উত্তরাঞ্চলের কৃষিই চাপা পড়বে- নগরবাড়ী ঘাটে সারের স্তূপ
সংসদের বাইরে থাকা বিরোধীদলীয় জোটের টানা অবরোধ আর হরতালের জেরে পাবনার নগরবাড়ী ঘাটে জমে থাকা সারের প্রায় আকাশচুম্বী স্তূপ নিয়ে সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায় যে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। এটা ঠিক যে, অবরোধ ও হরতালের কারণে সড়কপথের সাধারণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনেও এমন বিঘ্ন ঘটছে। কিন্তু ইরি-বোরো মৌসুম সামনে রেখে সারের পরিবহনকে আর দশটা খাতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার অবকাশ নেই। এর সঙ্গে দেশের কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলের আগামী মৌসুমের উৎপাদন ও জীবিকার প্রশ্নটি গভীরভাবে জড়িত। সমকালের প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে, নগরবাড়ী ঘাট থেকে উত্তরাঞ্চলের বিসিআইসির ১৪টি বাফার গুদামে সার সরবরাহ হয়ে থাকে। অনুমোদিত ঠিকাদার ও আমদানিকারকরা চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে জাহাজে ভরে সার এনে নগরবাড়ী থেকে ট্রাকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গুদামে ও ডিলারদের কাছে পাঠিয়ে থাকেন। অবরোধ চলাকালেও নৌপথ স্বাভাবিক থাকায় প্রতিদিনই সেই নিয়মে যমুনা হয়ে সারবাহী জাহাজ ঘাটে ভিড়ছে; কিন্তু সেই সারের অধিকাংশ সড়কপথে পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিক অবস্থায় যেখানে প্রতিদিন নগরবাড়ী ঘাট থেকে গড়ে এক-দেড়শ' ট্রাক উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যেত, সেখানে এখন ১০-১৫ ট্রাকের বেশি সার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা মনে করি, সরবরাহ রুট স্বাভাবিক রাখতে না পারলে মূল সংকটে পড়বে খোদ উত্তরাঞ্চলের কৃষি। অর্থ ব্যয় করেও কৃষক সময়মতো ও পর্যাপ্ত সার পাবে না। ঝুঁকি রয়েছে সারের গুণগত মান নষ্টেরও। পয়সা দিয়ে সার কিনেও ফলনে কাঙ্ক্ষিত কার্যকারিতা না-ও পাওয়া যেতে পারে। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, অবিলম্বে নগরবাড়ী থেকে উত্তরাঞ্চলে সার পরিবহনের রুটটি স্বাভাবিক করে তোলা। প্রয়োজনে সারের ট্রাকের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, স্তূপ হওয়া এই সার যদি সময়মতো কৃষকের কাছে পেঁৗছানো না যায়, তাহলে স্তূপের নিচে কেবল আমদানিকারক, ডিলার, ব্যবসায়ী ও ঘাটসংশ্লিষ্টদের ব্যবসা ও জীবিকা নয়; উত্তরাঞ্চলের কৃষিই চাপা পড়তে পারে। আর দেশের 'খাদ্যভাণ্ডারে' যদি ফলন ঘাটতি থেকে যায়, তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া গোটা দেশেই পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
No comments