এত নিষ্ঠুর কেন? by মো. মিঠুন মিয়া
হরতাল-অবরোধ,
বিক্ষোভ মিছিল, সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন_ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ
বিষয়গুলো খুবই পরিচিত। রাজনৈতিক অধিকার আদায় এবং অন্যায়-অসঙ্গতির বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ জানানোর এগুলোরই আশ্রয় নিতে হয় রাজনৈতিক দলগুলোকে। কিন্তু
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে হরতাল-অবরোধের নামে যে নৃশংস
কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে, তা খুবই অমানবিক ও আধুনিক সভ্যতার পরিপন্থী। একটি
সভ্য সমাজে এসব হৃদয়বিদারক কর্মকাণ্ড কোনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না।
প্রকাশ্যে একজন মানুষ আর একজন মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। বাদ যাচ্ছে না নিষ্পাপ
শিশুটিও। নিমেষেই দগ্ধ করে দিচ্ছে মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। যে মা
তার সন্তানকে সর্বদা আঁচলের নিচে রেখে বড় করে তুলছেন, সন্তানের গায়ে এতটুকু
আঘাত সহ্য হয় না, কিন্তু অপ্রত্যাশিত হলো বিনাকারণে সেই মায়ের চোখের সামনে
পেট্রোল বোমায় ঝলসে যাচ্ছে তার সন্তানটি; সে মায়ের দু'চোখে আজ অশ্রু ছাড়া
কিছুই মিলছে না। যে পিতা দিনের শেষে সন্তানের জন্য অন্ন নিয়ে ঘরে ফেরার
কথা, কিন্তু তাকে ভর্তি হতে হচ্ছে বার্ন ইউনিটে। সন্তান দেখছে তার পিতার
মৃত্যুর সঙ্গে লড়ার তীব্র যাতনা। স্বজনদের বুকফাটা কান্নার আওয়াজ ভেসে
বেড়াচ্ছে আকাশে। সে আওয়াজ কখনও পেঁৗছাবে না দুর্বৃত্ত বা এ রাজনীতির
নীতিনির্ধারকদের কর্ণকুহরে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকায় চোখ রাখলেই দেখা
যায় রশিদ মোল্লা, সানজিদ হাসান অভিদের ব্যান্ডেজ করা চেহারা। টেলিভিশনে চোখ
রাখলেই কানে আসে আর্তনাদ, বুকফাটা হাহাকার। যে শিশুটি আজ অবলোকন করছে
সমাজের এমন করুণ দৃশ্য, সে কী ভাববে, আর কিইবা শিখবে! কী নিষ্ঠুর! রাজনীতির
নামে আমরা এ কোন জঘন্য কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছি। মানুষের আসল পরিচয়
মনুষ্যত্ব। বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ নয়, ক্ষমতার অন্ধ মোহ আমাদের নৈতিকতাকে
কতটা গ্রাস করলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে! দেশ-জাতি তথা পুরো
মানবসমাজের জন্য এমন কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে ধ্বংসযজ্ঞ। এ তো মানবসভ্যতাকে
নাশ করার পাঁয়তারা। কালের বিবর্তনে আমরা আজ উত্তরাধুনিক যুগে বাস করছি।
পরিবর্তনের ছোঁয়ায় সমাজ, রাষ্ট্র তথা সর্বক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ
হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি কেমন যেন ক্রমেই নেতিবাচকভাবে
প্রভাবিত হচ্ছে। বনের হিংস্র প্রাণীর মতো আক্রমাত্মক আচরণ রাজনীতিতে জায়গা
করে নিচ্ছে। রক্তাক্ত রাজপথ, আগুন আর লাশের মিছিল আরও দীর্ঘ হচ্ছে। একটি
অন্যায়ের প্রতিবাদ আরেকটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্ম দিচ্ছে। কিন্তু
এতে কী হচ্ছে, না মিলছে কোনো সুফল। বরং আমরা বেশি অন্ধকারে নিমজ্জিত
হচ্ছি। এ অবস্থা বেশি দিন চলতে দেওয়া কোনোক্রমেই ঠিক নয়।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
No comments