শুনতে চাই। কিন্তু বেলা ১১টার পর সেখানে আইনজীবী খুঁজে পাওয়া যায় না। আগে মামলা শুনানির তালিকায় (কজ লিস্ট) ওঠাতে তদবির করতেন। এখন শুনতে পাই, তালিকায় না ওঠানোর জন্য তদবির করেন। এই অবস্থায় বেঞ্চ কীভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন!’
বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ব্যাপারে অনেকে কটাক্ষ করেন। আমরা চুপ করে থাকি। উচ্চ আদালত সব সময়ই স্বাধীন ছিল। কথা উঠেছিল নিম্ন আদালত সম্পর্কে। মাসদার হোসেন মামলার রায়ে সে বিষয়ে বিচার বিভাগকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, গত ১৪ বছরেও তা আমাদের হাতে আসেনি। নিম্ন আদালতের ওপর তত্ত্বাবধানের ক্ষমতার অনেকটাই এখনো নির্বাহী বিভাগের হাতে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ব্যারিস্টার মইন ফিরোজী বলেন, বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। পারস্পরিক সহযোগিতার ঘাটতি, শ্রদ্ধাবোধের অভাব, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব প্রভৃতি বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করছে। তিনি বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয় ও হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে ৮ দফা সুপারিশ করেন।
সেমিনারে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে একটা মামলা নিয়ে আদালতকে তা বুঝাতে পারব না কেন। একইভাবে বিচারক হলে সময়মতো আদালতে বসব এবং নামবে না কেন। মামলা শুনে সময়মতো রায় দেব না কেন। এগুলো যদি না-ই করি কিংবা করতে না পারি তা হলে বিচারপতি হওয়ার জন্য তদবির করব কেন?’
বিচারপতি আওলাদ আলী বলেন, ‘রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত আইনজীবীদের সমন্বয়ে শক্তিশালী বার হতে পারে না। আর বার শক্তিশালী না হলে বেঞ্চও শক্তিশালী হবে না।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘আইনের শাসনের অত্যন্ত করুণ অবস্থা। আমরা কিছু বলতেও পারি না, আবার সইতেও পারি না। এখানে অনেক কথাই বলা সম্ভব নয়। সামনে আমাদের কিছু ভেজাল আছে। পরে সীমিত পরিসরে সব কথা বলা যাবে।’
আরেকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘আজকাল যাঁরা বেশি বেশি করে আইনের শাসনের কথা বলেন তাঁদের আচরণ আইনের শাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
সেমিনারের সব বক্তাই আইনজীবীদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভক্তির যে কথা বলেছেন, সেমিনারেও তার ছাপ ছিল স্পষ্ট। সেখানে বিএনপিপন্থী কোনো পরিচিত আইনজীবীকে দেখা যায়নি। অথচ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রধানসহ অধিকাংশ পদে তাঁরাই নির্বাচিত প্রতিনিধি।
No comments