বিদেশে বাংলাদেশের বই বিপণন by জাফর আলম
(কলকাতা বইমেলা)৯৫
সাল থেকে বাংলাদেশ কলকাতা বইমেলায় অংশ নিচ্ছে। ৯৬ সালে ঢাকার ৬টি প্রকাশনা
সংস্থা অংশগ্রহণ করে। কলকাতা উপ-দূতাবাসের প্রচেষ্টায় ৯৭ সাল থেকে ঢাকা
থেকে বেসরকারি প্রকাশকরা অংশ নিচ্ছে। এ বছর ২৬টি বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা
অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ফলে
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের বই বিপণনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া সেখানে
বাংলাদেশের বইয়ের চাহিদা প্রচুর এবং কদরও অনেক বেশি। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মোট
জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ পূর্ববাংলার অধিবাসী। প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,
শীর্ষুন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রখ্যাত শ্যামন মুখোপাধ্যায়, কবি শঙ্খঘোষসহ
খ্যাতিমান লেখকরা পূর্ববাংলার লোক। সেখানকার লেখক কবি সাহিত্যিকরা
বাংলাদেশের সাহিত্যের বিকাশ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। কিন্তু সারা
বছর তো বই পায় না কলকাতা বইমেলাই তাদের একমাত্র ভরসা। তদুপরি বাংলাদেশের
শিল্প সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে বিদেশে তুলে ধরার একমাত্র স্থান পশ্চিমবঙ্গের
রাজধানী কলকাতা। কারণ তাদের মাতৃভাষা বাংলা। নয়াদিল্লিতে সে সুযোগ নেই।
আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে পশ্চিমবঙ্গের ও সেখানকার সব বাংলাভাষী অঞ্চলে (ত্রিপুরাসহ) বাংলাদেশের বই বিপণন, বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে নিুলিখিত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখছি।
পশ্চিমবঙ্গের বিদগ্ধ পাঠকরা সারা বছর বাংলাদেশের বই পড়তে ও পেতে আগ্রহী। তাই কলকাতা বই পাড়া কলেজ স্ট্রিটে একটি ‘বাংলাদেশের পুস্তক প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র’ খোলা একান্ত প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ঢাকার ছয়টি সরকারি প্রকাশনা সংস্থা (জাতীয় গ্রন্থসহ) এবং বেসরকারি খ্যাতনামা প্রকাশকরা যৌথভাবে এ দোকান খুলতে পারে। স্থানীয়ভাবে একজন সেলসম্যান ও একজন পিওন নিয়োগ করলেই যথেষ্ট। দোকান ভাড়া ও আনুষাঙ্গিক ব্যয় যৌথভাবে সরকারি ৬টি প্রকাশনা সংস্থা ও বেসরকারি প্রকাশকরা বহন করবে। কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের গ্রন্থাগারিক এ দোকানের তদারকি করতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গের বিশেষত কলকাতার পাঠকরা বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা, বই, সাময়িকী পড়তে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের সাময়িকী ও পত্রিকা সেখানে যায় না। বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে কূটনৈতিক অফিসগুলোতে পত্রিকা যায় সপ্তাহে দুই দিন। এ পুরনো পত্রিকা পার্ক সার্কাসে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রে যায়। স্থানীয় পাঠকরা পুরনো পত্রপত্রিকা পড়ে তৃপ্ত নয়। তাই বাংলাদেশের পত্রিকা দৈনিক পাঠানোর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। যেহেতু কলকাতায় ঢাকার সঙ্গে দৈনিক বিমানের ফ্লাইট রয়েছে। বাংলাদেশের সাময়িকীর চাহিদা রয়েছে, তাই বৈধভাবে সেখানে রফতানি করা যায়।
বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রটি পার্ক সার্কাসে পুরনো দু’তালা বাড়ির নিচতলায় তিনটি কামরায় অবস্থিত। সেখানে বই ও প্রত্রপত্রিকা (বাঁধাই করা) রখার স্থান সংকুলান হয় না। তাই ক্ষুদ্র পরিসরে স্থানীয় পাঠক গবেষকদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। গ্রন্থাগারটি জরুরি ভিত্তিতে সম্প্রসারণ প্রয়োজন। কিন্তু যেহেতু বাড়িটি ওয়াক্ফ সম্পত্তি (প্রয়াত শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর বাড়ি), তাই এর সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। বাড়িটির দু’তলায় উপ-দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাও বসবাস করেন। কলকাতায় রাশিয়ার গর্কি সদন, জার্মানির ম্যার্ক মুলার ভবন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউসিস, যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ফ্রান্সের অ্যালান্স দি ফ্রান্স রয়েছে। এদের নিজস্ব লাইব্রেরি, মিলনায়তনও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এদের নিজস্ব সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের মানুষের কাছে তুলে ধরছে। গ্রন্থাগার পাঠক ও ছাত্রদের চাহিদা মিটাচ্ছে। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের কোনো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নেই, তাই বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সেখানকার মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছে না। আমার প্রস্তাব, বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য কলকাতায় একটি ‘বাংলাদেশের গ্রন্থাগার ও সাংস্কৃতি কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হোক। ওই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সরা বছর বাংলাদেশের বই প্রদর্শনী, বাংলাদেশের কবিদের কবিতা পাঠের আসর, দুই বাংলার লেখকদের সাহিত্য সম্মেলন শিল্পকলা প্রদর্শনী, সেমিনার, লেখক সমাবেশ, ভিডিও প্রদর্শনী, বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত আলোচনা সভা, সেমিনার, দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন সম্পর্কিত গোলটেবিল বৈঠক, প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা যেতে পারে। এর ফলে দু’দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আমি তার সানুগ্রহ দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা নিয়ে উদ্যোগ নিলে ‘কলকাতায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বিষয়টি গভীরভাবে দ্রুত বিবেচনার অনুরোধ জানাই।
পশ্চিমবঙ্গে পৃথক গ্রন্থাগার মন্ত্রণালয় রয়েছে। সেখানে সরকারি গ্রন্থাগারের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় সরকারি গ্রন্থাগার রয়েছে। তাছাড়া সরকারি গ্রন্থাগার উপ-জেলায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বই পড়ায় তরুণদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রন্থাগার আন্দোলনকে আরও জোরদার করার জন্য পৃথক গ্রন্থাগার মন্ত্রণালয় গঠন করা উচিত। তদুপরি গ্রন্থাগারিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পৃথক বেতনের স্কেল ও মর্যাদা বৃদ্ধির দাবি জানাই। বেসরকারি গ্রন্থাগার সংস্থা এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
যৌথ উদ্যোগে কলকাতা-ঢাকার নামকরা প্রকাশকরা যৌথ প্রকাশনার উদ্যোগ নিতে পারেন। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া কলকাতা বাংলাদেশের অনেক নামকরা লেখক সুপরিচিত নন। যৌথ প্রকাশনার ফলে কলকাতায় (বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে) আমাদের লেখকদের পরিচিতি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বই পাঠে তারা উপকৃত হবেন।
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের বই সম্পর্কে জানার আগ্রহ মেটানোর জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রকাশিত ‘বই’ পত্রিকার ব্যাপক প্রচার ও বিলিবণ্টন করা উচিত। এ জন্য কলকতায় ‘বই’ পত্রিকার এজেন্সি দেয়া যেতে পারে। পার্ক সার্কাসে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রে নিয়মিত ‘বই সাময়িকী পাঠাতে হবে যেন সেখানকার পাঠকদের চাহিদা মেটায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কলকাতা উপ-দূতাবাসে ‘বই’ পত্রিকা পাঠানো যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে বশেষত কলকাতা বইমেলায় গবেষণাধর্মী বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থাগুলো যৌথভাবে কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলে আমাদের শীর্ষ বিদ্যাপিঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কর্ম সম্পর্কে সেখানকার গবেষকরা জানতে পারবে এবং গবেষণাধর্মী বই ক্রয়ের সুযোগ পাবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি, ভারত থেকে প্রতিবছর ১০ কোটি টাকার বই (পাঠ্যবইসহ) আমদানি করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বই রফতানির পরিমাণ ১০ লাখ টাকার বেশি নয়। ভারত-বাংলা বাণিজ্য ঘাটতি বিরাট। আমরা বই রফতানি করে ওই ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করতে পারি। এ ব্যাপারে ঢাকার খ্যাতনামা প্রকাশক ও সরকারি প্রকাশনা সংস্থাগুলো (৬টি) যৌথভাবে ভারতে বাংলাদেশের বই রফতানি বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিতে পারে। এ ব্যাপারে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন। আশাকরি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহল আমার উল্লিখিত প্রস্তাবগুলেঅ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন এবং পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে বাংলাদেশের বইয়ের বাজার সৃষ্টি বিপণনের ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন। এর ফলে বিদেশে বাংলাদেশের বই বিক্রি খাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে।
আমি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে পশ্চিমবঙ্গের ও সেখানকার সব বাংলাভাষী অঞ্চলে (ত্রিপুরাসহ) বাংলাদেশের বই বিপণন, বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে নিুলিখিত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখছি।
পশ্চিমবঙ্গের বিদগ্ধ পাঠকরা সারা বছর বাংলাদেশের বই পড়তে ও পেতে আগ্রহী। তাই কলকাতা বই পাড়া কলেজ স্ট্রিটে একটি ‘বাংলাদেশের পুস্তক প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র’ খোলা একান্ত প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ঢাকার ছয়টি সরকারি প্রকাশনা সংস্থা (জাতীয় গ্রন্থসহ) এবং বেসরকারি খ্যাতনামা প্রকাশকরা যৌথভাবে এ দোকান খুলতে পারে। স্থানীয়ভাবে একজন সেলসম্যান ও একজন পিওন নিয়োগ করলেই যথেষ্ট। দোকান ভাড়া ও আনুষাঙ্গিক ব্যয় যৌথভাবে সরকারি ৬টি প্রকাশনা সংস্থা ও বেসরকারি প্রকাশকরা বহন করবে। কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের গ্রন্থাগারিক এ দোকানের তদারকি করতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গের বিশেষত কলকাতার পাঠকরা বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা, বই, সাময়িকী পড়তে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের সাময়িকী ও পত্রিকা সেখানে যায় না। বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে কূটনৈতিক অফিসগুলোতে পত্রিকা যায় সপ্তাহে দুই দিন। এ পুরনো পত্রিকা পার্ক সার্কাসে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রে যায়। স্থানীয় পাঠকরা পুরনো পত্রপত্রিকা পড়ে তৃপ্ত নয়। তাই বাংলাদেশের পত্রিকা দৈনিক পাঠানোর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। যেহেতু কলকাতায় ঢাকার সঙ্গে দৈনিক বিমানের ফ্লাইট রয়েছে। বাংলাদেশের সাময়িকীর চাহিদা রয়েছে, তাই বৈধভাবে সেখানে রফতানি করা যায়।
বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রটি পার্ক সার্কাসে পুরনো দু’তালা বাড়ির নিচতলায় তিনটি কামরায় অবস্থিত। সেখানে বই ও প্রত্রপত্রিকা (বাঁধাই করা) রখার স্থান সংকুলান হয় না। তাই ক্ষুদ্র পরিসরে স্থানীয় পাঠক গবেষকদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। গ্রন্থাগারটি জরুরি ভিত্তিতে সম্প্রসারণ প্রয়োজন। কিন্তু যেহেতু বাড়িটি ওয়াক্ফ সম্পত্তি (প্রয়াত শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর বাড়ি), তাই এর সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। বাড়িটির দু’তলায় উপ-দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাও বসবাস করেন। কলকাতায় রাশিয়ার গর্কি সদন, জার্মানির ম্যার্ক মুলার ভবন, যুক্তরাষ্ট্রের ইউসিস, যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ফ্রান্সের অ্যালান্স দি ফ্রান্স রয়েছে। এদের নিজস্ব লাইব্রেরি, মিলনায়তনও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এদের নিজস্ব সাহিত্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের মানুষের কাছে তুলে ধরছে। গ্রন্থাগার পাঠক ও ছাত্রদের চাহিদা মিটাচ্ছে। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের কোনো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নেই, তাই বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সেখানকার মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছে না। আমার প্রস্তাব, বাংলাদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সাহিত্য, ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য কলকাতায় একটি ‘বাংলাদেশের গ্রন্থাগার ও সাংস্কৃতি কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হোক। ওই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সরা বছর বাংলাদেশের বই প্রদর্শনী, বাংলাদেশের কবিদের কবিতা পাঠের আসর, দুই বাংলার লেখকদের সাহিত্য সম্মেলন শিল্পকলা প্রদর্শনী, সেমিনার, লেখক সমাবেশ, ভিডিও প্রদর্শনী, বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত আলোচনা সভা, সেমিনার, দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন সম্পর্কিত গোলটেবিল বৈঠক, প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা যেতে পারে। এর ফলে দু’দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আমি তার সানুগ্রহ দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা নিয়ে উদ্যোগ নিলে ‘কলকাতায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। বিষয়টি গভীরভাবে দ্রুত বিবেচনার অনুরোধ জানাই।
পশ্চিমবঙ্গে পৃথক গ্রন্থাগার মন্ত্রণালয় রয়েছে। সেখানে সরকারি গ্রন্থাগারের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় সরকারি গ্রন্থাগার রয়েছে। তাছাড়া সরকারি গ্রন্থাগার উপ-জেলায় সম্প্রসারিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বই পড়ায় তরুণদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রন্থাগার আন্দোলনকে আরও জোরদার করার জন্য পৃথক গ্রন্থাগার মন্ত্রণালয় গঠন করা উচিত। তদুপরি গ্রন্থাগারিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পৃথক বেতনের স্কেল ও মর্যাদা বৃদ্ধির দাবি জানাই। বেসরকারি গ্রন্থাগার সংস্থা এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
যৌথ উদ্যোগে কলকাতা-ঢাকার নামকরা প্রকাশকরা যৌথ প্রকাশনার উদ্যোগ নিতে পারেন। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া কলকাতা বাংলাদেশের অনেক নামকরা লেখক সুপরিচিত নন। যৌথ প্রকাশনার ফলে কলকাতায় (বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে) আমাদের লেখকদের পরিচিতি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং বই পাঠে তারা উপকৃত হবেন।
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের বই সম্পর্কে জানার আগ্রহ মেটানোর জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র প্রকাশিত ‘বই’ পত্রিকার ব্যাপক প্রচার ও বিলিবণ্টন করা উচিত। এ জন্য কলকতায় ‘বই’ পত্রিকার এজেন্সি দেয়া যেতে পারে। পার্ক সার্কাসে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রে নিয়মিত ‘বই সাময়িকী পাঠাতে হবে যেন সেখানকার পাঠকদের চাহিদা মেটায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কলকাতা উপ-দূতাবাসে ‘বই’ পত্রিকা পাঠানো যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে বশেষত কলকাতা বইমেলায় গবেষণাধর্মী বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থাগুলো যৌথভাবে কলকাতা বইমেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলে আমাদের শীর্ষ বিদ্যাপিঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কর্ম সম্পর্কে সেখানকার গবেষকরা জানতে পারবে এবং গবেষণাধর্মী বই ক্রয়ের সুযোগ পাবে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি, ভারত থেকে প্রতিবছর ১০ কোটি টাকার বই (পাঠ্যবইসহ) আমদানি করা হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বই রফতানির পরিমাণ ১০ লাখ টাকার বেশি নয়। ভারত-বাংলা বাণিজ্য ঘাটতি বিরাট। আমরা বই রফতানি করে ওই ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করতে পারি। এ ব্যাপারে ঢাকার খ্যাতনামা প্রকাশক ও সরকারি প্রকাশনা সংস্থাগুলো (৬টি) যৌথভাবে ভারতে বাংলাদেশের বই রফতানি বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিতে পারে। এ ব্যাপারে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন। আশাকরি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহল আমার উল্লিখিত প্রস্তাবগুলেঅ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন এবং পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে বাংলাদেশের বইয়ের বাজার সৃষ্টি বিপণনের ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন। এর ফলে বিদেশে বাংলাদেশের বই বিক্রি খাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে।
No comments