দিল্লির নির্বাচন- অহঙ্কার নয়_ এটাই শিক্ষা by সিএম শফি সামি
আমি
ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধান কর্মস্থল
দিলি্ল এবং মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গেই আমাদের কর্মপরিধি
নির্ধারিত। বিশাল ভারতের প্রায় একপ্রান্তে এই রাজধানী শহরের অবস্থান।
প্রকৃত অর্থেই এটি কসমোপলিটন শহর। ভারতের অনেক বড় শহরের সঙ্গে এর পার্থক্য
সহজেই ধরা পড়ে। আমার দায়িত্ব পালনের এক পর্যায়ে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী
ছিলেন আই কে গুজরাল। তার দলটি তেমন বড় ছিল না, কিন্তু তিনি ছিলেন একজন
প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি। তাকে বলতে পারি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তার একটি
কথা এখনও আমার কানে যেন বাজে। তিনি বলেছিলেন_ 'মি. শফি, ভারতের রাজনৈতিক
সংস্কৃতিতে প্রতিপক্ষ কিন্তু নিছকই প্রতিদ্বন্দ্বী, কোনোভাবেই শত্রু নয়।'
প্রায় দেড় যুগ আগের এ সংস্কৃতি এখনও বহমান বলেই আমার মনে হয়েছে।
দিলি্ল বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি এবং ফল প্রকাশ হয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারি। ইলেকট্রনিক ভোটিং বা ইভিএম ব্যবস্থা চালু হওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই ভোটের প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে যায়। ভারতে লোকসভার নির্বাচন ছিল এপ্রিল-মে মাসে। মে মাসের মাঝামাঝি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতে সরকার গঠন করে বিজেপি জোট। সে সময় দিলি্লতে লোকসভার ৭টি আসনেই বিপুল ভোটে জয়ী হন বিজেপি প্রার্র্থীরা। এর কয়েক মাস আগে দিলি্ল বিধানসভার নির্বাচনে নবগঠিত আম আদমি পার্টি চমক দেখিয়েছিল_ ৭০টি আসনের মধ্যে তারা পায় ২৮টি আসন। তাদের চেয়ে চারটি আসন বেশি পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেসের ৮টি আসনের সমর্থন নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এক পর্যায়ে দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত একটি বিল পাস নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেন। মাত্র ৪৯ দিন স্থায়ী ছিল তার সরকার। তার ক্ষমতা ছাড়ার কিছুদিনের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে আম আদমি পার্টি একটি আসনেও জয়ী হতে পারেনি। সঙ্গত কারণেই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ দলটিকে 'ক্ষণস্থায়ী প্রবণতা' হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে তারা যে চমক দেখাল, সেটা অভূতপূর্ব। দলটি মোট ভোটের ৫৩ শতাংশের বেশি পেয়েছে।
নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমি এখানে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই_ প্রথমত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানানোর সময়। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ভোটের চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষা করেননি। যখন প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আম আদমি পার্টি জয়ী হতে চলেছে, তখনই তিনি টেলিফোনে কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানান এবং রাজ্যের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে সব ধরনের সহায়তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। নির্বাচনে তিনি দলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে নেমেছিলেন। তিনিই ভারতের উন্নয়নের প্রতীক_ এটাই বিজেপির পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়। লোকসভা নির্বাচনের পর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যসহ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি খুব ভালো ফল করে এবং তার কৃতিত্ব স্বভাবতই জমা পড়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাণ্ডারে। দিলি্লতেও তার ভাবমূর্তি কাজ দেবে বলে অনেক পর্যবেক্ষক ধারণা করছিলেন। কিন্তু এ হিসাব সম্পূর্ণ ওলটপালট হয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি একটি 'ছোট' রাজ্যের বিজয়ী নেতাকে অভিনন্দন জানাতে দেরি করেননি।
দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস এ রাজ্যে একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শীলা দীক্ষিত। এক বছর আগের নির্বাচনে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ও বিজেপির কাছে কংগ্রেস ধরাশায়ী হয়ে যায়। সে সময় দল ৮টি আসনে জয়ী হলেও মোট ভোটের ২৫ শতাংশ পেয়েছিল। এবার ভোট নেমে এসেছে ১০ শতাংশের নিচে এবং আসন একটিও নেই। প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন দলের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যাও কংগ্রেস থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তারও জামানত টেকেনি। ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও কেন দলের এ হাল_ সেটা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতিমধ্যেই নানা মন্তব্য শুরু করে দিয়েছেন। কেউ কেউ তো বলেই ফেলেছেন, 'একদা কংগ্রেস নামে একটি দল ছিল...'। কেউ কেউ বলছেন_ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটি এখন মৃত্যুশয্যায়। সে দলটিও কিন্তু আম আদমি পার্টির বিজয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে এবং কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানাতে দেরি করেনি।
তৃতীয়ত, বিজেপির পক্ষে এ ফল বিপর্যয়কর। তাদের জয়রথ এভাবে থেমে যাবে দেশের রাজধানীতে, সেটা অনেকের কাছে অভাবনীয় ছিল। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তারা বলেছে, আম আদমি পার্টি যেভাবে জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে সেটা তারা পারেনি। পরাজয়ের জন্য অন্য কাউকে দায়ী না করে নিজেদের ব্যর্থতাকেই স্বীকার করে নিয়েছে এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। তারা বলেনি যে, কেন্দ্রে প্রতিপক্ষ দলের সরকার রয়েছে এবং এ অবস্থায় আম আদমি পার্টি জনগণের কল্যাণে কিছুই করতে পারবে না। এটাও বলেনি, পদে পদে তাদের জন্য কেন্দ্র বাধা সৃষ্টি করবে এবং কেজরিওয়ালকে দ্রুতই রাজপথের সংগ্রামে গদিচ্যুত করা হবে। তাদের ভাষায় ছিল সংযম। আমরা যাকে সুবচন বলি তার প্রতিফলন রয়েছে একের নয়, অনেকের মন্তব্যে। নির্বাচনের ফলে তারা যে মুষড়ে পড়েননি_ সেটা বলা যাবে না। ক্ষোভ থাকাটাও স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্য প্রকাশে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন না।
আমাদের দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় সবার জন্য এটা শিক্ষণীয় হতে পারে। অন্যের মত খণ্ডন করা রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিন্নমতের প্রকাশ থাকবেই রাজনীতিতে। কিন্তু এটা তো সৌজন্যের সঙ্গেও করা যায়। একেবারে কাছের দেশের এ শিক্ষা আমাদেরও স্পর্শ করে যেতে পারে।
নির্বাচনে বিপর্যয়ের জন্য অপরের প্রতি দোষারোপ না করে নিজের প্রতি তাকানোর আহ্বানের বিষয়টির প্রতিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা নজর না দিয়ে পারেননি। এর কারণ স্পষ্ট_ নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং এই কমিশন ও প্রশাসনের দলীয় রাজনীতির ঊধর্ে্ব উঠে কাজ করতে পারা। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য কেবল নির্বাচন কমিশনকে শক্ত হলেই হবে না। তাদের প্রতিদিনের কাজের জন্য নির্ভর করতে হয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। তাদের পূর্ণ সহায়তা ব্যতিরেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
নরেন্দ্র মোদি এবং তার দল বিজেপির জন্য এ ফলের প্রভাব কতটা পড়বে, সে প্রশ্ন এখন আলোচিত হচ্ছে। ৭০ আসনের মধ্যে মাত্র তিন! বিজেপি ভেবেছিল, মোদি ওয়েভে তারা পার পেয়ে যাবে। লোকসভা নির্বাচনে দলটি যে ভোট পেয়েছিল তার চেয়ে এবারে ভোট কমেছে ১৪ শতাংশ। বিজেপি জোটেরই একটি দল বলেছে, কেজরিওয়াল-সুনামিতে বিধ্বস্ত নরেন্দ্র মোদি। সাধারণত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা একটি দলের জন্য হানিমুন পিরিয়ড আরও দীর্ঘ হয়। কিন্তু সেটা কেন হলো না? এর একটি কারণ সম্ভবত এই যে, গত কয়েক মাসে অর্থনীতিতে লক্ষণীয় কোনো ফল দেখাতে না পারা। নরেন্দ্র মোদিকে উন্নয়নের রূপকার হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছিল। কিন্তু গত ৯ মাসে তিনি এমন কোনো কাজে হাত দেননি, যাকে বলা যেতে পারে ব্যতিক্রম। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমানোর পর ভারতেও তা কমানো হয়েছে। কিন্তু তাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মোটেই কমেনি। দ্বিতীয়ত, বিজেপি দলের অভ্যন্তরে এবং বাইরের ধর্মীয় চরমপন্থি অংশকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, বরং তাদের আচরণে ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে অসহিষ্ণুতা। তার প্রকাশ আমরা রামজাদা বনাম হারামজাদা, ধর্মান্তর এবং আরও কিছু কাজের মধ্যে দেখি। বিজেপির শীর্ষ নেতাদেরও কেউ কেউ এর পেছনে পরোক্ষভাবে উৎসাহ জোগাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা প্রকাশ্যে বলছেন, চরম পন্থা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং জাতীয় ঐক্যের পথেই চলতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা চলতে চান সেই আগের পথেই। গত কিছু দিন দিলি্লর একাধিক চার্চে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে পারবে বিজেপি_ এ আস্থা রাখা কঠিন হয়ে উঠছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার সফরের সময় এ বিষয়ে নিজের শঙ্কা গোপন করেননি।
বিজেপির জন্য আরও বড় দুশ্চিন্তার কারণ বিকল্প শক্তিকে জনগণের চিনতে পারা। লোকসভা নির্বাচনের সময় আম আদমি পার্টি জনগণের বিবেচনায় বিকল্প ছিল না। কিন্তু দিলি্লতে বিধানসভা নির্বাচনে এ নবগঠিত দলটিকেই বিকল্প মনে করেছে। সামনে রয়েছে পাঞ্জাব ও বিহার রাজ্যের নির্বাচন। বিশেষ করে পাঞ্জাবে কেজরিওয়ালের দল লোকসভা নির্বাচনে ভালো করেছিল। বিধানসভার নির্বাচনে তারা বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলে বিস্মিত হবো না।
দিলি্লতে অভিজাত ও ধনবান শ্রেণী রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে তারা ছিল বিজেপির পক্ষে। মধ্যবিত্তদেরও তারা পক্ষে টেনেছিল মোদি হাওয়ায়। বিধানসভার নির্বাচনে আম আদমি পার্টি চলে গেছে গরির ও নিম্নবিত্তদের কাছে। তিনি বিভিন্ন মহল্লায় পড়ে থেকেছেন। তাদের সমালোচনা শুনেছেন। কোথায় ভুল হয়েছে_ সেটা জানতে চেয়েছেন। নির্বাচনে তার ফল মিলেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের উত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী আম আদমি পার্টির সঙ্গে একাত্ত হয়ে গেছে। তাদের কাছে পানি-বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দুর্নীতির বিস্তারও অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাদের। বিজেপি কিংবা কংগ্রেস এ ক্ষেত্রে কার্যকর কিছু করবে না_ এমন ধারণা জনমনে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল কেমন শাসক হবেন_ সেটা দেখার বিষয়। তবে নির্বাচনের ফল প্রকাশ শুরুর পর থেকেই তাকে আমরা দেখছি শান্ত, সংযত ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রতিপক্ষ দলের নেতারা চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগেই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি বলছেন চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষা করতে। তৃণমূল জয়ের সংবাদ পাওয়ার পর তার প্রথম বার্তাটি হুঁশিয়ারির। তিনি বললেন, কংগ্রেস ও বিজেপি হেরেছে অহঙ্কার ও ঔদ্ধত্যের কারণে। একই মনোভাব নিলে পাঁচ বছর পর মানুষ আম আদমি পার্টিকেও একই শিক্ষা দেবে। তাই অহঙ্কার নয়, হাতজোড় করে মানুষের পাশে থাকতে হবে, তাদের সেবা দিতে হবে। তার নিজের রয়েছে সৎ ভাবমূর্তি। তিনি রাজনীতিতে নবাগত। উচ্চপদস্থ কোনো সরকারি দায়িত্বেও ছিলেন না। কাজ করেছেন আয় বিভাগের সাধারণ অফিসার হিসেবে। তিনি কর্মীদের বলছেন অসহিষ্ণু না হতে। বিধানসভায় বিরোধী পক্ষ কার্যত অনুপস্থিত_ সেটা তিনি সমর্থকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, এখন দলের ভেতর থেকেই বিরোধী কণ্ঠ সোচ্চার হতে হবে। তিনি সরকারের সব কাজে স্বচ্ছতার ওপর জোর দিয়েছেন। বলেছেন, আর্থিক বিষয়গুলোতে স্বচ্ছতা রাখতে হবে। সব সিদ্ধান্ত ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। লক্ষ্য করুন যে, এসব কথা বলছে নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী একটি দল। রাজনীতিতে এটা অভিনব। সাধারণত আমরা দেখি, বিরোধী পক্ষ থেকেই সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। বিধানসভায় বিরোধী পক্ষের অতি দুর্বল অবস্থানের কারণে তিনি দলের অভ্যন্তরের ন্যায়পালকেও দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের ওপর জোর দিয়েছেন।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল সাধারণ পর্যায় থেকে উঠে আসা এক নেতা। নরেন্দ্র মোদিও তাই। তিনি তার চা বিক্রেতার জীবনকে গোপন করেননি। আবার এটাও লক্ষণীয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফরের সময় তার '১০ লাখ রুপির সুট' পরিধানকেও জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি কীভাবে রক্ষা করবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব আমরা। এখন নিজেকে প্রমাণ করার গুরুদায়িত্ব তার সামনে। প্রথম দফা মুখ্যমন্ত্রিত্বের আমলে ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা ভুল ছিল বলে বারবার প্রকাশ্যে বলেছেন। একই সঙ্গে নিজের স্বপ্ন ফেরি করেছেন। তিনি কী চান, সেটা স্পষ্ট করেছেন। নেতিবাচক প্রচার নয়, নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। সাধারণ মানুষ মাফলার পরা আম আদমির প্রতি আস্থা রেখেছে। এখন তার প্রতিদান দেওয়ার সময়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব
দিলি্ল বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে ৭ ফেব্রুয়ারি এবং ফল প্রকাশ হয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারি। ইলেকট্রনিক ভোটিং বা ইভিএম ব্যবস্থা চালু হওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই ভোটের প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে যায়। ভারতে লোকসভার নির্বাচন ছিল এপ্রিল-মে মাসে। মে মাসের মাঝামাঝি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতে সরকার গঠন করে বিজেপি জোট। সে সময় দিলি্লতে লোকসভার ৭টি আসনেই বিপুল ভোটে জয়ী হন বিজেপি প্রার্র্থীরা। এর কয়েক মাস আগে দিলি্ল বিধানসভার নির্বাচনে নবগঠিত আম আদমি পার্টি চমক দেখিয়েছিল_ ৭০টি আসনের মধ্যে তারা পায় ২৮টি আসন। তাদের চেয়ে চারটি আসন বেশি পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেসের ৮টি আসনের সমর্থন নিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল মন্ত্রিসভা গঠন করেন। এক পর্যায়ে দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত একটি বিল পাস নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেওয়ায় তিনি পদত্যাগ করেন। মাত্র ৪৯ দিন স্থায়ী ছিল তার সরকার। তার ক্ষমতা ছাড়ার কিছুদিনের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে আম আদমি পার্টি একটি আসনেও জয়ী হতে পারেনি। সঙ্গত কারণেই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ দলটিকে 'ক্ষণস্থায়ী প্রবণতা' হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে তারা যে চমক দেখাল, সেটা অভূতপূর্ব। দলটি মোট ভোটের ৫৩ শতাংশের বেশি পেয়েছে।
নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আমি এখানে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই_ প্রথমত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানানোর সময়। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ভোটের চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষা করেননি। যখন প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আম আদমি পার্টি জয়ী হতে চলেছে, তখনই তিনি টেলিফোনে কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানান এবং রাজ্যের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে সব ধরনের সহায়তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। নির্বাচনে তিনি দলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে নেমেছিলেন। তিনিই ভারতের উন্নয়নের প্রতীক_ এটাই বিজেপির পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়। লোকসভা নির্বাচনের পর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যসহ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি খুব ভালো ফল করে এবং তার কৃতিত্ব স্বভাবতই জমা পড়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাণ্ডারে। দিলি্লতেও তার ভাবমূর্তি কাজ দেবে বলে অনেক পর্যবেক্ষক ধারণা করছিলেন। কিন্তু এ হিসাব সম্পূর্ণ ওলটপালট হয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি একটি 'ছোট' রাজ্যের বিজয়ী নেতাকে অভিনন্দন জানাতে দেরি করেননি।
দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস এ রাজ্যে একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শীলা দীক্ষিত। এক বছর আগের নির্বাচনে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ও বিজেপির কাছে কংগ্রেস ধরাশায়ী হয়ে যায়। সে সময় দল ৮টি আসনে জয়ী হলেও মোট ভোটের ২৫ শতাংশ পেয়েছিল। এবার ভোট নেমে এসেছে ১০ শতাংশের নিচে এবং আসন একটিও নেই। প্রায় সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন দলের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির কন্যাও কংগ্রেস থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। তারও জামানত টেকেনি। ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও কেন দলের এ হাল_ সেটা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ইতিমধ্যেই নানা মন্তব্য শুরু করে দিয়েছেন। কেউ কেউ তো বলেই ফেলেছেন, 'একদা কংগ্রেস নামে একটি দল ছিল...'। কেউ কেউ বলছেন_ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটি এখন মৃত্যুশয্যায়। সে দলটিও কিন্তু আম আদমি পার্টির বিজয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে এবং কেজরিওয়ালকে অভিনন্দন জানাতে দেরি করেনি।
তৃতীয়ত, বিজেপির পক্ষে এ ফল বিপর্যয়কর। তাদের জয়রথ এভাবে থেমে যাবে দেশের রাজধানীতে, সেটা অনেকের কাছে অভাবনীয় ছিল। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তারা বলেছে, আম আদমি পার্টি যেভাবে জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে সেটা তারা পারেনি। পরাজয়ের জন্য অন্য কাউকে দায়ী না করে নিজেদের ব্যর্থতাকেই স্বীকার করে নিয়েছে এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। তারা বলেনি যে, কেন্দ্রে প্রতিপক্ষ দলের সরকার রয়েছে এবং এ অবস্থায় আম আদমি পার্টি জনগণের কল্যাণে কিছুই করতে পারবে না। এটাও বলেনি, পদে পদে তাদের জন্য কেন্দ্র বাধা সৃষ্টি করবে এবং কেজরিওয়ালকে দ্রুতই রাজপথের সংগ্রামে গদিচ্যুত করা হবে। তাদের ভাষায় ছিল সংযম। আমরা যাকে সুবচন বলি তার প্রতিফলন রয়েছে একের নয়, অনেকের মন্তব্যে। নির্বাচনের ফলে তারা যে মুষড়ে পড়েননি_ সেটা বলা যাবে না। ক্ষোভ থাকাটাও স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্য প্রকাশে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন না।
আমাদের দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় সবার জন্য এটা শিক্ষণীয় হতে পারে। অন্যের মত খণ্ডন করা রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিন্নমতের প্রকাশ থাকবেই রাজনীতিতে। কিন্তু এটা তো সৌজন্যের সঙ্গেও করা যায়। একেবারে কাছের দেশের এ শিক্ষা আমাদেরও স্পর্শ করে যেতে পারে।
নির্বাচনে বিপর্যয়ের জন্য অপরের প্রতি দোষারোপ না করে নিজের প্রতি তাকানোর আহ্বানের বিষয়টির প্রতিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা নজর না দিয়ে পারেননি। এর কারণ স্পষ্ট_ নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এবং এই কমিশন ও প্রশাসনের দলীয় রাজনীতির ঊধর্ে্ব উঠে কাজ করতে পারা। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য কেবল নির্বাচন কমিশনকে শক্ত হলেই হবে না। তাদের প্রতিদিনের কাজের জন্য নির্ভর করতে হয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। তাদের পূর্ণ সহায়তা ব্যতিরেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
নরেন্দ্র মোদি এবং তার দল বিজেপির জন্য এ ফলের প্রভাব কতটা পড়বে, সে প্রশ্ন এখন আলোচিত হচ্ছে। ৭০ আসনের মধ্যে মাত্র তিন! বিজেপি ভেবেছিল, মোদি ওয়েভে তারা পার পেয়ে যাবে। লোকসভা নির্বাচনে দলটি যে ভোট পেয়েছিল তার চেয়ে এবারে ভোট কমেছে ১৪ শতাংশ। বিজেপি জোটেরই একটি দল বলেছে, কেজরিওয়াল-সুনামিতে বিধ্বস্ত নরেন্দ্র মোদি। সাধারণত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা একটি দলের জন্য হানিমুন পিরিয়ড আরও দীর্ঘ হয়। কিন্তু সেটা কেন হলো না? এর একটি কারণ সম্ভবত এই যে, গত কয়েক মাসে অর্থনীতিতে লক্ষণীয় কোনো ফল দেখাতে না পারা। নরেন্দ্র মোদিকে উন্নয়নের রূপকার হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছিল। কিন্তু গত ৯ মাসে তিনি এমন কোনো কাজে হাত দেননি, যাকে বলা যেতে পারে ব্যতিক্রম। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমানোর পর ভারতেও তা কমানো হয়েছে। কিন্তু তাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মোটেই কমেনি। দ্বিতীয়ত, বিজেপি দলের অভ্যন্তরে এবং বাইরের ধর্মীয় চরমপন্থি অংশকে দমিয়ে রাখতে পারেনি, বরং তাদের আচরণে ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে অসহিষ্ণুতা। তার প্রকাশ আমরা রামজাদা বনাম হারামজাদা, ধর্মান্তর এবং আরও কিছু কাজের মধ্যে দেখি। বিজেপির শীর্ষ নেতাদেরও কেউ কেউ এর পেছনে পরোক্ষভাবে উৎসাহ জোগাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা প্রকাশ্যে বলছেন, চরম পন্থা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং জাতীয় ঐক্যের পথেই চলতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা চলতে চান সেই আগের পথেই। গত কিছু দিন দিলি্লর একাধিক চার্চে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে পারবে বিজেপি_ এ আস্থা রাখা কঠিন হয়ে উঠছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার সফরের সময় এ বিষয়ে নিজের শঙ্কা গোপন করেননি।
বিজেপির জন্য আরও বড় দুশ্চিন্তার কারণ বিকল্প শক্তিকে জনগণের চিনতে পারা। লোকসভা নির্বাচনের সময় আম আদমি পার্টি জনগণের বিবেচনায় বিকল্প ছিল না। কিন্তু দিলি্লতে বিধানসভা নির্বাচনে এ নবগঠিত দলটিকেই বিকল্প মনে করেছে। সামনে রয়েছে পাঞ্জাব ও বিহার রাজ্যের নির্বাচন। বিশেষ করে পাঞ্জাবে কেজরিওয়ালের দল লোকসভা নির্বাচনে ভালো করেছিল। বিধানসভার নির্বাচনে তারা বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হলে বিস্মিত হবো না।
দিলি্লতে অভিজাত ও ধনবান শ্রেণী রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে তারা ছিল বিজেপির পক্ষে। মধ্যবিত্তদেরও তারা পক্ষে টেনেছিল মোদি হাওয়ায়। বিধানসভার নির্বাচনে আম আদমি পার্টি চলে গেছে গরির ও নিম্নবিত্তদের কাছে। তিনি বিভিন্ন মহল্লায় পড়ে থেকেছেন। তাদের সমালোচনা শুনেছেন। কোথায় ভুল হয়েছে_ সেটা জানতে চেয়েছেন। নির্বাচনে তার ফল মিলেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের উত্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী আম আদমি পার্টির সঙ্গে একাত্ত হয়ে গেছে। তাদের কাছে পানি-বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দুর্নীতির বিস্তারও অতিষ্ঠ করে তুলেছে তাদের। বিজেপি কিংবা কংগ্রেস এ ক্ষেত্রে কার্যকর কিছু করবে না_ এমন ধারণা জনমনে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল কেমন শাসক হবেন_ সেটা দেখার বিষয়। তবে নির্বাচনের ফল প্রকাশ শুরুর পর থেকেই তাকে আমরা দেখছি শান্ত, সংযত ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রতিপক্ষ দলের নেতারা চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগেই তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি বলছেন চূড়ান্ত ফলের জন্য অপেক্ষা করতে। তৃণমূল জয়ের সংবাদ পাওয়ার পর তার প্রথম বার্তাটি হুঁশিয়ারির। তিনি বললেন, কংগ্রেস ও বিজেপি হেরেছে অহঙ্কার ও ঔদ্ধত্যের কারণে। একই মনোভাব নিলে পাঁচ বছর পর মানুষ আম আদমি পার্টিকেও একই শিক্ষা দেবে। তাই অহঙ্কার নয়, হাতজোড় করে মানুষের পাশে থাকতে হবে, তাদের সেবা দিতে হবে। তার নিজের রয়েছে সৎ ভাবমূর্তি। তিনি রাজনীতিতে নবাগত। উচ্চপদস্থ কোনো সরকারি দায়িত্বেও ছিলেন না। কাজ করেছেন আয় বিভাগের সাধারণ অফিসার হিসেবে। তিনি কর্মীদের বলছেন অসহিষ্ণু না হতে। বিধানসভায় বিরোধী পক্ষ কার্যত অনুপস্থিত_ সেটা তিনি সমর্থকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, এখন দলের ভেতর থেকেই বিরোধী কণ্ঠ সোচ্চার হতে হবে। তিনি সরকারের সব কাজে স্বচ্ছতার ওপর জোর দিয়েছেন। বলেছেন, আর্থিক বিষয়গুলোতে স্বচ্ছতা রাখতে হবে। সব সিদ্ধান্ত ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। লক্ষ্য করুন যে, এসব কথা বলছে নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী একটি দল। রাজনীতিতে এটা অভিনব। সাধারণত আমরা দেখি, বিরোধী পক্ষ থেকেই সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। বিধানসভায় বিরোধী পক্ষের অতি দুর্বল অবস্থানের কারণে তিনি দলের অভ্যন্তরের ন্যায়পালকেও দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের ওপর জোর দিয়েছেন।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল সাধারণ পর্যায় থেকে উঠে আসা এক নেতা। নরেন্দ্র মোদিও তাই। তিনি তার চা বিক্রেতার জীবনকে গোপন করেননি। আবার এটাও লক্ষণীয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সফরের সময় তার '১০ লাখ রুপির সুট' পরিধানকেও জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি কীভাবে রক্ষা করবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব আমরা। এখন নিজেকে প্রমাণ করার গুরুদায়িত্ব তার সামনে। প্রথম দফা মুখ্যমন্ত্রিত্বের আমলে ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা ভুল ছিল বলে বারবার প্রকাশ্যে বলেছেন। একই সঙ্গে নিজের স্বপ্ন ফেরি করেছেন। তিনি কী চান, সেটা স্পষ্ট করেছেন। নেতিবাচক প্রচার নয়, নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। সাধারণ মানুষ মাফলার পরা আম আদমির প্রতি আস্থা রেখেছে। এখন তার প্রতিদান দেওয়ার সময়।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব
No comments