সিলেট হাসপাতাল- অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শঙ্কা
সিলেট
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় ১০ শিশুসহ ৩২টি মৃত্যুর ঘটনায়
আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না। এসব মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলা ও
হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি,
এসব মৃত্যু স্বাভাবিক। তবে মৃত্যুর সংখ্যা যেহেতু অস্বাভাবিক, তাই তদন্ত
হবে। পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমরা আশা করব,
'হাসপাতালে সবকিছুই যথাযথভাবে চলছে'_ এমন গৎবাঁধা তদন্ত যেন না হয়। সব
মহলের চেষ্টায় বাংলাদেশে নারী ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এ
জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্বসমাজের প্রশংসাও মিলছে। সেখানে একটি জেলা হাসপাতালে
একদিনে ১০টি শিশুর মৃত্যুকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া যায় না।
এদের মধ্যে আছে দেড় দিন বয়সী চারজন শিশু। এ তথ্য থেকে কিন্তু বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের মা ও
শিশুর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে কিনা_ সে প্রশ্ন উঠতে পারে।
সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা
পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ৩২টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরের ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা
ছিল ১৭ এবং এর মধ্যেও শিশু ৬ জন। জানুয়ারি মাসে দিনে গড়ে শিশুমৃত্যুর
সংখ্যা ছিল ২। এ সংখ্যা কি ব্যতিক্রম? বাংলাদেশে প্রায় সব সরকারি
হাসপাতালেই অব্যবস্থাপনার অভিযোগ কমবেশি রয়েছে। সিলেট ওসমানী হাসপাতালও তার
ব্যতিক্রম নয়। আমরা দেখি, কোনো হাসপাতাল সম্পর্কে বড় ধরনের অভিযোগ উঠলেই
পূর্বপ্রস্তুতকৃত জবাব দেওয়া হয়_ রোগীর তুলনায় চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য
কর্মী সংখ্যা অনেক কম। ওষুধের সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। খাবারের জন্য বরাদ্দ
নামমাত্র। এ বক্তব্য একেবারে অমূলক বলা যাবে না। কিন্তু সোমবার রাত ১০টার
পর শিশু ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না_ একেবারে শৈশবেই মৃত্যুর কোলে ঢলে
পড়া হতভাগ্যদের পরিবারের এ অভিযোগের কী উত্তর দেবে কর্তৃপক্ষ? নার্সদের
সম্পর্কেও রয়েছে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ। সাধারণভাবে যে কোনো
প্রতিষ্ঠানেরই চেষ্টা থাকা উচিত নিজেদের আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা। হাসপাতালের
মতো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ তাগিদ তো আরও বেশি হওয়া উচিত। আমাদের গৌরবের
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর নামে প্রতিষ্ঠিত
সিলেটের জেলা হাসপাতালের জন্য এটা আরও বেশি প্রযোজ্য।
No comments