রাজধানীর হরতালচিত্র- যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক, তাড়া করছে বোমাতঙ্ক
হরতাল-অবরোধ চলছে। কিন্তু রাজধানীর রাজপথে বেরোলে তা মনেই হয় না। যানবাহন চলাচল প্রায় স্বাভাবিক, দোকানপাট খোলা, অফিস-আদালতে আসা-যাওয়া চলছে প্রায় আগের মতোই। তবে কখন, কার মাথায় বোমা-ককটেল পড়বে, সেই আতঙ্ক নগরবাসীকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায়।
টানা অবরোধের ৩৮তম দিনে গতকাল এই ছিল ঢাকার চিত্র। অবশ্য ঢাকার বাইরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। জেলাগুলোর সঙ্গে বিভাগীয় শহরের সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলেও যান চলাচল ক্রমশ বাড়ছে। জেলা ও উপজেলা শহরের ভেতরে জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে দূরপাল্লার বাস চলছে কম, স্বাভাবিক সময়ের এক-তৃতীয়াংশ।
বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কীভাবে চলছেন নগরবাসী, গতকাল বৃহস্পতিবার তা সরেজমিন দেখেছেন প্রথম আলোর চারজন প্রতিবেদক। কথা বলেছেন বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে। তাঁদেরই একজন সানিউজ্জামান চৌধুরী। মিরপুর আনসার ক্যাম্পের বাসা থেকে প্রতিদিন মতিঝিলের কর্মস্থলে যেতে হয় তাঁকে। সকালে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সামনে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘দিনের বেলা ভয় কম লাগে। কিন্তু সন্ধ্যার পরে যখন আসি, বুক কাঁপে।’
সানিউজ্জামানের মতো এই নগরের আর সবাই প্রতিদিন যাতায়াত করছেন অস্বস্তি ও আতঙ্ক নিয়ে। হরতালে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাঁরা জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়েছেন প্রতিনিয়ত, তাঁদের তাড়া করছে পেট্রলবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণের শঙ্কা।
গতকাল সকাল নয়টার দিকে টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর ও শ্যামলী এলাকায় অফিসগামী যাত্রীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা স্বাভাবিক থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। বাসগুলোর জানালার কাচ যতটা সম্ভব বন্ধ রাখা হচ্ছে বোমা-ককটেলের ভয়ে। কিন্তু শহরে চলাচলকারী অসংখ্য বাস-টেম্পোর জানালা নেই, সেসব বাসের যাত্রীরা চলছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
স্বাভাবিক সময়ে প্রধান প্রধান সড়কে রিকশা চলা নিষেধ, এখন চলছে হরতাল বলে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারে যেতে-আসতেও রিকশা ভাড়া করছেন অনেকে। রিকশাচালক ইব্রাহিম মিয়া বললেন, ‘মামা, হরতালে মেইন রোডে তো টানি। কিন্তু মনের ভেতর ডর লাগে। কিছু টাকা বেশি পামু, তাই সাহস কইরা চালাই।’
একই চিত্র রাজধানীর পুরান ঢাকার পাটুয়াটলী, চকবাজার, বাদামতলী, ইসলামপুর, সদরঘাট ও শ্যামবাজার এলাকায়ও। তবে এসব এলাকার বেশির ভাগ দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতা না থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দা। রাত নয়টার পর দূরপাল্লার বাস যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কয়েক দিন ধরে লঞ্চে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। রাত নয়টার পর দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সদরঘাটে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
কাল দুপুরে সদরঘাট টার্মিনালে ৩০-৪০টি লঞ্চ ছিল। এসব লঞ্চ সন্ধ্যা ও রাতে ছেড়ে যাওয়ার কথা। যাত্রী যদিও কম। ঘাটের আশপাশে দেখা যায়, দোকানপাট কিছু খোলা, কিছু বন্ধ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদীবন্দরের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ের মতোই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ চলছে। যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম।
ঢাকার বাইরে যাওয়া-আসা: বেলা দেড়টার দিকে একজন প্রতিবেদকের মিরপুর রোড ধরে যানবাহনের জটলা ঠেলে কারওয়ান বাজার থেকে গাবতলী পৌঁছাতে লেগে গেল এক ঘণ্টা। শ্যামলী থেকে শুরু হওয়া বাস কাউন্টারগুলো প্রায় ফাঁকা। কল্যাণপুর পেরিয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে যেতে যানজটের মাত্রা কমতে থাকল। এলোপাতাড়ি কয়েকটি বাস দাঁড়িয়ে, ভেতরে গুটি কয়েক যাত্রী। হেলপাররা শূন্যে হাত তুলে ডাকছেন ‘এই সাতক্ষীরা-খুলনা-মাগুরা’।
এ কে ট্রাভেলস পরিবহনের হেলপার মজিদ আলী বলেন, ‘ভাই, আইজ যাত্রী একটু বেশি। তা-ও অবরোধের আগের তুলনায় ২০ পার্সেন্টের বেশি হবি নানে।’
গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর ১ নম্বর গোলচত্বরের দিকে যেতে আবারও সেই চিরচেনা যানজটের মুখোমুখি হতে হলো। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে আধঘণ্টার যানজট কাটিয়ে মিরপুর ১৩ ও ১৪ নম্বর হয়ে সেনানিবাসের ভেতরের সড়ক ধরে মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছাতে লেগে গেল দেড় ঘণ্টা। সড়কের প্রতিটি মোড়েই সারি সারি গাড়ি। কিন্তু টার্মিনাল থেকে শহর ছেড়ে যাওয়া গাড়ি রাখার স্থানগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেল। তবে রাজধানীর প্রবেশপথ ও মহাসড়কগুলোতে গিয়ে হরতালের প্রভাব চোখে পড়ল।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া এবং ঢাকার দিকে আসা যানবাহনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে গেছে। আর দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। অতি জরুরি পণ্য এবং প্রয়োজন ছাড়া রাজধানী থেকে কোনো পরিবহন ছাড়ছে না বা আসছে না।
সংগঠনটির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত অবরোধে ৬৭৪টি পরিবহন পেট্রলবোমা ও অবরোধকারীদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এবং বাস ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম চলছে।
ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার যানবাহন চলত উল্লেখ করে এনায়েত উল্লাহ বলেন, এখন ৩০ শতাংশ চলছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সরকার গত ২৯ জানুয়ারি মহাসড়কে ১০ হাজার আনসার নামানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার বাস চলাচল করে। সপ্তাহ খানেক আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় নাশকতা বেশি হয়, এমন ৯৯৩টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছিল। যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট ও বগুড়ায়।
গত এক সপ্তাহে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের নতুন কয়েকটি এলাকায় নাশকতা বেড়ে গেছে। এত দিন উত্তরাঞ্চলের গাড়ি চলাচল কম ছিল। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার করায় যান চলাচল বেড়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার যান চলে। এখন তা কমে সাড়ে ৭ হাজারে নেমে এসেছে। গত এক সপ্তাহে চলাচল কিছুটা বেড়ে গড়ে সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার হয়েছে।
ট্রাক চলাচলও স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এই তথ্য উল্লেখ করে বলেছে, অবরোধ শুরুর পর এ পর্যন্ত সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৩০০ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকমালিকেরা পণ্য পরিবহন করতে চাইলেও অনেক শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য পরিবহন করতে রাজি হচ্ছে না।
টানা অবরোধের ৩৮তম দিনে গতকাল এই ছিল ঢাকার চিত্র। অবশ্য ঢাকার বাইরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। জেলাগুলোর সঙ্গে বিভাগীয় শহরের সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলেও যান চলাচল ক্রমশ বাড়ছে। জেলা ও উপজেলা শহরের ভেতরে জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে দূরপাল্লার বাস চলছে কম, স্বাভাবিক সময়ের এক-তৃতীয়াংশ।
বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কীভাবে চলছেন নগরবাসী, গতকাল বৃহস্পতিবার তা সরেজমিন দেখেছেন প্রথম আলোর চারজন প্রতিবেদক। কথা বলেছেন বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে। তাঁদেরই একজন সানিউজ্জামান চৌধুরী। মিরপুর আনসার ক্যাম্পের বাসা থেকে প্রতিদিন মতিঝিলের কর্মস্থলে যেতে হয় তাঁকে। সকালে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। সামনে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করতেই বললেন, ‘দিনের বেলা ভয় কম লাগে। কিন্তু সন্ধ্যার পরে যখন আসি, বুক কাঁপে।’
সানিউজ্জামানের মতো এই নগরের আর সবাই প্রতিদিন যাতায়াত করছেন অস্বস্তি ও আতঙ্ক নিয়ে। হরতালে গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাঁরা জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়েছেন প্রতিনিয়ত, তাঁদের তাড়া করছে পেট্রলবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণের শঙ্কা।
গতকাল সকাল নয়টার দিকে টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর ও শ্যামলী এলাকায় অফিসগামী যাত্রীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা স্বাভাবিক থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। বাসগুলোর জানালার কাচ যতটা সম্ভব বন্ধ রাখা হচ্ছে বোমা-ককটেলের ভয়ে। কিন্তু শহরে চলাচলকারী অসংখ্য বাস-টেম্পোর জানালা নেই, সেসব বাসের যাত্রীরা চলছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
স্বাভাবিক সময়ে প্রধান প্রধান সড়কে রিকশা চলা নিষেধ, এখন চলছে হরতাল বলে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজারে যেতে-আসতেও রিকশা ভাড়া করছেন অনেকে। রিকশাচালক ইব্রাহিম মিয়া বললেন, ‘মামা, হরতালে মেইন রোডে তো টানি। কিন্তু মনের ভেতর ডর লাগে। কিছু টাকা বেশি পামু, তাই সাহস কইরা চালাই।’
একই চিত্র রাজধানীর পুরান ঢাকার পাটুয়াটলী, চকবাজার, বাদামতলী, ইসলামপুর, সদরঘাট ও শ্যামবাজার এলাকায়ও। তবে এসব এলাকার বেশির ভাগ দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতা না থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দা। রাত নয়টার পর দূরপাল্লার বাস যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কয়েক দিন ধরে লঞ্চে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। রাত নয়টার পর দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সদরঘাটে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
কাল দুপুরে সদরঘাট টার্মিনালে ৩০-৪০টি লঞ্চ ছিল। এসব লঞ্চ সন্ধ্যা ও রাতে ছেড়ে যাওয়ার কথা। যাত্রী যদিও কম। ঘাটের আশপাশে দেখা যায়, দোকানপাট কিছু খোলা, কিছু বন্ধ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদীবন্দরের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ের মতোই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ চলছে। যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম।
ঢাকার বাইরে যাওয়া-আসা: বেলা দেড়টার দিকে একজন প্রতিবেদকের মিরপুর রোড ধরে যানবাহনের জটলা ঠেলে কারওয়ান বাজার থেকে গাবতলী পৌঁছাতে লেগে গেল এক ঘণ্টা। শ্যামলী থেকে শুরু হওয়া বাস কাউন্টারগুলো প্রায় ফাঁকা। কল্যাণপুর পেরিয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে যেতে যানজটের মাত্রা কমতে থাকল। এলোপাতাড়ি কয়েকটি বাস দাঁড়িয়ে, ভেতরে গুটি কয়েক যাত্রী। হেলপাররা শূন্যে হাত তুলে ডাকছেন ‘এই সাতক্ষীরা-খুলনা-মাগুরা’।
এ কে ট্রাভেলস পরিবহনের হেলপার মজিদ আলী বলেন, ‘ভাই, আইজ যাত্রী একটু বেশি। তা-ও অবরোধের আগের তুলনায় ২০ পার্সেন্টের বেশি হবি নানে।’
গাবতলী থেকে মাজার রোড হয়ে মিরপুর ১ নম্বর গোলচত্বরের দিকে যেতে আবারও সেই চিরচেনা যানজটের মুখোমুখি হতে হলো। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে আধঘণ্টার যানজট কাটিয়ে মিরপুর ১৩ ও ১৪ নম্বর হয়ে সেনানিবাসের ভেতরের সড়ক ধরে মহাখালী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে পৌঁছাতে লেগে গেল দেড় ঘণ্টা। সড়কের প্রতিটি মোড়েই সারি সারি গাড়ি। কিন্তু টার্মিনাল থেকে শহর ছেড়ে যাওয়া গাড়ি রাখার স্থানগুলো প্রায় ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেল। তবে রাজধানীর প্রবেশপথ ও মহাসড়কগুলোতে গিয়ে হরতালের প্রভাব চোখে পড়ল।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া এবং ঢাকার দিকে আসা যানবাহনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে গেছে। আর দূরপাল্লার বাসের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। অতি জরুরি পণ্য এবং প্রয়োজন ছাড়া রাজধানী থেকে কোনো পরিবহন ছাড়ছে না বা আসছে না।
সংগঠনটির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত অবরোধে ৬৭৪টি পরিবহন পেট্রলবোমা ও অবরোধকারীদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ এবং বাস ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম চলছে।
ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার যানবাহন চলত উল্লেখ করে এনায়েত উল্লাহ বলেন, এখন ৩০ শতাংশ চলছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সরকার গত ২৯ জানুয়ারি মহাসড়কে ১০ হাজার আনসার নামানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার বাস চলাচল করে। সপ্তাহ খানেক আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় নাশকতা বেশি হয়, এমন ৯৯৩টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছিল। যার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল উত্তরাঞ্চলের গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট ও বগুড়ায়।
গত এক সপ্তাহে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের নতুন কয়েকটি এলাকায় নাশকতা বেড়ে গেছে। এত দিন উত্তরাঞ্চলের গাড়ি চলাচল কম ছিল। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার করায় যান চলাচল বেড়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার যান চলে। এখন তা কমে সাড়ে ৭ হাজারে নেমে এসেছে। গত এক সপ্তাহে চলাচল কিছুটা বেড়ে গড়ে সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার হয়েছে।
ট্রাক চলাচলও স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এই তথ্য উল্লেখ করে বলেছে, অবরোধ শুরুর পর এ পর্যন্ত সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৩০০ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকমালিকেরা পণ্য পরিবহন করতে চাইলেও অনেক শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য পরিবহন করতে রাজি হচ্ছে না।
No comments