কাজের সন্ধানে ঢাকায়, অতঃপর by রুদ্র মিজান
দুই বছর ধরে এক কিশোরীকে বন্দি রেখে চালানো হয়েছে যৌন নির্যাতন। জোর করে করানো হয়েছে পতিতাবৃত্তি। ওই কিশোরী একাধিকবার পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। বরং পালানোর চেষ্টার কারণে তাকে সহ্য করতে হয়েছে আরও বেশি অমানুষিক নির্যাতন। শুধু কিশোরী না, দালালচক্র ও মক্ষীরানীর খপ্পরে অসংখ্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের জীবনে নেমে এসেছে এমন ঘোর অন্ধকার। শনিবার রাতে একটি মানবাধিকার সংগঠনের তৎপরতায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে নির্যাতনের শিকার এক কিশোরী (১৪) ও এক তরুণীকে (২৫) উদ্ধার করা হয়। এসময় আটক করা হয়েছে বেবী (৪৫) নামে এক মহিলাকে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সুতিখালপাড়ের ৮২/ডি নম্বরের বাসায় বেবী দীর্ঘ দিন ধরে কিশোরী ও তরুণীদের দিয়ে অসামাজিক কর্মকা- চালিয়ে আসছিল। অভিযোগ রয়েছে, তথ্য-প্রমাণসহ পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পরও দালালদের আটক করা হয় না।
উদ্ধার হওয়া কিশোরী জানায়, দুই বছর আগে সায়েদাবাদ এলাকার একটি বাসায় কাজ করতো সে। ওই বাসার গৃহকর্তা তার স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রায়ই তাকে যৌন উত্ত্যক্ত করতো। এ অবস্থায় যুবরাজ নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। যুবরাজ তাকে ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বেবীর কাছে বিক্রি করে দেয়। তারপর থেকেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বেবীর বাসায় তাকে বন্দি করে রাখা হয়। দীর্ঘ দুই বছর সে সূর্যের আলো দেখার সুযোগ পায়নি। বাসার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ দেয়া হতো না তাকে। বেবীর বাসায় তার প্রকৃত নামের সঙ্গে মান্না শব্দটি যোগ করা হয়। এই ছদ্ম নামেই অন্ধকারের বিকৃত রুচির মানুষরা তাকে ডাকতো। মান্না জানায়, বেবীর স্বামী তৌহিদ উদ্দিন ভূইঁয়া ও তাদের পুত্র তারেকসহ পুরো পরিবার মানবপাচার ও পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত। বেবীর নির্দেশে তার পুত্র তারেকই প্রথম মান্নাকে ধর্ষণ করে। বেবীর বাসায় আসার পর মান্না বুঝতে পারে ভুল পথে চলে এসেছে। ঠিক তখনই পালানোর চেষ্টা করেছিল। টের পেয়ে তাকে বেদম প্রহার করে বেবী ও তার পুত্র তারেক। মারধরে অসুস্থ হয়ে যায় মান্না। বাসায় রেখেইে তাকে ওষুধ সেবন করানো হয়। সুস্থ হওয়ার পর পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয় তাকে। কখনও কখনও লোহার রড দিয়েও মারধর করা হয়েছে তাকে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই নিয়তিকে মেনে নেয় সে। মান্না জানায়, তার কক্ষের দরজা রাত-দিন তালা দিয়ে রাখা হতো। খদ্দের এলে তা খোলা হতো। আবার মুহূর্তের মধ্যেই তা বন্ধ করা হতো। বেবী ও তার স্বামী-সন্তান বাসা থেকে বের হলে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখা হতো। অনেক খদ্দেরকে নিজের কষ্টের কাহিনী বলেছে মান্না। অনুনয় করেছে মা-বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। গত দুই বছরে নিজের ইচ্ছে বলতে তার কিছুই ছিল না। যন্ত্রের মতো বেবী তাকে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছে মান্না। খদ্দেররা কোন অভিযোগ করলেই তাকে মারধর করা হতো। বাসায় সবসময় পাতলা ও উগ্র পোশাক পরতে হতো তাকে। কখনও কখনও রাতে ঘুম পেলে তাকে জাগিয়ে রাখার জন্য জোর করে ইয়াবা সেবন করানো হতো। ওই বাসা থেকে মান্নাকে উদ্ধার করা হয়েছে খবর পেয়ে তার দরিদ্র মা-বাবা ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় ছুটে আসেন। এ ঘটনায় ওই কিশোরী বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। নিজ সন্তানকে ফিরে পেয়ে ওই কিশোরীর পিতা যাত্রাবাড়ী থানায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্তানকে উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীসহ নির্যাতিতদের উদ্ধারের জন্য গত ১৯শে জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে পিটিশন মামলা দায়ের করেন হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশন কো-অর্ডিনেটর নুরুল ইসলাম চৌধুরী। ওই মামলা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বংশাল, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় মান্নাসহ অন্তত অর্ধশত অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীকে জোরপূর্বক আটক রেখে যৌন নির্যাতন করছে একটি চক্র। এই চক্রের মূল হোতাদের মধ্যে রয়েছে, ডেমরার সারুলিয়া ওয়াসা সড়কের বাসিন্দা বাহাদুর বিশ্বাসের পুত্র রহম আলী, বরিশালের বাকেরগঞ্জের ফরিদপুর গাজীতলা গ্রামের রোকন উদ্দিনের পুত্র কবির গাজী। ৪৫/এ/১ বংশাল সিদ্দিকবাজারের নাজমা, বেবীসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি। ভাল চাকরি, মডেল, অভিনেত্রী হওয়ার প্রস্তাবসহ নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে তারা কিশোরী ও তরুণীদের বিপথগামী করে থাকে তারা। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর সেলিম জানান, আদালতে যথাযথ তথ্য-প্রমাণসহ মামলা দায়েরের পর নির্যাতিতদের উদ্ধারে বিলম্ব হলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। যে কারণে অনেক কিশোরী-তরুণীদের দালাল চক্র স্থানান্তর করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় পুলিশ এ বিষয়ে তেমন কোন সহযোগিতা করে না। তথ্য-প্রমাণ দিলেও তারা অভিযান চালাতে আগ্রহী হন না। দালালচক্র মানবপাচারে জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ১০০/৭৪ ডিএমপি অধ্যাদেশে মামলা করে পুলিশ। যে কারণে দুই বছর ধরে বন্দি থাকা মান্নাসহ অন্যান্য নির্যাতিতদের উদ্ধার করতে আদালতের শরণাপন্ন হন মানবাধিকারকর্মীরা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বেবী রানীর বাড়ি ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের মিঠাপুর গ্রামে। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনী শংকর কর বলেন, মানবপাচারে বা নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ সবসময়ই কঠোর। ওই কিশোরী নির্যাতনে জড়িত অন্যানদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া পাচার সংক্রান্ত নানা তথ্যের জন্য বেবীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সুতিখালপাড়ের ৮২/ডি নম্বরের বাসায় বেবী দীর্ঘ দিন ধরে কিশোরী ও তরুণীদের দিয়ে অসামাজিক কর্মকা- চালিয়ে আসছিল। অভিযোগ রয়েছে, তথ্য-প্রমাণসহ পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পরও দালালদের আটক করা হয় না।
উদ্ধার হওয়া কিশোরী জানায়, দুই বছর আগে সায়েদাবাদ এলাকার একটি বাসায় কাজ করতো সে। ওই বাসার গৃহকর্তা তার স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রায়ই তাকে যৌন উত্ত্যক্ত করতো। এ অবস্থায় যুবরাজ নামের এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। যুবরাজ তাকে ভাল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বেবীর কাছে বিক্রি করে দেয়। তারপর থেকেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বেবীর বাসায় তাকে বন্দি করে রাখা হয়। দীর্ঘ দুই বছর সে সূর্যের আলো দেখার সুযোগ পায়নি। বাসার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ দেয়া হতো না তাকে। বেবীর বাসায় তার প্রকৃত নামের সঙ্গে মান্না শব্দটি যোগ করা হয়। এই ছদ্ম নামেই অন্ধকারের বিকৃত রুচির মানুষরা তাকে ডাকতো। মান্না জানায়, বেবীর স্বামী তৌহিদ উদ্দিন ভূইঁয়া ও তাদের পুত্র তারেকসহ পুরো পরিবার মানবপাচার ও পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত। বেবীর নির্দেশে তার পুত্র তারেকই প্রথম মান্নাকে ধর্ষণ করে। বেবীর বাসায় আসার পর মান্না বুঝতে পারে ভুল পথে চলে এসেছে। ঠিক তখনই পালানোর চেষ্টা করেছিল। টের পেয়ে তাকে বেদম প্রহার করে বেবী ও তার পুত্র তারেক। মারধরে অসুস্থ হয়ে যায় মান্না। বাসায় রেখেইে তাকে ওষুধ সেবন করানো হয়। সুস্থ হওয়ার পর পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয় তাকে। কখনও কখনও লোহার রড দিয়েও মারধর করা হয়েছে তাকে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই নিয়তিকে মেনে নেয় সে। মান্না জানায়, তার কক্ষের দরজা রাত-দিন তালা দিয়ে রাখা হতো। খদ্দের এলে তা খোলা হতো। আবার মুহূর্তের মধ্যেই তা বন্ধ করা হতো। বেবী ও তার স্বামী-সন্তান বাসা থেকে বের হলে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রাখা হতো। অনেক খদ্দেরকে নিজের কষ্টের কাহিনী বলেছে মান্না। অনুনয় করেছে মা-বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। গত দুই বছরে নিজের ইচ্ছে বলতে তার কিছুই ছিল না। যন্ত্রের মতো বেবী তাকে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছে মান্না। খদ্দেররা কোন অভিযোগ করলেই তাকে মারধর করা হতো। বাসায় সবসময় পাতলা ও উগ্র পোশাক পরতে হতো তাকে। কখনও কখনও রাতে ঘুম পেলে তাকে জাগিয়ে রাখার জন্য জোর করে ইয়াবা সেবন করানো হতো। ওই বাসা থেকে মান্নাকে উদ্ধার করা হয়েছে খবর পেয়ে তার দরিদ্র মা-বাবা ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় ছুটে আসেন। এ ঘটনায় ওই কিশোরী বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। নিজ সন্তানকে ফিরে পেয়ে ওই কিশোরীর পিতা যাত্রাবাড়ী থানায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্তানকে উদ্ধারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীসহ নির্যাতিতদের উদ্ধারের জন্য গত ১৯শে জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার প্রতিরোধ আইনে পিটিশন মামলা দায়ের করেন হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশন কো-অর্ডিনেটর নুরুল ইসলাম চৌধুরী। ওই মামলা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বংশাল, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় মান্নাসহ অন্তত অর্ধশত অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীকে জোরপূর্বক আটক রেখে যৌন নির্যাতন করছে একটি চক্র। এই চক্রের মূল হোতাদের মধ্যে রয়েছে, ডেমরার সারুলিয়া ওয়াসা সড়কের বাসিন্দা বাহাদুর বিশ্বাসের পুত্র রহম আলী, বরিশালের বাকেরগঞ্জের ফরিদপুর গাজীতলা গ্রামের রোকন উদ্দিনের পুত্র কবির গাজী। ৪৫/এ/১ বংশাল সিদ্দিকবাজারের নাজমা, বেবীসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি। ভাল চাকরি, মডেল, অভিনেত্রী হওয়ার প্রস্তাবসহ নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে তারা কিশোরী ও তরুণীদের বিপথগামী করে থাকে তারা। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর সেলিম জানান, আদালতে যথাযথ তথ্য-প্রমাণসহ মামলা দায়েরের পর নির্যাতিতদের উদ্ধারে বিলম্ব হলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। যে কারণে অনেক কিশোরী-তরুণীদের দালাল চক্র স্থানান্তর করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় পুলিশ এ বিষয়ে তেমন কোন সহযোগিতা করে না। তথ্য-প্রমাণ দিলেও তারা অভিযান চালাতে আগ্রহী হন না। দালালচক্র মানবপাচারে জড়িত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ১০০/৭৪ ডিএমপি অধ্যাদেশে মামলা করে পুলিশ। যে কারণে দুই বছর ধরে বন্দি থাকা মান্নাসহ অন্যান্য নির্যাতিতদের উদ্ধার করতে আদালতের শরণাপন্ন হন মানবাধিকারকর্মীরা। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বেবী রানীর বাড়ি ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের মিঠাপুর গ্রামে। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনী শংকর কর বলেন, মানবপাচারে বা নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ সবসময়ই কঠোর। ওই কিশোরী নির্যাতনে জড়িত অন্যানদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া পাচার সংক্রান্ত নানা তথ্যের জন্য বেবীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
No comments