যেভাবে হত্যা করা হয় ইমাদ মুগনিয়েহকে
লেবাননের
হিজবুল্লাহর কমান্ডার ইমাদ মুগনিয়েহকে হত্যা করেছে মার্কিন গোয়েন্দা
সংস্থা সিআইএ ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ২০০৮ সালে এ দুই সংস্থার
যৌথ পরিকল্পনায় সিরিয়ায় এক গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ইমাদ মুগনিয়েহ। এ
খবর দিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে
পত্রিকাটি জানিয়েছে, ২০০৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে
একটি রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার পর গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাকে হত্যা করতে
একসঙ্গে কাজ করে সিআইএ ও মোসাদ। ওই গাড়ির পেছনে রাখা অতিরিক্ত চাকায় পুঁতে
রাখা শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন তিনি। বোমাটি তৈরি করা হয়েছিল
যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যে এটি পরীক্ষাও করে দেখা হয়।
বোমার ট্রিগার ছিল ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে বসে থাকা মোসাদ এজেন্টদের
হাতে। ওই সময় মোসাদ এজেন্টরা দামেস্কে সিআইএ এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা
করে চলছিল। ধারণা করা হয়, হিজবুল্লাহর ওই জ্যেষ্ঠ নেতা মুগনিয়েহ ১৯৮০
সালের দিকে লেবাননে পশ্চিমা নাগরিকদের জিম্মি হিসেবে আটক রাখার মূল
পরিকল্পনাকারী। এছাড়া ১৯৯২ সালে আর্জেন্টিনায় ইসরাইলি দূতাবাসে বোমা হামলার
পেছনেও তাকে দায়ী করা হয়। ওই হামলায় ২৯ জন নিহত হয়। ১৯৮৩ সালে বৈরুত
বিমানবন্দরে মার্কিন মেরিন সেনাদের ব্যারাকে বোমা হামলায়ও তিনি জড়িত ছিলেন।
ওই হামলায় ২৪১ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়। এছাড়া ১৯৮৫ সালে টিডব্লিউএ
ফ্লাইট-৮৪৭ ছিনতাইয়ের ঘটনায়ও তার সংশ্লিষ্টতার কথা জানা যায়। সে সময়
মার্কিন নৌবাহিনীর এক ডুবুরি নিহত হয়েছিল। তবে মুগনিয়েহ হত্যার পেছনে
সিআইএ’র জড়িত থাকার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সিআইএ। ওই প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে, হত্যার পেছনে প্রেসিডেন্টের অনুমোদন দরকার ছিল এবং সেই অনুমোদন
দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। এছাড়া হত্যার নির্দেশে
স্বাক্ষর করতে হয়েছিল অ্যাটর্নি জেনারেল, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক,
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে। সাবেক ওই কর্মকর্তারা
আরও জানিয়েছেন, ইরাকে শিয়া জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহে সরাসরি
জড়িত ছিলেন মুগনিয়েহ। ওই জঙ্গিরা মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাতো।
তাদের মতে, যদিও এমন দেশের মাটিতে তাকে হত্যা করা হয়েছে, যেখানে মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাবস্থায় ছিল না, তবুও তার হত্যাকাণ্ডকে একরকম আত্মরক্ষা
হিসেবে দেখা যেতে পারে। তাদের ভাষায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ
নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে মুগনিয়েহকে হত্যার অনুমতি পেতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে
হয়েছিল। মুগনিয়েহকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সত্যিকার হুমকি হিসেবে প্রমাণ
করতে হয়েছিল। একজন জানিয়েছেন, আমাদের প্রমাণ করতে হয়েছিল যে, সে
আমেরিকানদের জন্য অব্যাহত হুমকি। পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, ইরাক যুদ্ধের সময়
বুশ প্রশাসন হিজবুল্লাহর উপর বেশ কয়েকটি অভিযানের অনুমতি দিয়েছিল। এর
মধ্যে একটি হচ্ছে মুগনিয়েহ হত্যা অভিযান। বাগদাদে কাজ করা সাবেক এক মার্কিন
কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মুগনিয়েহ ও তার সঙ্গে জড়িত যে কাউকে ‘খুঁজে বের করা,
শায়েস্তা করা ও খতম করার’ বিষয়ে আমাদেরকে মুক্ত লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল।
অনেক বছর ধরে তাকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল। এ ব্যাপারে আলোচনা করতে ২০০২ সালে
ইসরাইলি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত
হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট সেপশাল অপারেশন্স কমান্ডের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন
এজেন্ট। সাবেক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, যখন আমরা তাদের বলি যে, আমরা
মুগনিয়েহকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজছি, তারা আক্ষরিক অর্থেই যেন চেয়ার থেকে
পড়ে গিয়েছিল! তবে এটা নিশ্চিত নয়, কখন দুই সংস্থা বুঝতে পেরেছিল যে
মুগনিয়েহ দামেস্কেই ছিলেন। তবে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে তাকে যৌথ অভিযান
চালিয়ে হত্যা করার ব্যাপারে সিআইএ’কে প্রস্তাব দিয়েছিল ইসরাইল। দুই সংস্থা
মিলে তার জীবনধারা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। একইসঙ্গে চেহারা শনাক্ত করার একটি
প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে চিহ্নিত করা হয়। এরপরই তাকে রেস্টুরেন্ট থেকে
বের হওয়ার পরপরই হত্যা করা হয়। উল্লেখ্য, তার ছেলে জিহাদ মুগনিয়েহ কয়েকদিন
আগে সিরিয়ায় এক ইসরাইলি বিমান হামলায় এক ইরানি জেনারেল ও আরও পাঁচ
হিজবুল্লাহ সদস্যসহ নিহত হন। জিহাদ মুগনিয়েহ ক্রমেই হিজবুল্লাহর
গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আভির্ভূত হচ্ছিলেন। ওই হামলার পাল্টা হিসেবে
তিনদিন আগে হামাস ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী গোলা হামলা চালায়। এতে ২ ইসরাইলি সেনা
নিহত ও ৭ জন আহত হয়।
No comments