চট্টগ্রামে বাড়িছাড়া বিরোধী জোটের ৫০,০০০ নেতাকর্মী by মহিউদ্দীন জুয়েল
চট্টগ্রামে
পুলিশের দায়ের করা মামলার ফাঁদে বিরোধী জোটের প্রায় ৫০ হাজার নেতাকর্মী।
পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি
হিসেবে নাম থাকছে ২০/২৫ জনের। কিন্তু অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয় কয়েকশ’
থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর কথা। এ শব্দের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ হয়রানি
করছে নেতাকর্মীদের। হয়রানির ভয়ে-রাত হলেই ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন
চট্টগ্রামের বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালি, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, সাতকানিয়া,
চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সীতাকুণ্ড ও মীরসরাইয়ের লোকজন। আবার অনেকে কয়েক মাস
ধরেই রয়েছেন আড়ালে। এসব পরিবারের অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশ কয়েক দফা তাদের
খোঁজে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। পাহারা বসিয়ে তাদের গতিবিধির দিকে
নজর রাখছে। এতে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে পরিবারের স্বজনরা। নগরীর ৫ থানার নথি
ঘেঁটে দেখা যায়, নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকে পুরো চট্টগ্রামে
বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা হয়েছে তার সবগুলোরই বাদী পুলিশ।
এসব মামলার কয়েকটিতে সিনিয়র নেতারা জামিন পেলেও অনেকেই রয়েছেন কারাগারে।
কেউ মাসের পর মাস আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম
সপ্তাহে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় অবরুদ্ধ করার ঘটনায় কাজীর দেওড়িতে পুলিশের
সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ২০টির বেশি
গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা করার অভিযোগ আনা হয় বিরোধী দলের
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। পরে ৫ই জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টায় কোতোয়ালি থানার
এসআই একরামউল্লাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের
ঘটনায় মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা.
শাহাদাত হোসেন, উত্তর জেলার আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীসহ ৫০০ জনের বিরুদ্ধে
মামলা করে পুলিশ। মামলায় ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে
২০০ জনকে। মামলাটি বর্তমানে সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে
পরিচালিত হচ্ছে। এই মামলায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা জামিন পেলেও বাকিরা
কারাগারে। অনেকে আত্মগোপনে। অজ্ঞাত মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে অনেকেই এখন
রাত হলে বাড়িতে থাকছেন না। একইভাবে অপর এক অভিযোগে চকবাজার থানায় বিস্ফোরক
আইনে দায়ের করা হয় আরো একটি মামলা। এতে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো ২০০
জনকে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা জানান, অজ্ঞাত মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে
বেশির ভাগই বাড়ির বাইরে থাকছেন। কেউ কেউ শহর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন।
কেননা, বেশির ভাগ নেতাকর্মীকে পুলিশ সন্দেহের তালিকায় রাখায় কেউই বাড়িতে
থাকার সাহস পাচ্ছেন না। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নগর বিএনপির সাধারণ
সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা রাস্তায় নামার আগেই
পুলিশের মামলা তৈরি থাকে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের কর্মকাণ্ড সত্যিই
নিন্দনীয়। বর্তমান সরকার একের পর এক মামলা দিয়ে বিএনপির কয়েক হাজার
নেতাকর্মীকে বাড়িছাড়া করেছে। এসব লোকজন রাত হলে পরিবারের কাছে ফিরতে পারে
না। কারণ পুলিশ এসে তাদের ভয় দেখিয়ে থানায় তুলে নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলাগুলোতে
এই চিত্র আরও ভয়াবহ।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারে এখন বন্দিদের ঠাঁই নেই। সেখানে অধিক বন্দির কারণে ঠাসাঠাসি। মানবেতর জীবনযাপন। এক হাজার ৮০০ বন্দির জায়গায় মাত্র ১০ দিনে তা হয়ে গেছে ২৮০০। দমন-নিপীড়ন করে বিরোধী দলের ওপর হয়রানি কখনোই শুভ নয়। তবে কেবল নগর নয়, শহরের বাইরে উপজেলাগুলোতেও দায়ের করা হয়েছে একের পর এক অজ্ঞাত মামলা। গত শুক্রবার সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতে অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাতকানিয়া থানার ওসি খালেদ হোসেন জানান, তাদের বিরুদ্ধে থানায় আগুন, গাড়ি ভাঙচুরসহ নাশকতামূলক অভিযোগের মামলা রয়েছে। এসব মামলায় আরো অনেক আসামি পালিয়ে রয়েছে। যাদের নাম আমাদের মনে নেই। তবে তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।
একই রকম চিত্র মীরসরাই উপজেলাতেও। সেখানেও মামলার জালে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের করার ঘটনাও রয়েছে। ১২৮ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জোরারগঞ্জ থানায় দুইটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলন্ত ট্রাকে বোমা হামলার ঘটনায় এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে তাই অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র রয়েছেন। যাদের নাম পুলিশ উল্লেখ না করলেও অজ্ঞাত আসামির তালিকায় থাকার উৎকণ্ঠা তাদের তাড়া করে ফিরছে প্রতিনিয়ত। চট্টগ্রাম পুলিশের উপ-কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার বলেন, অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ পাওয়া যাবে না। ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। অনেক সময় আসামি কিংবা অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যায় না। তাদেরকে ধরতে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। পরে যাচাই বাছাই শেষে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরো বলেন, যে কোন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমাদের কোন বাধা নেই। কিন্তু হরতাল- অবরোধে নাশকতা করলে আমরা গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবো।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারে এখন বন্দিদের ঠাঁই নেই। সেখানে অধিক বন্দির কারণে ঠাসাঠাসি। মানবেতর জীবনযাপন। এক হাজার ৮০০ বন্দির জায়গায় মাত্র ১০ দিনে তা হয়ে গেছে ২৮০০। দমন-নিপীড়ন করে বিরোধী দলের ওপর হয়রানি কখনোই শুভ নয়। তবে কেবল নগর নয়, শহরের বাইরে উপজেলাগুলোতেও দায়ের করা হয়েছে একের পর এক অজ্ঞাত মামলা। গত শুক্রবার সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাতে অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাতকানিয়া থানার ওসি খালেদ হোসেন জানান, তাদের বিরুদ্ধে থানায় আগুন, গাড়ি ভাঙচুরসহ নাশকতামূলক অভিযোগের মামলা রয়েছে। এসব মামলায় আরো অনেক আসামি পালিয়ে রয়েছে। যাদের নাম আমাদের মনে নেই। তবে তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে।
একই রকম চিত্র মীরসরাই উপজেলাতেও। সেখানেও মামলার জালে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা দায়ের করার ঘটনাও রয়েছে। ১২৮ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জোরারগঞ্জ থানায় দুইটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলন্ত ট্রাকে বোমা হামলার ঘটনায় এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে তাই অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র রয়েছেন। যাদের নাম পুলিশ উল্লেখ না করলেও অজ্ঞাত আসামির তালিকায় থাকার উৎকণ্ঠা তাদের তাড়া করে ফিরছে প্রতিনিয়ত। চট্টগ্রাম পুলিশের উপ-কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার বলেন, অযথা কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ পাওয়া যাবে না। ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। অনেক সময় আসামি কিংবা অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা যায় না। তাদেরকে ধরতে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। পরে যাচাই বাছাই শেষে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরো বলেন, যে কোন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমাদের কোন বাধা নেই। কিন্তু হরতাল- অবরোধে নাশকতা করলে আমরা গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবো।
No comments