মোড়লদের দখলবাজি অসহায় মোসলেমরা
মাতব্বররা জমি দখল করে নেয়ায় কুড়িগ্রামের দাসিয়েরছড়া ছিটমহলের বাসিন্দা মোসলেমের এখন মানবেতর জীবন। তার ৪০ বিঘা জমি দখল হয়ে গেছে। এরকম কয়েক হাজার বাসিন্দা জমি হারিয়ে পাগলপ্রায় |
আদিম
সমাজে যাদের লাঠির জোর ছিল তারাই মাতব্বর। তাদের কথায় ছিল আইন। জোর করে
দখল করত অন্যের জমি। অত্যাচারিত সেই মানুষরা কোনোদিন বিচার পেত না।
দুঃখে-শোকে পাগল হয়ে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করত। আধুনিক যুগে এসেও সেই
আদিম সমাজের নির্যাতিত চরিত্রের খোঁজ মিলেছে ছিটমহলে। এ রকম একটি চরিত্রের
নাম মোসলেম উদ্দিন। কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়েরছড়া ছিটমহলে
যার বসবাস। মাতব্বরদের নির্মম শোষণের শিকার তিনি। তার ৪০ বিঘা জমি জোর করে
দখল হওয়ায় এখন বড় অসহায় তিনি। ১৫ বছর ধরে আদিম মানুষের মতো জীবনযাপন করছেন
মোসলেম। বাগানের ভেতর ছালার চট দিয়ে তৈরি করেছে ঘর। সেখানে কোনো আলো নেই।
অন্ধকারের মধ্যে খাওয়া-দাওয়া করেন। কেবল তাই নয়, তার ঘরে নেই কোনো
বালিশ-তোশক। জমি হারিয়ে পাগলপ্রায় অসহায় মোসলেম যুগান্তরকে বলেন, ‘ছিটমহলে
যার লাঠির জোর আছে ব্যাহে তারাই জমি দখল করি নিবার নাগছে। তামড়াই মোটড়ত ভট
ভট করে চড়ে বেড়াই। এড়াই সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। এর কোনো বিচার নাই। এমড়া
মানুষ নোয়ায় পশু। মুই এমার বিচার চাং বাহে।’
কেবল মোসলেম নন, তার মতো এমন অনেক মোসলেমের অনুসন্ধান পেয়েছে যুগান্তর। যাদের বসবাস লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের একাধিক ছিটমহলে। সম্প্রতি ভারতের রাজ্যসভায় সীমান্ত বিল পাস হওয়ার পর ছিটমহলগুলোর নির্যাতিত মোসলেমরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাদের বর্ণনায় বেরিয়ে এসেছে ছিটমহলের মোড়লদের শোষণের কাহিনী।
প্রসঙ্গত ছিটমহলবাসীর জমির কোনো দালিলিক রেকর্ড নেই। নিজেদের মধ্যে জমিজমার বিনিময়-বিক্রি সাদা কাগজের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। জমির রেকর্ড না থাকার কারণে মাতব্বর-মোড়লরা নিরীহ ছিটমহলবাসীর জমি দখল করে। আর ছিটমহলে জমি নিয়ে মারামারি, কাটাকাটি হয়। এর কোনো বিচার পায় না প্রতারিতরা।
সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় বিচার পাবেন শত শত নির্যাতিত ছিটমহলবাসী। এমন আশায় বুক বেঁধেছেন সাধারণ মানুষ।
ছিটমহলের আদিম মানুষ মোসলেম : ছিটমহলের মানুষ রাষ্ট্রবিহীন এক জনপদের মানুষ। আইনের শাসন না থাকলেও সেখানে নিজেদের পঞ্চায়েত সিস্টেম ছিল। এর নেতারা মাতব্বর-মোড়ল। এসব মাতব্বরের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ছিটমহলের হাজার হাজার মানুষের জমি দখল করেছে লাঠিয়ালরা। আর এমনি মোড়লদের নির্মম শোষণের শিকার মোসলেম উদ্দিন। যার বসবাস দাসিয়েরছড়া ছিটমহলের কালিরহাট গ্রামে। শুক্রবার যুগান্তরকে মোসলেম বলেন, ‘মোর জমিজমা সব ছিল। গ্রামের দেওয়ানির ঘর বুদ্ধি-পরামর্শ করে সব জমি শেষ করে ফেলাইছে, ঠগাইয়ে নিয়ে জবরদখল করে নিছে। বর্তমানে মোর জমিজমা না থাকায় ছোয়া-পোয়া, বউ সগাই ছেড়ে পালাইছে। মুই অ্যাড়া বাড়ি (বাঁশতলায়) ঝুপড়ি তৈয়ার করে আছং। মোর সঙ্গে আজ পনের বছর দেখা নেই তাদের। মানষে মোক কইছে, মোর বউসহ ছোয়া-পোয়া দিল্লিত নাকি কামাই করতে গিছে।’
সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা যায়, অসহায় মোসলেমের বাবার নাম মৃত বুদা মল। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান মোসলেম। বাবা মরে যাওয়ার আগে ৪০ বিঘা জমি রেখে যায়। ১৫ বছর আগে তার বাবা মারা যান। এর পরপরই ওই গ্রামের কথিত মাতব্বররা তার জমি দখল করে নেয়। এরপর ঘরবাড়িহারা মোসলেম কালিরহাট গ্রামের বাজারের দক্ষিণের একটি বাঁশঝাড়ের নিচে ঘর তৈরি করেছেন। মোসলেমের ঘরটি অন্যরকম। আয়তন ছয় ফিট বাই ছয় ফিট। চটের বস্তা দিয়ে তৈরি নামমাত্র বেড়া, ওপরে ভাঙা টিন, ঘরের মধ্যে একটি ভাঙা রিকশা দেখা গেছে।
জমি দখলের এ ব্যাপারে দাসিয়েরছড়া সিটমহলের বাসিন্দা জোবায়দুল ও আশরাফুল জানান, মোসলেমের জমিগুলো দখল করে আছে আলতাফ হোসেন, মতি ভাটিয়া, হাসমত উল্লাহ ও শামসুল ভাটিয়া। জমি দখলকারী এই চারজন ছিটমহলটির কালিরহাট গ্রামের বাসিন্দা। এর মধ্যে আলতাফ হলেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়েরছড়া ছিট ইউনিটের সভাপতি।
ছিটমহলবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মোসলেমের সামনে জমির কথা উঠালে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। এছাড়া লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার উপনচোকি, বাঁশকাটাসহ ৪০টির অধিক ছিটমহলে কয়েক হাজার নিরীহ ব্যক্তির জমি দখল করেছেন মাতব্বর-মোড়লরা। কুগ্রিড়ামের দাসিয়েরছড়া ছিটমহলের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন, ইয়াসিন, আমিনুলসহ কয়েক ছিটমহলবাসী জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ ব্যাপারে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থিত ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের কয়েক হাজার মানুষের জমি দখল করে নিয়েছে মাতব্বর-মোড়লরা। জমি হারিয়ে মোসলেমের মতো মানুষরা আদিম মানুষের মতো বসবাস করছে। নিরীহ ছিটমহলবাসীর জমি যারা দখল করেছে তাদের চিহ্নিত করে জমি ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি।
কেবল মোসলেম নন, তার মতো এমন অনেক মোসলেমের অনুসন্ধান পেয়েছে যুগান্তর। যাদের বসবাস লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের একাধিক ছিটমহলে। সম্প্রতি ভারতের রাজ্যসভায় সীমান্ত বিল পাস হওয়ার পর ছিটমহলগুলোর নির্যাতিত মোসলেমরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাদের বর্ণনায় বেরিয়ে এসেছে ছিটমহলের মোড়লদের শোষণের কাহিনী।
প্রসঙ্গত ছিটমহলবাসীর জমির কোনো দালিলিক রেকর্ড নেই। নিজেদের মধ্যে জমিজমার বিনিময়-বিক্রি সাদা কাগজের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। জমির রেকর্ড না থাকার কারণে মাতব্বর-মোড়লরা নিরীহ ছিটমহলবাসীর জমি দখল করে। আর ছিটমহলে জমি নিয়ে মারামারি, কাটাকাটি হয়। এর কোনো বিচার পায় না প্রতারিতরা।
সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় বিচার পাবেন শত শত নির্যাতিত ছিটমহলবাসী। এমন আশায় বুক বেঁধেছেন সাধারণ মানুষ।
ছিটমহলের আদিম মানুষ মোসলেম : ছিটমহলের মানুষ রাষ্ট্রবিহীন এক জনপদের মানুষ। আইনের শাসন না থাকলেও সেখানে নিজেদের পঞ্চায়েত সিস্টেম ছিল। এর নেতারা মাতব্বর-মোড়ল। এসব মাতব্বরের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ছিটমহলের হাজার হাজার মানুষের জমি দখল করেছে লাঠিয়ালরা। আর এমনি মোড়লদের নির্মম শোষণের শিকার মোসলেম উদ্দিন। যার বসবাস দাসিয়েরছড়া ছিটমহলের কালিরহাট গ্রামে। শুক্রবার যুগান্তরকে মোসলেম বলেন, ‘মোর জমিজমা সব ছিল। গ্রামের দেওয়ানির ঘর বুদ্ধি-পরামর্শ করে সব জমি শেষ করে ফেলাইছে, ঠগাইয়ে নিয়ে জবরদখল করে নিছে। বর্তমানে মোর জমিজমা না থাকায় ছোয়া-পোয়া, বউ সগাই ছেড়ে পালাইছে। মুই অ্যাড়া বাড়ি (বাঁশতলায়) ঝুপড়ি তৈয়ার করে আছং। মোর সঙ্গে আজ পনের বছর দেখা নেই তাদের। মানষে মোক কইছে, মোর বউসহ ছোয়া-পোয়া দিল্লিত নাকি কামাই করতে গিছে।’
সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা যায়, অসহায় মোসলেমের বাবার নাম মৃত বুদা মল। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান মোসলেম। বাবা মরে যাওয়ার আগে ৪০ বিঘা জমি রেখে যায়। ১৫ বছর আগে তার বাবা মারা যান। এর পরপরই ওই গ্রামের কথিত মাতব্বররা তার জমি দখল করে নেয়। এরপর ঘরবাড়িহারা মোসলেম কালিরহাট গ্রামের বাজারের দক্ষিণের একটি বাঁশঝাড়ের নিচে ঘর তৈরি করেছেন। মোসলেমের ঘরটি অন্যরকম। আয়তন ছয় ফিট বাই ছয় ফিট। চটের বস্তা দিয়ে তৈরি নামমাত্র বেড়া, ওপরে ভাঙা টিন, ঘরের মধ্যে একটি ভাঙা রিকশা দেখা গেছে।
জমি দখলের এ ব্যাপারে দাসিয়েরছড়া সিটমহলের বাসিন্দা জোবায়দুল ও আশরাফুল জানান, মোসলেমের জমিগুলো দখল করে আছে আলতাফ হোসেন, মতি ভাটিয়া, হাসমত উল্লাহ ও শামসুল ভাটিয়া। জমি দখলকারী এই চারজন ছিটমহলটির কালিরহাট গ্রামের বাসিন্দা। এর মধ্যে আলতাফ হলেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়েরছড়া ছিট ইউনিটের সভাপতি।
ছিটমহলবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মোসলেমের সামনে জমির কথা উঠালে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। এছাড়া লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার উপনচোকি, বাঁশকাটাসহ ৪০টির অধিক ছিটমহলে কয়েক হাজার নিরীহ ব্যক্তির জমি দখল করেছেন মাতব্বর-মোড়লরা। কুগ্রিড়ামের দাসিয়েরছড়া ছিটমহলের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন, ইয়াসিন, আমিনুলসহ কয়েক ছিটমহলবাসী জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ ব্যাপারে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থিত ১১১টি ভারতীয় ছিটমহলের কয়েক হাজার মানুষের জমি দখল করে নিয়েছে মাতব্বর-মোড়লরা। জমি হারিয়ে মোসলেমের মতো মানুষরা আদিম মানুষের মতো বসবাস করছে। নিরীহ ছিটমহলবাসীর জমি যারা দখল করেছে তাদের চিহ্নিত করে জমি ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি।
ওবায়েদ অংশুমান/ আহসান হাবীব নীলু, আবদুল আজিজ মজনু, কুড়িগ্রামের ছিটমহল থেকে
No comments