জাপানের জনগণ ভোট দিয়েছে সাহসী সংস্কারের জন্য by শিনজো অ্যাবে
জাপানের
জনগণ গত ১৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাদের সর্বসম্মত ভোট দিয়ে আমাদের
কাজের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমার সরকারের দৃঢ়
সঙ্কল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করার সক্ষমতা আরো জোরদার হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, এখন
আমাদের যে কেবল কাজ করার কর্তৃত্বই রয়েছে তা নয়; বরং নির্বাচকমণ্ডলীর কাছ
থেকে আমাদের জন্য একটি সুস্পষ্ট ও চূড়ান্ত বার্তা রয়েছে, সেটি হলো- আমাদের
অবশ্যই ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষভাবে, এখন আমরা
সারা বিশ্বে তথাকথিত অ্যাবেনোমিকস বা কাঠামোগত সংস্কারের ‘তৃতীয় তীর’
হিসেবে পরিচিত বিষয়টিকে চালু করার ম্যান্ডেট পেয়েছি। কাঠামোগত সংস্কারের
মাধ্যমেই জাপানের ফার্মগুলো এবং জনগণ নিজেদের যোগ্যতা এবং গতিশীলতা প্রমাণ
করবে। গত নভেম্বর মাসে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি সাধারণ নির্বাচন আহ্বান করে
আমার লক্ষ্য ছিল সরকারের রাজনৈতিক পুঁজিকে আরো সুদৃঢ় করাÑ এই পুঁজি মজুদ
করে রাখার জন্য নয়; বরং সংস্কারের কাজে ব্যয় করার জন্য। যে ব্যাপারে আমরা
দুই বছর আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এখন নতুন করে ম্যান্ডেট পেয়ে আমরা কী
করব? প্রথমত, আমরা জাপানের করব্যবস্থাকে একটি মৌলিক পর্যালোচনায় আনতে চাই।
এটা অপরিহার্য ফলরূপে ঘটবে, যা কেবল ব্যবহার করে খরচ করে ফেলা করহারকে
বৃদ্ধিই করবে না, দ্বিতীয়পর্যায়ে আমরা ওটাকে স্থগিত করেছি। তবে প্রয়োজনীয়
সমন্বয়ের জন্য আমাদের করব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে কিন্তু বিনিয়োগের
উৎসাহ-উদ্দীপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এগ্রো-বিজনেস সংগঠনগুলোর কয়েকটি
হচ্ছে কায়েমি স্বার্থবাদীদের সার সংক্ষেপ- এগুলোকে অবশ্যই পরিবর্তন করতে
হবে। আমরা ওইগুলোকে তাদের কার্যক্রম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেবো। দ্বিতীয়ত,
আমাদের অবশ্যই আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে সঙ্গতি রেখে জাপানের শ্রম আইনকে
যুগোপযোগী করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে প্রত্যেককে জীবন ও কর্মের মধ্যে একটি
হিতকর বা সুবিধা দানকারী ভারসাম্য আনতে হবে। আমরা, জাপানিরা সব সময় কঠোর
পরিশ্রম করি- এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তবে আরো বেশিসংখ্যক জাপানি
নারীর কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আমাদের উৎসাহিত করতে হবে, যাতে তারা
তাদের ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে অথবা পরে সন্তান নিয়ে থাকে। অধিকন্তু, এটা
ন্যায্য সাহসী অভ্যন্তরীণ সংস্কার নয়- যেটা অবশ্যই বিব্রতকর। জাপানে অবশ্যই
পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, যাতে দেশটির অর্থনীতি বিশ্বের সাথে মিথস্ক্রিয়া বা
আদান প্রদান করতে পারে।
ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) এবং জাপান-ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইকনোমিকস পার্টনারশিপ চুক্তি বিবেচনা করে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ চুক্তি সম্পন্ন করা প্রয়োজন। অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে আমাদের যেসব কাজ করতে হবে এগুলো তার অন্যতম। কারণ জাপানের অর্থনীতিতে প্রভাবশালী বিদেশী অনুঘটক প্রয়োজন। রফতানি বাজার ও দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার জন্য উদ্দীপনামূলক পরিবর্তনের প্রয়োজন। জাপানের জন্য তার শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে কিছু করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
এসব পরিবর্তন আনতে এখন জাপানের জনগণের সমর্থন আমাদের সাথে রয়েছে। সরকারের ইচ্ছার সুস্পষ্ট বক্তব্যের ভিত্তিতেই জনগণ এই সমর্থন দিয়েছে। এখন সবাই ভালোভাবে অবগত এবং ভোটারদের দ্বারা অনুমোদিত যে, আসছে ২০১৭ সালের এপ্রিলে আমার সরকার ভোগ কর চালু করবে। ওই সময় না আসা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমরা কোনো বিতর্কে জড়াব না। কিন্তু আমরা এটাও জানি, যে রাজনৈতিক অবস্থান আমরা অর্জন করছি তা এতই মূল্যবান যে, তা অপব্যয় বা অপব্যবহার করা যাবে না। এটাকে আমাদের অবশ্যই সংস্কারের জন্য এককভাবে বাস্তবায়ন বা প্রয়োগ করতে হবে, যাতে জাপানের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এটার ওপরই আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান নির্ভর করছে। গত দুই বছরে আমি মোট ৬২টি দেশের তিন লাখ ৫৪ হাজার ২০০ মাইল (৫,৬৯,৭০৭ কিমি.) এলাকা ভ্রমণ করে ২৪৬ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ এবং রাষ্ট্রপ্রধান ও জাতীয় অন্য নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি।
এসব অভিজ্ঞতার ফলে আমি উপলব্ধি করেছি যে, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান যে পথ অনুসরণ করেছে সে ব্যাপারে বিশ্বে জাপানের প্রতি ব্যাপক বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষভাবে, আমাদের জনগণ এবং সরকার দীর্ঘ দিন ধরে যে নীতি অনুসরণ করে চলেছে- যেমন জনগণের সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা এবং শান্তিÑ এগুলো হলো জাপানের সংবিধানের স্তম্ভ। জাপান আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা অর্জন করেছে। এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে সাত দশক ধরে জাপানের কূটনীতি হচ্ছে- সামরিক শক্তির হুমকি দিয়ে অন্য কোনো দেশ দখল করা বা হুমকি দেয়া নয়। জাপান একবারের জন্যও এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়নি। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জাপানের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে যে, জাপানিদের ভদ্রতা ও নম্রতার কারণে তারা উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তারা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করতে কাজ করেছে।
বিশ্ব জাপান এবং জাপানের জনগণের প্রতি যে আস্থা প্রদর্শন করেছে, তা জাপানের কূটনীতির জন্য অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। জাপানি জনগণের পক্ষ থেকে আমাদের যে ম্যান্ডেট দেয়া হয়েছে তার লক্ষ হচ্ছে, এই ঐতিহ্যকে আমরা যাতে ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখি তা নিশ্চিত করা।
আগামী নির্বাচনী মেয়াদের জন্য জাপানের নেতৃত্বের আসনে বসার সময়ে এটাই হচ্ছে আমার শপথ। আমার এবং আমার সরকারের পক্ষ থেকে আগামীতে প্রধান কাজ হবে- জাপানের অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে দেশকে এগিয়ে নিতে জাপানের অর্থনীতির নিরাপত্তা বিধান করা অপরিহার্য।
লেখক : জাপানের প্রধানমন্ত্রী
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে ভাষান্তর : এম কে বাশার
ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) এবং জাপান-ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইকনোমিকস পার্টনারশিপ চুক্তি বিবেচনা করে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ চুক্তি সম্পন্ন করা প্রয়োজন। অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে আমাদের যেসব কাজ করতে হবে এগুলো তার অন্যতম। কারণ জাপানের অর্থনীতিতে প্রভাবশালী বিদেশী অনুঘটক প্রয়োজন। রফতানি বাজার ও দেশের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার জন্য উদ্দীপনামূলক পরিবর্তনের প্রয়োজন। জাপানের জন্য তার শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে কিছু করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
এসব পরিবর্তন আনতে এখন জাপানের জনগণের সমর্থন আমাদের সাথে রয়েছে। সরকারের ইচ্ছার সুস্পষ্ট বক্তব্যের ভিত্তিতেই জনগণ এই সমর্থন দিয়েছে। এখন সবাই ভালোভাবে অবগত এবং ভোটারদের দ্বারা অনুমোদিত যে, আসছে ২০১৭ সালের এপ্রিলে আমার সরকার ভোগ কর চালু করবে। ওই সময় না আসা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আমরা কোনো বিতর্কে জড়াব না। কিন্তু আমরা এটাও জানি, যে রাজনৈতিক অবস্থান আমরা অর্জন করছি তা এতই মূল্যবান যে, তা অপব্যয় বা অপব্যবহার করা যাবে না। এটাকে আমাদের অবশ্যই সংস্কারের জন্য এককভাবে বাস্তবায়ন বা প্রয়োগ করতে হবে, যাতে জাপানের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এটার ওপরই আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থান নির্ভর করছে। গত দুই বছরে আমি মোট ৬২টি দেশের তিন লাখ ৫৪ হাজার ২০০ মাইল (৫,৬৯,৭০৭ কিমি.) এলাকা ভ্রমণ করে ২৪৬ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ এবং রাষ্ট্রপ্রধান ও জাতীয় অন্য নেতাদের সাথে বৈঠক করেছি।
এসব অভিজ্ঞতার ফলে আমি উপলব্ধি করেছি যে, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে জাপান যে পথ অনুসরণ করেছে সে ব্যাপারে বিশ্বে জাপানের প্রতি ব্যাপক বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষভাবে, আমাদের জনগণ এবং সরকার দীর্ঘ দিন ধরে যে নীতি অনুসরণ করে চলেছে- যেমন জনগণের সার্বভৌমত্ব, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা এবং শান্তিÑ এগুলো হলো জাপানের সংবিধানের স্তম্ভ। জাপান আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা ও আস্থা অর্জন করেছে। এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে সাত দশক ধরে জাপানের কূটনীতি হচ্ছে- সামরিক শক্তির হুমকি দিয়ে অন্য কোনো দেশ দখল করা বা হুমকি দেয়া নয়। জাপান একবারের জন্যও এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়নি। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জাপানের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে যে, জাপানিদের ভদ্রতা ও নম্রতার কারণে তারা উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তারা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করতে কাজ করেছে।
বিশ্ব জাপান এবং জাপানের জনগণের প্রতি যে আস্থা প্রদর্শন করেছে, তা জাপানের কূটনীতির জন্য অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। জাপানি জনগণের পক্ষ থেকে আমাদের যে ম্যান্ডেট দেয়া হয়েছে তার লক্ষ হচ্ছে, এই ঐতিহ্যকে আমরা যাতে ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখি তা নিশ্চিত করা।
আগামী নির্বাচনী মেয়াদের জন্য জাপানের নেতৃত্বের আসনে বসার সময়ে এটাই হচ্ছে আমার শপথ। আমার এবং আমার সরকারের পক্ষ থেকে আগামীতে প্রধান কাজ হবে- জাপানের অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে দেশকে এগিয়ে নিতে জাপানের অর্থনীতির নিরাপত্তা বিধান করা অপরিহার্য।
লেখক : জাপানের প্রধানমন্ত্রী
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে ভাষান্তর : এম কে বাশার
No comments