ঢাকা কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ by কামরুল হাসান ও নজরুল ইসলাম
হরতাল-অবরোধ
শুরুর পর ৩৭ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৩
হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর মামলা হয়েছে সাত
শতাধিক। ধরপাকড়ের কারণে দেশের কারাগারগুলোতে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন বন্দীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার প্রায় তিন গুণ।
কারাগার সূত্র জানিয়েছে, স্বাভাবিক নিয়মে দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দী থাকে। অবরোধ শুরুর পর কারাগারগুলোতে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ১৮৮ জন। এ সময় সাধারণ অপরাধের আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে খুবই কম। এক মাসে যেসব বন্দী কারাগারে এসেছে, তাদের ৮০ শতাংশই রাজনৈতিক মামলার আসামি।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, গত ৩৭ দিনে পেট্রলবোমাসহ নানা উপায়ে ১ হাজার ৪৯টি যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার অভিযোগ বিভিন্ন থানায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশের বাজেটে টান পড়েছে। ঘাটতি মেটাতে আগামী তিন মাসের জন্য ১২৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ। শুকনো খাবার, অতিরিক্ত সময় কাজ করা, আসামির খোরাকি, যানবাহনের তেল ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য এ অর্থ চাওয়া হয়েছে।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় কাজ করতে হচ্ছে। এ জন্য আনুষঙ্গিক কিছু সুবিধা বাড়াতে হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, দেশব্যাপী সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত অপরাধবিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যে এ উদ্বেগের কথা ফুটে ওঠে।
৬ জানুয়ারি টানা অবরোধ শুরুর পর থেকেই সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। এর তিন সপ্তাহ পর বর্ডার গার্ডকে (বিজিবি) সঙ্গে নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু করে পুলিশ। এ সময়ে যে ১৩ হাজার গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী।
অভিযানের প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাহায্য নিয়ে থানাগুলোতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি-জামায়াত ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের নামের তালিকা করা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী যাকে যেখানে পাওয়া যায়, গ্রেপ্তার করা হয়। তালিকা ধরে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হয়। তবে অভিযানের সময় এঁদের বেশির ভাগ পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা যায়নি। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেন্দ্রীয় থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীরা আছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযানের নামে সাধারণ মানুষকে ধরে হয়রানি, মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগও উঠেছে।
কারা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন যে হারে বন্দী কারাগারে আসে, প্রায় একই হারে ছাড়াও পায়। ফলে বন্দীর সংখ্যা সীমার মধ্যে থাকে। কিন্তু এক মাস ধরে যে হারে বন্দী আসছে, তার তুলনায় জামিনে বের হচ্ছে কম। ফলে হাজতি-বন্দীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী অবরোধ শুরু হওয়ার আগে ৪ জানুয়ারি দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল ৬৭ হাজার ৬১৪ জন। ৮ ফেব্রুয়ারি এসব কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ হাজার ৮০২। কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার ৪৬০।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৬৮২। গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি বন্দী ছিল সাড়ে সাত হাজার। ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেশি হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট কারা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে বন্দীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) সৈয়দ ইফতেখার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিন গুণের মতো বন্দী থাকায় ঢাকা কারাগারের ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে। শুক্র ও শনিবার কিছু বন্দীকে কাশিমপুর কারাগারে সরিয়ে চাপ সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ঢাকার বাইরের কারাগারগুলোয় বন্দী সংখ্যা ঢাকার মতো বাড়েনি।
কত ক্ষতি: পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া হিসাবে দেখা গেছে, ৫ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৪৯টি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু পেট্রলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৭৯টি বাস ও ট্রাকে। বোমা ছাড়াও অন্য উপায়ে আগুন দেওয়া হয় ৪৫৭টি যানবাহনে। যানবাহন ছাড়া আরও ২২টি স্থাপনায় আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আর ভাঙচুর হয়েছে ৪০৩টি যানবাহন।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের কাছে যে হিসাব আছে, তা অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়। তবে পুলিশের হিসাবের বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ না হওয়ায় এসব তালিকায় আসেনি।
পুলিশের হিসাবে ৩৭ দিনে মোট ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য। ৫৪ জনের মধ্যে আগুন পুড়ে মারা গেছেন ৩৭ জন। এ সময় ১ হাজার ৫১৫টি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫০৭ জন।
পুলিশের হতাহতের বিবরণ থেকে জানা গেছে, এ সময় দুজন পুলিশ সদস্য নিহত ও ২৭৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশের ওপর সবচেয়ে বেশি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। ওই অঞ্চলে ১০৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
তবে পুলিশের হিসাবের সঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের অমিল রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ক্রসফায়ারে নিহত ১৯ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা ৮৭।
আরও বরাদ্দ চায় পুলিশ: মাঠপর্যায়ের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, টানা ৩৭ দিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঢাকার বাইরের পুলিশ সদস্যরা হাঁপিয়ে উঠেছেন। অভিযান কম করে শুধু পাহারা দেওয়ার মধ্যেই তাঁরা দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখছেন।
ওই সব কর্মকর্তা বলেন, বেশি সমস্যা হচ্ছে যানবাহনের তেল আর আসামির খোরাকি নিয়ে। থানাগুলোতে সরকারের যে নিয়মিত বরাদ্দ আছে, খরচ তার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। এ কারণে দেশের সব জেলা থেকেই খোরাকি ও গাড়ির তেলের বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। এ জন্য পুলিশ সদস্যদের জন্য ৯০ দিনের রান্না বা শুকনো খাবারের খরচ বাবদ ৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের বাড়তি সময় দায়িত্ব পালন (ওভার টাইম), গোয়েন্দা কার্যক্রম ও যানবাহনের জ্বালানি খরচ বাবদ আরও ৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পুলিশের চিঠিতে বলা হয়, হরতাল-অবরোধ মোকাবিলায় পুলিশ বাহিনীর ৯৪ হাজার ৯৪৯ জন সদস্য দায়িত্বে থাকছেন। এ সময় জনপ্রতি খাবার সরবরাহ বাবদ গড়ে দৈনিক ৭৫ টাকা করে দরকার হচ্ছে। এতে দৈনিক মোট ৭১ লাখ ২১ হাজার ১৭৫ টাকার প্রয়োজন। এ হিসাবে আনুমানিক তিন মাসের জন্য দরকার ৬৪ কোটি ৯ লাখ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে খাবার সরবরাহের জন্য পুলিশের কাছে ২০ কোটি ৮০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা তহবিলে আছে। মোট চাহিদা থেকে এ অর্থ বাদ দিয়ে আরও ৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা দরকার।
পুলিশের অর্থ শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, সব জেলার চাহিদা এক করে আরও ১২৬ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ একাই চেয়েছে আট কোটি টাকা।
কারাগার সূত্র জানিয়েছে, স্বাভাবিক নিয়মে দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দী থাকে। অবরোধ শুরুর পর কারাগারগুলোতে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ১৮৮ জন। এ সময় সাধারণ অপরাধের আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে খুবই কম। এক মাসে যেসব বন্দী কারাগারে এসেছে, তাদের ৮০ শতাংশই রাজনৈতিক মামলার আসামি।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, গত ৩৭ দিনে পেট্রলবোমাসহ নানা উপায়ে ১ হাজার ৪৯টি যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার অভিযোগ বিভিন্ন থানায় লিপিবদ্ধ হয়েছে।
চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশের বাজেটে টান পড়েছে। ঘাটতি মেটাতে আগামী তিন মাসের জন্য ১২৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ। শুকনো খাবার, অতিরিক্ত সময় কাজ করা, আসামির খোরাকি, যানবাহনের তেল ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য এ অর্থ চাওয়া হয়েছে।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় কাজ করতে হচ্ছে। এ জন্য আনুষঙ্গিক কিছু সুবিধা বাড়াতে হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই আছে।
পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, দেশব্যাপী সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশ প্রশাসন। গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত অপরাধবিষয়ক বার্ষিক সম্মেলনে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যে এ উদ্বেগের কথা ফুটে ওঠে।
৬ জানুয়ারি টানা অবরোধ শুরুর পর থেকেই সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। এর তিন সপ্তাহ পর বর্ডার গার্ডকে (বিজিবি) সঙ্গে নিয়ে যৌথ অভিযান শুরু করে পুলিশ। এ সময়ে যে ১৩ হাজার গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবাই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী।
অভিযানের প্রথম পর্যায়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাহায্য নিয়ে থানাগুলোতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি-জামায়াত ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের নামের তালিকা করা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী যাকে যেখানে পাওয়া যায়, গ্রেপ্তার করা হয়। তালিকা ধরে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হয়। তবে অভিযানের সময় এঁদের বেশির ভাগ পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা যায়নি। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেন্দ্রীয় থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের কর্মীরা আছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযানের নামে সাধারণ মানুষকে ধরে হয়রানি, মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগও উঠেছে।
কারা অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন যে হারে বন্দী কারাগারে আসে, প্রায় একই হারে ছাড়াও পায়। ফলে বন্দীর সংখ্যা সীমার মধ্যে থাকে। কিন্তু এক মাস ধরে যে হারে বন্দী আসছে, তার তুলনায় জামিনে বের হচ্ছে কম। ফলে হাজতি-বন্দীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী অবরোধ শুরু হওয়ার আগে ৪ জানুয়ারি দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল ৬৭ হাজার ৬১৪ জন। ৮ ফেব্রুয়ারি এসব কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ হাজার ৮০২। কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার ৪৬০।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৬৮২। গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি বন্দী ছিল সাড়ে সাত হাজার। ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দীর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেশি হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট কারা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে বন্দীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) সৈয়দ ইফতেখার আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিন গুণের মতো বন্দী থাকায় ঢাকা কারাগারের ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে। শুক্র ও শনিবার কিছু বন্দীকে কাশিমপুর কারাগারে সরিয়ে চাপ সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ঢাকার বাইরের কারাগারগুলোয় বন্দী সংখ্যা ঢাকার মতো বাড়েনি।
কত ক্ষতি: পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া হিসাবে দেখা গেছে, ৫ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৪৯টি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু পেট্রলবোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৭৯টি বাস ও ট্রাকে। বোমা ছাড়াও অন্য উপায়ে আগুন দেওয়া হয় ৪৫৭টি যানবাহনে। যানবাহন ছাড়া আরও ২২টি স্থাপনায় আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আর ভাঙচুর হয়েছে ৪০৩টি যানবাহন।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের কাছে যে হিসাব আছে, তা অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়। তবে পুলিশের হিসাবের বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ না হওয়ায় এসব তালিকায় আসেনি।
পুলিশের হিসাবে ৩৭ দিনে মোট ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য। ৫৪ জনের মধ্যে আগুন পুড়ে মারা গেছেন ৩৭ জন। এ সময় ১ হাজার ৫১৫টি ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫০৭ জন।
পুলিশের হতাহতের বিবরণ থেকে জানা গেছে, এ সময় দুজন পুলিশ সদস্য নিহত ও ২৭৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশের ওপর সবচেয়ে বেশি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। ওই অঞ্চলে ১০৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
তবে পুলিশের হিসাবের সঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের অমিল রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ক্রসফায়ারে নিহত ১৯ জনসহ মোট মৃতের সংখ্যা ৮৭।
আরও বরাদ্দ চায় পুলিশ: মাঠপর্যায়ের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, টানা ৩৭ দিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঢাকার বাইরের পুলিশ সদস্যরা হাঁপিয়ে উঠেছেন। অভিযান কম করে শুধু পাহারা দেওয়ার মধ্যেই তাঁরা দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখছেন।
ওই সব কর্মকর্তা বলেন, বেশি সমস্যা হচ্ছে যানবাহনের তেল আর আসামির খোরাকি নিয়ে। থানাগুলোতে সরকারের যে নিয়মিত বরাদ্দ আছে, খরচ তার চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। এ কারণে দেশের সব জেলা থেকেই খোরাকি ও গাড়ির তেলের বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। এ জন্য পুলিশ সদস্যদের জন্য ৯০ দিনের রান্না বা শুকনো খাবারের খরচ বাবদ ৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের বাড়তি সময় দায়িত্ব পালন (ওভার টাইম), গোয়েন্দা কার্যক্রম ও যানবাহনের জ্বালানি খরচ বাবদ আরও ৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পুলিশের চিঠিতে বলা হয়, হরতাল-অবরোধ মোকাবিলায় পুলিশ বাহিনীর ৯৪ হাজার ৯৪৯ জন সদস্য দায়িত্বে থাকছেন। এ সময় জনপ্রতি খাবার সরবরাহ বাবদ গড়ে দৈনিক ৭৫ টাকা করে দরকার হচ্ছে। এতে দৈনিক মোট ৭১ লাখ ২১ হাজার ১৭৫ টাকার প্রয়োজন। এ হিসাবে আনুমানিক তিন মাসের জন্য দরকার ৬৪ কোটি ৯ লাখ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে খাবার সরবরাহের জন্য পুলিশের কাছে ২০ কোটি ৮০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা তহবিলে আছে। মোট চাহিদা থেকে এ অর্থ বাদ দিয়ে আরও ৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকা দরকার।
পুলিশের অর্থ শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, সব জেলার চাহিদা এক করে আরও ১২৬ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ একাই চেয়েছে আট কোটি টাকা।
No comments